রাশিয়ার ঋণ পরিশোধে বিকল্প পথের সন্ধান

রাশিয়ার ঋণ পরিশোধে বিকল্প পথের সন্ধান করছে সরকার। এর আগে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ডলার ও ইউরোয় লেনদেনে নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ে রাশিয়া। ফলে বাংলাদেশ থেকে অর্থ নিতে জটিলতা সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে আপাতত সমাধান হিসাবে সোনালী ব্যাংকে ফরেন কারেন্সি অ্যাকাউন্ট খুলে লেনদেন করা হচ্ছে। এতে আপাতত জটিলতা কাটিয়ে পুরোদমে এগিয়ে চলছে রাশিয়ার অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন একমাত্র বৃহৎ প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ। তবে এ সংকট কাটাতে বিকল্প পেমেন্ট মর্ডালিটি বা পরিশোধের ভিন্ন পদ্ধতি তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এবং অন্যান্য সংস্থাগুলো কাজ করছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। সূত্র জানায়, আগে মার্কিন ডলারের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের অর্থ পরিশোধ করা হতো। চুক্তি অনুযায়ী বছরে চার কিস্তিতে চুক্তিমূল্যের ১০ শতাংশ অগ্রিম পরিশোধ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে রাশিয়ান ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ‘জেএসসি এটমস্টয়এক্সপোর্ট’র নির্ধারিত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ‘ভিইবি.আরএফ’র (রাশিয়ার একটি বৈদেশিক অর্থ লেনদেনবিষয়ক ব্যাংক) মাধ্যমে লেনদেন করা হতো। কিন্তু ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার কিছু ব্যাংককে সুইফট (সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টার ব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন) বাদ দেওয়ায় জটিলতা সৃষ্টি হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ পরিশোধে সমস্যা দেখা দেয় এবং বন্ধ হয়ে যায় লেনদেন। পরে রাশিয়ান ঠিকাদারের প্রস্তাব এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে আপাতত সোনালী ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলে লেনদেন করা শুরু করা হয়েছে। এ কারণে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো সমস্যা হয়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের অ্যাডমিন অ্যান্ড ফাইন্যান্স বিভাগের প্রধান অলক চক্রবর্তী শনিবার যুগান্তরকে বলেন, বর্তমানে অর্থ পরিশোধে কোনো সমস্যা নেই। এছাড়া রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কাজ পুরোদমে চলছে। সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে থাকা এ প্রকল্পটিতে যাতে কোনো সমস্যা না হয় সেজন্য সোনালী ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলেছে রাশিয়া। সেখান থেকেই লেনদেন করা হচ্ছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এখনো আমরা ডলারে অর্থ পরিশোধ করছি। পরে তারা কিভাবে এটাকে তাদের মুদ্রায় পরিবর্তন করছে তা আমাদের জানা নেই।

ইআরডি সূত্র জানায়, এর আগে রাশিয়ান ফেডারেশনের অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রস্তাব দেওয়া হয় বাংলাদেশকে। সেখানে বলা হয়, ২০১৬ সালের ২৬ জুলাই বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে স্বাক্ষরিত ইন্টার গভর্নমেন্টাল ক্রেডিট অ্যাগ্রিমেন্টের (আইজিসিএ) আর্টিকেল ২-এর প্যারাগ্রাফ ৫ সংশোধন করা প্রয়োজন। এছাড়া রাশিয়ার ওপর ডলার ও ইউরোয় লেনদেনে সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে বিকল্প পেমেন্ট মডালিটি (পরিশোধ পদ্ধতি) নির্ধারণের বিষয়েও একটি পৃথক প্রস্তাব ১০ আগস্ট ফলোচার্ট আকারে পাঠায় রাশিয়া। এরপর ৩০ আগস্ট রাশিয়ান অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি সভা করে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ। ওই সভায় রাশিয়ার দেওয়া চুক্তির অংশ সংশোধন এবং পেমেন্ট মডালিটির বিষয়ে আপত্তি জানায় বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে বলা হয়, রাশিয়ার সংশোধনী প্রস্তাব অনুযায়ী ঋণের অব্যবহৃত অর্থের ওপর কমিটমেন্ট ফি (প্রতিশ্রুতি ফি) ধার্য করা হবে। সেটি এই মুহূর্তে সম্ভব নয়। সেই সঙ্গে প্রস্তাবিত মডালিটির পরিবর্তে বাংলাদেশ একটি পেমেন্ট মডালিটির প্রস্তাব দেওয়ার কথা জানায়। যেটি উভয় দেশের জন্য লাভজনক ও নিরাপদ একটি উপায়ে ফলোচার্ট তৈরি করা হবে বলে বলা হয়। এতে সম্মতি দেয় রাশিয়ান অর্থ মন্ত্রণালয়। ফলে সেটি তৈরির কাজ করছে ইআরডি। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন দপ্তরের কাছে মতামত চাওয়া হয়েছে। সেটি শেষ করলেই একটি মডালিটি তৈরি করা হবে। তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি ইআরডির সচিব শরিফা খান। তিনি যুগান্তরকে বলেন, এটা আমার নলেজে নেই। পেমেন্টসংক্রান্ত বিষয়ে আমরা কিছু করছি না। অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক দেখবে।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা জানান, করোনা মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব পড়েনি দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে। কোনো কোনো সময় জটিলতা হলেও থেমে থাকেনি এর বাস্তবায়ন কাজ। ফলে ৩১ জুলাই পর্যন্ত প্রকল্পটির ভৌত অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৫১ দশমিক ৫০ শতাংশ। এছাড়া প্রকল্পের প্রথম ইউনিটে সার্বিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৭০ শতাংশ। আর দ্বিতীয় ইউনিটে কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৪৫ শতাংশ। প্রকল্পের আওতায় এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৫৫ হাজার ৭১৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা। ২৪০০ মেগাওয়াটের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যয় ধরা হয়েছে মোট ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ৯০ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে রাশিয়া। বাকি ব্যয় বহন করবে সরকার। এটির বাস্তবায়ন শুরু হয় ২০১৬ সালের জুলাই মাসে। মেয়াদ শেষ হবে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে।

LEAVE A REPLY