যে দশটি বিতর্কিত সিনেমা ভারতে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিল

প্রতিবছর নির্মিত চলচ্চিত্রের সংখ্যার দিক থেকে বলিউড বিশ্বের বৃহত্তম চলচ্চিত্রশিল্প। তবে সমস্ত হিট, ফ্লপ এবং গড় ব্যবসা করা সিনেমা ছাড়াও ভারতীয় সিনেমার আরো কিছু নির্মাণ রয়েছে, যা ইচ্ছাকৃতভাবে আমাদের নাগালের বাইরে রাখা হয়েছে।  যে চলচ্চিত্রগুলো শক্তিশালী ভাষা, অশ্লীল দৃশ্য, অতিরিক্ত নগ্নতা, লিঙ্গ নিষেধাজ্ঞা, কাশ্মীর সমস্যা, ধর্ম এবং মূলত এমন চলচ্চিত্র যা তার সময়ের থেকেও অনেক এগিয়ে ছিল। যার ফলে সেই সমস্ত সিনেমা ভারতে ব্যান করে দেওয়া হয়েছে।

আজকে সেই সব চলচ্চিত্র নিয়েই আলোচনা হবে।  

kalerkantho

১৯৯৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ব্যান্ডিট কুইন

ব্যান্ডিট কুইন (১৯৯৪)
‘ব্যান্ডিট কুইন’ সরাসরি ‘আক্রমণাত্মক‘, ‘অশ্লীল’, ‘অশালীন’ একটি সিনেমা, যেটি অনুমোদনের ক্ষেত্রে ভারতীয় সেন্সর বোর্ড প্রায় হেসেছিল! সিনেমাটি তৎকালীন সময়ে ভারতে ব্যান করা হয়।  

ফায়ার (১৯৯৬)
দীপা মেহতার কাজ বিশ্বব্যাপী বাস্তবিক সব বিষয়বস্তু এবং আবেদনের জন্য স্বীকৃত। বিশ্বব্যাপী সমাদৃত এই নির্মাতা নিজের ঘরেই বিতর্কের মধ্যে পড়ে গিয়েছিলেন। ১৯৯৬ সালে তাঁর নির্মিত ‘ফায়ার’ সিনেমাটি বিশ্বব্যাপী অনেক সমালোচকের প্রশংসা অর্জন করেছিল; কিন্তু সিনেমার বিষয়বস্তুর কারণে ভারতে হিন্দু গোষ্ঠীগুলোকে (যেমন শিবসেনা) প্রভাবিত করতে ব্যর্থ হয়েছিল এটি। দুই ভগ্নিপতির মধ্যে সমকামী সম্পর্কের গল্প নিয়ে সিনেমাটি নির্মাণ করেছিলেন দীপা মেহেতা। বলিউডের শীর্ষস্থানীয় অভিনেত্রী শাবানা আজমি, নন্দিতা দাস এবং তাদের পরিচালক দীপা মেহতাকে পর্যন্ত মৃত্যুর হুমকি দেওয়া হয়েছিল। অবশেষে সেন্সর বোর্ড ভারতে সিনেমাটি নিষিদ্ধ করার সাথে বিতর্কের অবসান ঘটায়।  

kalerkantho

১৯৯৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘কামাসূত্র-দ্য টেল অব লাভ’

কামাসূত্র-দ্য টেল অব লাভ (১৯৯৬)
১৯৯৬ সালে নির্মিত আরেক ভিন্নধর্মী সাহসী সিনেমা ‘কামাসূত্র-দ্য টেল অব লাভ’, এটিও সেই সময়ে দারুণ বিতর্কের সম্মুখীন হয়। সেন্সর বোর্ড সিনেমাটিকে ‘স্পষ্ট’, ‘অনৈতিক’ এবং ‘ব্যাভিচারী’ বলে অভিহিত করেছিল, যা দেশের দর্শকদের জন্য কামসূত্রের ধারণা নিয়ে এসেছিল! মীরা নায়ারের এই সিনেমাটি ভারতে ১৬ শতকের চার প্রেমিক যুগলের জীবনকে চিত্রিত করেছে, যা সমালোচকদের কাছে দারুণ প্রশংসিত হয়েছিল; কিন্তু সেন্সর বোর্ডে কাঁচিতে এটি বড় ফ্লপ এবং শেষ পর্যন্ত নিষিদ্ধ হয়ে যায়।  

পাঞ্চ (২০০৩)
পাঞ্চ, একটি অনুরাগ কাশ্যপের নির্মিত চলচ্চিত্র, যা সেন্সর বোর্ডের অনেক উত্তাপের সম্মুখীন হয়েছিল। ১৯৯৭সালে জোশী-অভঙ্কর সিরিয়াল খুনের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত এই সিনেমাটি উচ্চমাপের সহিংসতা, অকথ্য ভাষা এবং মাদকের অপব্যবহারসহ একটি থ্রিলারধর্মী সিনেমা ছিল। তবে সেন্সর বোর্ড সিনেমাটি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এবং সিনেমাটির মুক্তির অপেক্ষায় থাকা লোকদের এর পাইরেটেড সংস্করণ তৈরি করতে হয়েছিল।

ব্ল্যাক ফ্রাইডে (২০০৪)
এস হুসেন জাইদির বিখ্যাত বই ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে-দ্য ট্রু স্টোরি অফ দ্য বোম্বে বোম্ব ব্লাস্টস’ থেকে ঢিলেঢালাভাবে গৃহীত, অনুরাগ কাশ্যপের সিনেমাটি ভারতে মুক্তি পাওয়ার জন্য খুব কঠিন বলে মনে করা হয়েছিল। মুভিটি মুম্বাই হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের মুখোমুখি হয়েছিল। ১৯৯৩ সালের মুম্বাই বিস্ফোরণ মামলার বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত এটির মুক্তির জন্য নিষেধাজ্ঞা ছিল।

kalerkantho

২০০৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘পারজানিয়া’

পারজানিয়া (২০০৫)
পারজানিয়া গুজরাটের ক্ষতবিক্ষত অতীতের ক্ষত খুলে দিয়েছে এবং সমান পরিমাণে প্রতিক্রিয়া ও প্রশংসা পেয়েছে। সিনেমাটি একটি চমৎকার প্লটের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছিল, যা আজহার নামেন একটি ছেলেকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছিল। আজহার ২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গার সময় নিখোঁজ হয়। সিনেমাটি একটি জাতীয় পুরস্কারও জিতেছিল। তবে এর সিনেমাগত শ্রেষ্ঠত্বকে রাজনৈতিক দলগুলো গুজরাটে দেখানোর জন্য যথেষ্ট বলে বিবেচিত করেননি। যেখানে এটি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ছিল।

kalerkantho

২০০৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ‘সিন্স’

সিন্স (২০০৫)
সিন্স হলো কেরালার একজন পুরোহিতের একটি কামোত্তেজক যাত্রা, যিনি একজন মহিলার আকর্ষণে পড়েন এবং তার সাথে যৌন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। আবেশ, লালসা এবং তিনি যে সমাজে বাস করতেন সেই সমাজের রীতিনীতির সাথে তার সংগ্রাম মিলিয়ে ‘সিন্স’ ক্যাথলিকদের সাথে ভালোভাবে যায়নি। তারা ভেবেছিল যে সিনেমাটি খুব অনৈতিক আলোকে ক্যাথলিক ধর্মকে উপস্থাপন করেছে। সেন্সর বোর্ডও ছবিটির নগ্ন দৃশ্য নিয়ে সমস্যায় পড়েছিল, তাই সিনেমাটি আর দিনের আলো দেখেনি।

kalerkantho

২০১০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বহুল আলোচিত সিনেমা ‘গান্ডু’

গান্ডু (২০১০)
আপনি যদি ‘গান্ডু’ নামের সিনেমা থেকে অন্য কিছু আশা করেন তবে আপনি অবশ্যই হতাশ হবেন। বাংলা এই সিনেমাটি ছিল একটি র‍্যাপ মিউজিক্যাল সিনেমা, যা এর ওরাল সেক্স দৃশ্য এবং নগ্নতার জন্য অনেক গুঞ্জন তৈরি করেছিল। সাদা এবং কালো বিন্যাসে শুট করা হয়েছে এটি। অতিরিক্ত নগ্নতায় ভরপুর এই সিনেমাটি ভারতে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কারণ এটি ‘ভারতীয় সংবেদনশীলতা’কে অস্বীকার করেছে।

kalerkantho

২০১৫ সালে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘আনফ্রিডম’

আনফ্রিডম (২০১৫)
ভারতে নিষিদ্ধ সিনেমার এই দীর্ঘ তালিকায় সাম্প্রতিকতম ‘আনফ্রিডম’ হলো একটি আধুনিক থ্রিলার সিনেমা, যা ইসলামিক সন্ত্রাস-সম্পর্কিত ঘটনার সঙ্গে একটি লেসবিয়ান প্রেমের গল্প নিয়ে নির্মিত। একটি প্যাকেজে দুটি ‘নিষিদ্ধ’ বিষয় একত্র করে নির্মিত এবং দুই অভিনেত্রীর মধ্যে নগ্নতা এবং প্রেমের দৃশ্য সেন্সর বোর্ড হজম করতে পারেনি। ‘অপ্রাকৃতিক আবেগকে প্রজ্বলিত করার’ অভিযোগে সিনেমাটিকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল এবং কয়েকটি রাজ্য ছাড়া ভারতে এর মুক্তি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল।

kalerkantho

২০০৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বিতর্কিত সিনেমা ‘ওয়াটার’

ওয়াটার (২০০৫)
ওয়াটার হলো দীপা মেহতার আরেকটি সিনেমা, যা ভারতীয় বিধবাদের জীবনের ওপর অন্ধকার অন্তর্দৃষ্টির কারণে অনেক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বারাণসীর একটি নির্দিষ্ট আশ্রমকে ঘিরে সিনেমাটির চিত্রনাট্য লিখেছেন অনুরাগ কাশ্যপ। গল্পে বর্বরতা এবং দুর্ব্যবহারের মতো বিতর্কিত বিষয়গুলো তুলে ধরেছিল, যা তখন ভারতীয় সেন্সর বোর্ডের কাছে স্বীকৃতি পায়নি। সিনেমাটি ব্যাপকভাবে প্রতিবাদকারীদের দ্বারা আক্রমণের শিকার করেছিল এবং প্রায় ২০০০ ধর্মান্ধ আক্রমণ করে সিনেমাটির সেট ধ্বংস করে দিয়েছিল।  

LEAVE A REPLY