‘আগেই ফল ঠিক করা’ গণভোট এগিয়ে নিচ্ছে রাশিয়া

ইউক্রেন থেকে শরণার্থী হয়ে রাশিয়ায় যাওয়া লোকজন রাশিয়ার রোস্তভ-অন-দনে শনিবার ভোট দিচ্ছেন-ছবি: এএফপি

ইউক্রেনের চার অঞ্চল লুহানস্ক, দোনেত্স্ক, জাপোরিঝিয়া ও খেরসন নিজেদের সঙ্গে জুড়ে নিতে পাঁচ দিনব্যাপী গণভোট করছে রাশিয়া। বিবিসি বলছে, ব্যালট পেপার ছাপানো হলেও ভোট নিতে ওই সব অঞ্চলের বাসিন্দাদের অনেকের দোরগোড়ায় অস্ত্রসমেত হাজির হচ্ছে রাশিয়ার সেনারা। ভূখণ্ডগুলো পুরো বা আংশিক রাশিয়ার বাহিনীর দখলে রয়েছে।

লুহানস্ক ও দোনেেস্কর জনসাধারণকে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে, তারা নিজেদের প্রজাতন্ত্রের কেন্দ্র হিসেবে রাশিয়ার সঙ্গে অন্তর্ভুক্তিকে সমর্থন করে কি না।

ওই দুই অঞ্চলের ব্যালট ছাপানো হয়েছে শুধু রুশ ভাষায়। অন্যদিকে জাপোরিঝিয়া ও খেরসনে ব্যালট ছাপানো হয়েছে ইউক্রেনীয় ও রুশ দুই ভাষাতেই।

রাশিয়ার দখলে থাকা দক্ষিণ ইউক্রেনের বৃহত্তম শহর খেরসনের এক বাসিন্দা গণভোট প্রসঙ্গে বলেন, তিনি রাশিয়ার সঙ্গে যোগ দেওয়ার পক্ষে নন। কিন্তু ‘না’ ভোটের পরিণতি কী হতে পারে, সে ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা রয়েছে তাঁর। নিজে ভোট দেবেন না বলেও জানান তিনি। নাম প্রকাশ না করা ওই ব্যক্তি বলেন, ‘আপনি যদি বিপক্ষে ভোট দেন, তা আমলে নেওয়া হবে না। ফল এরই মধ্যে চূড়ান্ত হয়ে গেছে। ’

গণভোটে রাশিয়ার পক্ষে কী ধরনের সমর্থন দেখা যেতে পারে, সে প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি ধারণা করছি, আমার পরিচিতদের ৩ শতাংশের মতো হয়তো রাশিয়াকে সমর্থন দেবে। ’

গত শুক্রবার দোনেেস্ক ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে বসবাসরত একাধিক বাসিন্দা জানান, মস্কোর নিয়োজিত কর্মকর্তাসহ রাশিয়ার সেনারা মানুষের বাসায় বাসায় গিয়ে মৌখিকভাবে জিজ্ঞাসা করেছে, তারা রাশিয়ায় যোগ দিতে চায় কি না। তাকেই ভোট হিসেবে কাগজে লিখে নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে ‘না’ ভোটের ব্যাপারে। অনেক ক্ষেত্রে গোটা একটি ফ্ল্যাটবাড়িতে একটিমাত্র ব্যালট পেপার ব্যবহার করা হয়েছে।

ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে রাশিয়ার তীব্র বিরোধিতা করে আসা যুক্তরাজ্য অভিযোগ করছে, মস্কো আগে থেকেই ভোটের ফল ঠিক করে রেখেছে এমন প্রমাণ রয়েছে তাদের হাতে। এখন শুধু আনুষ্ঠানিকতা পালন করছে রাষ্ট্রটি।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের কিছু প্রতিবেদনও বলছে, কথিত এই গণভোট থেকে শুধু রাশিয়া যা চায় সে ফলই আসবে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কির উপদেষ্টা মিখাইল পোদোলিয়াক বলেছেন, ‘এটি আন্তর্জাতিক আইনবিরোধী…আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে (এগুলোর) কোনো পরিণতি নেই। এটি (রাশিয়ার) অভ্যন্তরীণ প্রচারণার একটি অংশ। ’

এরই মধ্যে ন্যক্কারজনক আখ্যা দিয়ে এই ভোটের নিন্দা জানিয়েছে জি৭ জোটভুক্ত দেশগুলো।

গত ফেব্রুয়ারির শেষে ইউক্রেনে কথিত ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরু করে রাশিয়া। শুরুর দিকেই দখল করে নেওয়া কয়েকটি শহরকে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করতে গণভোটের আয়োজনের তত্পরতা চালিয়েছিলেন রুশপন্থী প্রশাসকরা। তবে তা তেমন সফল হয়নি। এর পর বড় পরিসরে এবারের গণভোট হচ্ছে।

সূত্র : বিবিসি, এএফপি

LEAVE A REPLY