রংপুরে জাপানি নাগরিক খুন : ৪ জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ বহাল

সাত বছর আগে জাপানি নাগরিক হোসিও কুনিকে হত্যার দায়ে নিষিদ্ধ জঙ্গি দল জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) চার জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। এরা হলেন- জেএমবির রংপুর অঞ্চলের কমান্ডার মাসুদ রানা ওরফে মামুন ওরফে মন্ত্রী, লিটন মিয়া ওরফে রফিক, সাখাওয়াত হোসেন ও পলাতক আহসান উল্লাহ আনসারী ওরফে বিপ্লব। হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততা প্রমাণ করতে না পারায় জেএমবির সদস্য ইছহাক আলীকে খালাস দেওয়া হয়েছে।

আজ বুধবার বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।

এ মামলার ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের আবেদন) ও বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের আপিল শুনানির পর এ রায় ঘোষণা করলেন হাইকোর্ট।

রায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্তদের ডেথ রেফারেন্স গ্রহন ও তাদের আপিল খারিজ করা হয়েছে রায়ে। আর ইছহাক আলীর আপিল গ্রহন করে তার ডেথ রেফারেন্স খারিজ করা হয়েছে।   আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরসেদ ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ। সঙ্গে ছিলেন, সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল এ মান্নান, জাকির হোসেন মাসুদ। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী আহসান উল্লাহ, মো. শামসুল ইসলাম ও রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হাফিজুর রহমান খান।

রায়ের পর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, “খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে। “

উল্লেখ্য, রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার সারাই ইউনিয়নের আলুটারি গ্রামে দুই একর জমি ইজারা নিয়ে কুনিও ঘাসের আবাদ করেছিলেন। মুন্নাফ নামের এক ব‌্যক্তির রিকশায় চড়ে প্রতিদিন সকালে সেই খামার দেখভাল করতে যেতেন তিনি। ২০১৫ সালের ৩ অক্টোবর সেখানে যাওয়ার পথেই তিনি খুন হন। ঢাকায় ইতালীয় নাগরিক চেজারে তাভেল্লা হতাকাণ্ডের পাঁচ দিনের মাথায় একই কায়দায় রংপুরে জাপানি নাগরিক হত‌্যার ওই ঘটনা সে সময় আন্তর্জাতিক গণমাধ‌্যমেও আলোড়ন তোলে।

ওই দিনই কাউনিয়া থানার তৎকালীন ওসি রেজাউল করিম বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। ঘটনার পরপর আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএস এর দায় স্বীকার করলেও সরকার তা নাকচ করে। প্রথম দিকে পুলিশের তদন্ত স্থনীয় এক বিএনপি নেতাকে ঘিরে আবর্তিত হলেও পরে তাতে জঙ্গিদের যোগাযোগ পান তদন্তকারীরা।  

প্রায় নয় মাস তদন্তের পর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউনিয়া থানার ওসি আব্দুল কাদের জিলানী ২০১৬ সালের ৩ জুলাই রংপুরের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে অভিযোগপত্র দেন। সেখানে জেএমবির আট জঙ্গিকে আসামি করা হয়। অভিযোগপত্রে আট আসামির নাম থাকলেও তাদের দুজন আগেই পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, কুনিও হোশিকে লক্ষ্য করে পর পর তিনটি গুলি করেন জেএমবির আঞ্চলিক কমান্ডার মাসুদ রানা। মোটরসাইকেলে তারা তিনজন ছিলেন। গুলি করার পর মোটরসাইকেলে করেই তারা পালিয়ে যান। ঘটনাস্থলেই মারা যান ৬৬ বছর বয়সী কুনিও।

হাকিম আদালত থেকে মামলাটি বিশেষ জজ আদালতে স্থানান্তরের পর ২০১৬ সালের ১৫ নভেম্বর বিচারক অভিযোগ গঠনের মধ‌্য দিয়ে আসামিদের বিচার শুরু করে।   ২০১৭ সালের  ৪ জানুয়ারি সাক্ষ‌্যগ্রহণ শুরুর পর রাষ্ট্রপক্ষে ৫৭ জনের মধ‌্যে ৫৫ জনের সাক্ষ্য শোনেন আদালত। পরে ওই বছর ২৮ ফেব্রুয়ারী রায় দেন রংপুরের বিশেষ জজ নরেশচন্দ্র সরকার।  

রায়ে জেএমবির এই পাঁচ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পাশাপাশি প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেন বিচারক। এ রায়ের এক সপ্তাহের মাথায় আসামিদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের ডেথ রেফারেন্স আসে হাইকোর্টে। অন্যদিকে আসামিরাও খালাস চেয়ে আপিল করেন। সে সবের শুনানির পর রায় ঘোষণা করলেন উচ্চ আদালত।

LEAVE A REPLY