ইউক্রেনের বিতর্কিত গণভোটে ভোট দিচ্ছেন এক ব্যক্তি-ছবি: বিবিসিঅ
রুশ অধিকৃত ইউক্রেনের চার অঞ্চলে পাঁচ দিন ধরে চলা গণভোটে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পক্ষে বিপুল জনরায় এসেছে বলে জানিয়েছেন অঞ্চলগুলোর মস্কোপন্থী প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। তাঁদের বক্তব্য অনুযায়ী পরে কিছু প্রক্রিয়া শেষে অঞ্চলগুলো রাশিয়ার ভূখণ্ড হিসেবে বিবেচিত হবে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গণভোটের মধ্যেই অধিকৃত চার অঞ্চলের গ্রামে গ্রামে গিয়ে ইউক্রেনীয় পুরুষদের তালিকা করতে শুরু করেছেন রাশিয়ার সেনারা। স্থানীয়রা জানান, গণভোটের পর রুশ বাহিনীর হয়ে যুদ্ধে যোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে তাঁদের।
১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী পুরুষদের এসব অঞ্চল ছেড়ে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে।
দখলকৃত অঞ্চলের মস্কোপন্থী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রাথমিক গণনা শেষে দেখা গেছে, জাপোরিঝিয়ায় ৯১ শতাংশ, খেরসনে ৮৭ শতাংশ, লুহানস্কে ৯৮ শতাংশ এবং দোনেেস্ক ৯৯ শতাংশ ভোটার রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছেন।
কয়েকটি প্রক্রিয়ার পর অঞ্চলগুলো রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করা হবে। রুশ ফেডারেশনের অংশ হতে ইচ্ছুক কোনো অঞ্চল মস্কোর কাছে প্রস্তাব জমা দিলে তা পার্লামেন্ট ও সরকারকে অবহিত করবেন প্রেসিডেন্ট। এরপর একটি আন্তর্জাতিক চুক্তির খসড়া তৈরি করা হবে। চুক্তিতে নতুন অঞ্চলের নাম, তার রাজনৈতিক মর্যাদা, বাসিন্দাদের নাগরিকত্ব, সরকারি কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম, আইন প্রণয়ন ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে। পরবর্তী ধাপ হিসেবে দেশটির পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ দুমায় অনুমোদনের জন্য যাবে বিষয়টি। দুমার পর তা অনুমোদনের জন্য পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে যাবে। এসব প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নতুন ভূখণ্ড অন্তর্ভুক্তির আইন কার্যকর হবে।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ গত শুক্রবার বলেছিলেন, তিনি মনে করেন কাজটি দ্রুতই হবে। কারণ যাবতীয় প্রস্তুতি এরই মধ্যে সারা হয়েছে।
গণভোটের প্রথম দিনেই খেরসন ছেড়ে স্বামী-সন্তান নিয়ে পালান ইরায়না। এত দিন বৃদ্ধ দাদির সেবা করতে যুদ্ধের মধ্যেও থেকে গেছেন তাঁরা। বিবিসিকে ইরায়না বলেন, ‘গণভোট ও পুতিনের রিজার্ভ সেনা ডাকার ঘোষণার পরই বুঝতে পারছিলাম, বয়স ও শারীরিক সামর্থ্য বিচার না করেই লোকজনকে জোর করে বন্দি করা হবে। ’ ইরায়না আরো বলেন, ‘আমরা গ্যাস কিংবা বিদ্যুত্ ছাড়াও বেঁচে থাকতে পারব। কিন্তু এটাই (সেনাবাহিনীতে তলব) ছিল আমাদের জন্য শেষ সীমা। ’
রাশিয়ার রিজার্ভ সেনা তলব যুদ্ধে হতাহত বাড়াবে বলে বিবিসির প্রতিবেদককে বলেছেন ইউক্রেনের সেনারা। অন্যদিকে মস্কো আগেই সতর্ক করে বলেছে, কিয়েভ যদি এসব অঞ্চল পুনর্দখলের চেষ্টা করে, তবে তাকে রুশ ভূখণ্ডে আক্রমণ হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
এদিকে মঙ্গলবার রাতে দেওয়া নিয়মিত ভিডিও ভাষণে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ‘রাশিয়ার দখলে থাকা অঞ্চলগুলোতে যে প্রহসন হয়েছে, তাতে একে এমনকি জালিয়াতির গণভোটও বলা যাবে না। ’ এসব অঞ্চলের জনগণের সুরক্ষায় লড়াই চালিয়ে যাবেন বলেও জানান তিনি। সূত্র : বিবিসি ও রয়টার্স।