ঢাবি থেকে দিনদুপুরে ২০ লাখ টাকা ডাকাতি, ১৭ দিনেও কুল-কিনারা নেই

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে ব্যবসায়ীকে অপহরণ ও ২০ লাখ টাকা ডাকাতির ঘটনায় জড়িতরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। ঘটনার ১৭ দিন পার হলেও অপরাধীদের কুল-কিনারা করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। দিনের বেলা ক্যাম্পাস এলাকায় এমন চাঞ্চল্যকর অপরাধের ঘটনায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম আতংক বিরাজ করছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে নিরাপদ করতে অপরাধীদের দ্রুত শনাক্ত করে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন তারা।

এর আগে গত ৩ সেপ্টেম্বর বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবের সামনে থেকে অপহৃত হন মহিউদ্দিন খান নামের এক স্বর্ণ ব্যবসায়ী। পরদিন এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় একটি মামলা হয়। ঘটনার পর থেকেই পুলিশ অপরাধীদের শনাক্তে বহুমুখী তৎপরতার কথা জানিয়েছে। ঘটনাস্থলের আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ এবং তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় অপরাধীদের শনাক্তে কাজ চলছে বলেও জানায় পুলিশ। 

থানা পুলিশের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) এ ঘটনার ছায়া তদন্ত করছে বলে জানা গেছে। তবে অপরাধীদের বিষয়ে কুল-কিনারা করতে পারছেন না তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিবি রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. হুমায়ুন কবীর যুগান্তরকে বলেন, ঘটনার পর থেকে অপরাধীদের গ্রেফতারে কাজ করছে ডিবি। একাধিক টিম বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করেছে। আশা করছি, খুব দ্রুতই জড়িতদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।

সেদিনের ঘটনার বর্ণনায় অপহৃত মহিউদ্দিন খান জানান, ‘সেনাবাহিনী’ লেখা একটি গাড়ি তার পথ আটকে অপহরণ ও ২০ লাখ টাকা ডাকাতি করে। রাজধানীর নিউমার্কেটে রায়হান জুয়েলার্স নামে তার একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আছে। ঘটনার দিন দুপুর একটার দিকে তিনি বাসা থেকে তাঁতীবাজারের উদ্দেশে রওনা দেন। দুইটার দিকে তাঁতীবাজার ২১ নম্বর মার্কেটে পৌঁছান। কাজ শেষে বিকাল তিনটার দিকে তাঁতীবাজার মোড় থেকে ভাড়া করা মোটরসাইকেলে করে নিউমার্কেটের উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবের মূল ফটক থেকে ২০ গজ পূর্বে পাকা রাস্তার ওপর পৌঁছান মহিউদ্দিন। সঙ্গে সঙ্গে পেছন থেকে ‘সেনাবাহিনী’ লেখা জলপাই রঙের একটি গাড়ি এসে মোটরসাইকেলের পথরোধ করে। তিনজন ওই গাড়ি থেকে নেমে তাকে মোটরসাইকেল থেকে নামতে বলেন।

মহিউদ্দিন বলেন, ‘মোটরসাইকেল থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে আমার মাথায় পিস্তল ঠেকান তিনজন। তারপর গাড়িতে তুলে গামছা দিয়ে আমার চোখ বেঁধে ফেলা হয়। গাড়িতে তোলার সময় আমি চালক ও পেছনে বসা আরও একজনকে দেখতে পাই। তাদের জিজ্ঞাসা করি, আমার চোখ বাঁধেন কেন, ভাই? তখন তারা উত্তেজিত হয়ে আমাকে চুপ থাকতে বলেন এবং চোখে-মুখে কিল–ঘুসি মারতে থাকেন। কোনো কথা জিজ্ঞাসা না করেই ওই লোকেরা আমাকে মারধর করছিলেন। গাড়ি কিছুদূর যাওয়ার পর তারা আমার দুই হাত পেছনে নিয়ে হ্যান্ডকাফ (হাতকড়া) পরিয়ে দেন। এ ছাড়া আমি যাতে চিৎকার করতে না পারি, সেজন্য মুখ গামছা দিয়ে বেঁধে ফেলেন।’

ডাকাতরা তার কাছ থেকে মোট ২০ লাখ টাকা ও একটি মোবাইল ফোন নিয়ে গেছে বলে দাবি করেছেন এই ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, আমার দুই পায়ে রাবার দিয়ে বাঁধা ২ লাখ টাকা করে মোট ৪ লাখ টাকা ও কোমরে কাপড়ের বেল্টে রাখা আরও ১৬ লাখ টাকা নিয়ে নেয় ডাকাতেরা। আমার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও তারা ছিনিয়ে নেয়। পরে হাত, পা ও চোখ বেঁধে রাস্তার পাশে ফেলে দেয়। তখন রাস্তার পাশে কয়েকজন তার গোঙানির শব্দ শুনে বাঁধন খুলে দেন। তাদের কাছ থেকে জানতে পারেন, তিনি কেরানীগঞ্জে আব্দুল্লাহপুরের রাস্তার পাশে রয়েছেন। পরে তাদের সহায়তায় বিষয়টি তার ভাই কবির হোসেনকে জানানো হয়। এরপর মহিউদ্দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।

LEAVE A REPLY