প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি এখন মূলত ভারতের ওপরই নির্ভর করছে। ভারতের সংবাদ সংস্থা এশিয়ান নিউজ ইন্টারন্যাশনালকে (এএনআই) দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনটিই বলেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাক্ষাৎকারে তিনি আরো বলেন, পানিবণ্টন নিয়ে ভারতের আরেকটু উদারতা দেখানো উচিত। এতে দুই দেশই উপকৃত হবে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে শেখ হাসিনা আজ সোমবার চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ভারত যাচ্ছেন। এর প্রাক্কালে গতকাল রবিবার এএনআই তাঁর এ সাক্ষাৎকার প্রচার করে।
সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, পানিবণ্টন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, বাংলাদেশের অর্থনীতি, সংখ্যালঘু ও নির্বাচন প্রসঙ্গে নিজের অভিমত ব্যক্ত করেন। স্মৃতিচারণা করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর তাঁর ভারতে অবস্থান এবং রাজনীতিতে আসার পেছনের ঘটনাও তুলে ধরেন তিনি।
তিস্তা চুক্তি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী এএনআইকে বলেন, ‘এটি (তিস্তা) অনেক পুরনো সমস্যা। তাই এর সমাধান হওয়া দরকার। তবে এটি মূলত নির্ভর করছে ভারতের ওপর। ’
শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘কোনো বিষয়ে মতপার্থক্য থাকতে পারে। সেগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা উচিত। অনেক বিষয়ে বাংলাদেশ-ভারত এভাবে সমাধান করেছে। ’
শেখ হাসিনা গত বছর মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তাঁর আলোচনার কথা স্মরণ করেন। তিস্তার পানি বণ্টনে অন্তর্বর্তী চুক্তি দ্রুত স্বাক্ষর করতে বাংলাদেশের আহ্বানের কথা আবারও তুলে ধরেন তিনি।
জয়ের রাজনীতিতে আসা
পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের রাজনীতিতে আসার সম্ভাবনার বিষয়ে সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সে (জয়) এখন একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ। তাই এটা তার ব্যাপার। কিন্তু সে দেশের জন্য কাজ করছে। আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার উদ্যোগ, স্যাটেলাইট, সাবমেরিন কেবল কিংবা কম্পিউটার প্রশিক্ষণের মতো ডিজিটাল ব্যবস্থা তার পরামর্শেই নেওয়া হয়েছে। ’
শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের দলীয় সম্মেলনে তার জন্য (দলের পদ নেওয়ার) জোরালো দাবি উঠেছিল। তখন আমি তাকে বললাম, মাইক্রোফোনের কাছে গিয়ে বলো, তুমি কী চাও। সে তা-ই করল। জয় বলল, ‘এই মুহূর্তে আমি দলে কোনো পদ চাই না। বরং যাঁরা এখানে কাজ করছেন, তাঁদের এই পদ পাওয়া উচিত। কেন আমি একটা পদ দখল করে রাখব? আমি আমার মায়ের সঙ্গে আছি। দেশের জন্য কাজ করছি। তাঁকে সহযোগিতা করছি। এটা আমি করে যাব। ’ সে এভাবেই চিন্তা করে। ”
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন
মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গারা আমাদের জন্য একটি বড় বোঝা। ভারত বড় একটি দেশ, সেখানে থাকার জায়গা অনেক হলেও খুব বেশি রোহিঙ্গা নেই। আর আমাদের দেশে তাদের সংখ্যা ১১ লাখ। এই সমস্যাটি আপনারা মিটমাট করতে পারেন। আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে যাচ্ছি। তাদেরও কিছু করণীয় আছে, যেন রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরতে পারে। বাংলাদেশ সরকার মানবিক দিক বিবেচনা করে লাখ লাখ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গার দেখভাল করছে। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা যত দ্রুত নিজ দেশে ফিরবে, তত আমাদের ও মিয়ানমারের জন্য মঙ্গল হবে। তাদের প্রত্যাবাসনে আসিয়ান, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। এ ক্ষেত্রে ভারত বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে। ’
নরেন্দ্র মোদির প্রশংসা
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর দেশটি থেকে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে আনতে ভারতের উদ্যোগ এবং করোনার টিকা সরবরাহ করায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রশংসা করেন শেখ হাসিনা।
করোনার টিকা সরবরাহের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশকেই টিকা দিয়েছে ভারত। এতে সবাই উপকৃত হয়েছে। এটা ছিল নরেন্দ্র মোদির এক দূরদর্শী সিদ্ধান্ত। ’
সংখ্যালঘু ইস্যু
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে প্রতিটি ধর্মের মানুষ শান্তি ও সম্প্রীতির আবহে বাস করে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। এখানে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বাস করে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি থাকলেও একটি-দুটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে যায়। এমন কিছু হলে আওয়ামী লীগ ও প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ নেয়। ’
‘বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার মতো হবে না’
বাংলাদেশের অর্থনীতি শ্রীলঙ্কার অবস্থায় যেতে পারে—এমন উদ্বেগ প্রত্যাখ্যান করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কভিড-১৯ মহামারি এবং ইউক্রেন যুদ্ধ সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতি শক্তিশালী অবস্থায় আছে। যেকোনো ঋণ নেওয়ার আগে সরকার বিস্তর যাচাই করে বলেও জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধ প্রভাব ফেললেও বাংলাদেশ সময়মতো সব ঋণ পরিশোধ করেছে। আমাদের ঋণের হার খুবই কম। শ্রীলঙ্কার তুলনায় আমাদের অর্থনীতির গতিশীলতা ও উন্নয়ন অনেক পরিকল্পিত। …হিসাব করে পদক্ষেপ নেওয়ায় বাংলাদেশের অর্থনীতি নিরাপদ। ’
তবে ইউক্রেন যুদ্ধ দেশের জন্য কিছুটা সমস্যার কারণ হয়ে উঠেছে স্বীকার করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোনো সন্দেহ নেই এটি (যুদ্ধ) নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে; বিশেষ করে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে। ’
‘ভারতীয় গরুর ওপর নির্ভরশীল নই’
ভারত থেকে আসা গরুর ওপর বাংলাদেশ আর নির্ভর করে না বলেও সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের নিজস্ব গরু আছে। আমরা নিজেরাই গরুর জোগান বৃদ্ধি করছি। কারণ (দেশের অর্থনীতির জন্য) তা জরুরি। ’