ইরানের চলতি বিক্ষোভ যে কারণে আলাদা

ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় কুর্দি জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত প্রদেশে নারীরা বোরখা খুলে তাতে আগুন দিয়েছেন। কারণ বোরখাকে দেশটির রক্ষণশীল ধর্মীয় বিপ্লবের প্রতীক মনে করেন তাঁরা। এ ছাড়া বিক্ষোভে ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা’ ইত্যাদি শব্দসম্বলিত স্লোগান দিচ্ছেন প্রতিবাদকারীরা।

নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে কুর্দি তরুণী মাহসা আমিনির (২২) মৃত্যুর প্রতিবাদে কুর্দি অধ্যুষিত প্রদেশে নারীরা এভাবেই প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন।

এ বিক্ষোভের আঁচ লেগেছে রাজধানী তেহরানের বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে অধ্যয়নরত কিছু নারী শিক্ষার্থীও প্রতিবাদ জানাতে বোরখা-হিজাব পুড়িয়েছেন। এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে।

ইরানবিষয়ক বিশেষজ্ঞ ফ্রান্সের প্যারিস সাইট বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক আজাদেহ কিয়ান বোরখা-হিজাব পোড়ানোর ঘটনাকে রক্ষণশীল শাসকদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ‘একটি শক্তিশালী প্রতীক’ আখ্যা দিয়েছেন।

অধ্যাপক আজাদেহ ইরানের রক্ষণশীল বিপ্লবের বিরুদ্ধে এই বিক্ষোভকে ‘নজিরবিহীন’ আখ্যা দেন। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এই বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিচ্ছেন নারীরা যা দেশটির ইতিহাসে বেশ তাত্পর্যপূর্ণ ঘটনা।

গত ১৫ বছরে ইরানের অধিকার ও বিক্ষোভ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতার আলোকে একই রকম অভিমত তুলে ধরেন নরওয়ের রাজধানী অসলোভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা ইরান হিউম্যান রাইটসের (আইএইচআর) পরিচালক মাহমুদ আমিরি-মোগাদ্দাম। তিনি বলেন, এমন বিক্ষোভ আগে দেখা যায়নি। এই বিক্ষোভ ইরানে ‘একটি বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত’।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, সেদিন পর্যন্ত ইরানের ৫০টি শহরে বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশে বিক্ষোভের মাত্রা বেশি। কুর্দি অধিকার সংগঠন হেংগাউয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে রয়টার্স দাবি করেছে, সেখানে নিহতের সংখ্যা প্রায় ১৫। নিরাপত্তা বাহিনী সব নিহত হওয়ার ঘটনার দায় অস্বীকার করেছে।

পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, এ বিক্ষোভের কারণে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন ইরানের রক্ষণশীল শাসকরা। কারণ বিক্ষোভে নিহতদের চারজনই নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য। অর্থাত্ প্রতিবাদের ব্যাপকতার পাশাপাশি এর ধরনও নিকট অতীতের বিক্ষোভগুলোর তুলনায় পৃথক ও তাত্পর্যপূর্ণ।

২০১৯ সালে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ইরানের কমপক্ষে ১৫টি শহরে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভে দেড় হাজারের মতো মানুষ নিহত হয়।  জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ছিল ওই বিক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দু।

এ বিষয়ে অধ্যাপক আজাদেহ কিয়ান বলেছেন, এবারের বিক্ষোভ বেকারত্ব, অর্থনৈতিক সংকট কিংবা রাজনৈতিক অচলাবস্থার মতো সাধারণ বিষয়কে কেন্দ্র করে নয়, বরং এতে নারী অধিকারের কথা শোনা যাচ্ছে।

বিক্ষোভরত নারীদের ক্ষোভের মুখে পড়েছে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ও তাঁর পরিবার। তেহরানে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভ থেকে খামেনির পরিবারের বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়া হয়। সূত্র : এএফপি, রয়টার্স

LEAVE A REPLY