বাংলাদেশ ৫৫০ কোটি ডলার ঋণের নিশ্চয়তা চাইবে

খাদ্য নিরাপত্তা, ঊর্ধ্বমুখী মূল্যস্ফীতি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ একাধিক বৈশ্বিক সংকটের মধ্যে শুরু হচ্ছে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের সপ্তাহব্যাপী বার্ষিক বৈঠক। ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ’র প্রধান কার্যালয়ে অর্থনৈতিক খাতে সবচেয়ে বড় এ সম্মেলন সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে। অর্থনৈতিক সংকট থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজতে বিভিন্ন দেশের অর্থমন্ত্রী, সংসদ-সদস্য, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর এবং দাতা সংস্থাগুলো মিলিত হবে এ সম্মেলনে। এবারের বৈঠকে আলোচ্য ইস্যু হচ্ছে, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় দাতা সংস্থাগুলোর ঋণ ব্যবস্থাপনা। বিশ্বব্যাংক ও আইএমফ’র কাছে বাংলাদেশ যে ৫৫০ কোটি (৫.৫ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার ঋণ চেয়েছে সে প্রস্তাবও এতে প্রাধান্য পাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। জানা গেছে, বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ বার্ষিক সম্মেলনে অংশ নিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর আবদুর রউফ তালুকদার এবং অর্থ সচিব ফাতিমা ইয়াসমিনসহ সরকারি পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল শনিবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন ডিসির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছে। প্রস্তুতি হিসাবে শুক্রবার অর্থমন্ত্রী অ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বৈঠক করেছেন। এর আগে বৈঠক করেছেন অর্থ সচিব। তবে এবারের সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী অংশ নিচ্ছেন না।

জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের (২০২২-২৩) বাজেট সহায়তা হিসাবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ চেয়েছে বাংলাদেশ। আইএমএফের কাছে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়ে ঋণ প্রস্তাব দেয়। এছাড়া বিশ্বব্যাংকের কাছে চাওয়া হয়েছে ১০০ কোটি ডলার। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের প্রধানদের সঙ্গে ওই সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের আলাদা বৈঠক হবে। সেখানে এসব ঋণের বিষয়টি তুলে ধরা হবে।

ঋণ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেছেন, এ ব্যাপারে আইএমএফ খুবই ইতিবাচক। তাদের দু-একজনের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগতভাবে কথা হয়েছে। আমি এ ব্যাপারে আশাবাদী। এই ঋণ বাংলাদেশ অবশ্যই পাবে। কারণ আমাদের ঋণ পরিশোধের রেকর্ড ভালো।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, বিশ্বব্যাংকের কাছে বাজেট সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এর বিপরীতে সংস্থাটির পক্ষ থেকে আর্থিক খাত, জ্বালানির মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি, সামাজিক সুরক্ষা এবং বাণিজ্য খাতে সংস্কারের প্রস্তাব দেওয়া হয়। তবে আমার ধারণা বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে এ ঋণ পাওয়া যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, বিশ্বব্যাংক আইএমএফের বার্ষিক সভায় যোগ দেবে বাংলাদেশ। এই মুহূর্তে সরকারের নগদ সহায়তা বেশি দরকার। আইএমএফের কাছেও বাংলাদেশ ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ চেয়েছে। তবে ১৩০ কোটি ডলার দেওয়ার সম্ভাবনা আছে। এ জন্য সম্মেলনে শেষে চলতি মাসেই আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরে আসতে পারে। আইএমএফের ঋণের বিপরীতে ভ্যাট যৌক্তিকরণ, প্রশাসনিক অটোমেশন, ভর্তুকি দেওয়াসহ নানা ধরনের শর্ত দেওয়া হয়েছে। এতে খুব বেশিকিছু করতে হবে না। মোটা দাগে দুই থেকে তিনটি শর্ত সংস্কার করলেই এ ঋণ পাওয়া যাবে।

জানা গেছে, ১০ থেকে ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত ৭ দিন বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ বার্ষিক সম্মেলনে বিভিন্ন অর্থনৈতিক ইস্যু নিয়ে ১৮০টি বৈঠক হবে। এসব বৈঠকে অংশ নিতে বিভিন্ন দেশ থেকে ২০১৮ জন প্রতিনিধি হাজির হয়েছেন। এবার সম্মেলনে কয়েকটি ইস্যুকে বেশি প্রধান্য দেওয়া হচ্ছে। সম্মেলন উদ্বোধনের প্রথম দিন, প্রথম বৈঠকটি হবে ‘একাধিক বৈশ্বিক সংকট থেকে বেরিয়ে আসার কৌশল নির্ধারণ’ নিয়ে। আলোচনায় থাকবেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিট মালপাস।

দ্বিতীয় সেশন হবে বর্তমান অস্থিরতার যুগে একাধিক সংকট থেকে বেরিয়ে আসার পথ নির্ধারণ। এছাড়া আলোচ্য ইস্যুর মধ্যে থাকবে মূল্যস্ফীতির কারণে খাদ্য সরবরাহ চেইনে বিরূপ প্রভাব ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়। খাদ্য নিরাপত্তার হুমকিতে বিশ্ব, খাদ্য ও জ্বালানির দাম বাড়ার কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, ইউরো সংকট, খাদ্য সংকটের নেপথ্যে জলবায়ু পরিবর্তন ও ইউক্রেন যুদ্ধ এসব বিষয়ও থাকছে। এছাড়া রেমিট্যান্স ও হুন্ডি পাচার, খাদ্য নিরাপত্তা ও সরবরাহ পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তন ও খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা করবেন বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক খাতের নেতারা। এছাড়া বিশ্ব অর্থনীতির ফোকাস, জলবায়ু মোকাবিলায় জরুরি ভিত্তিতে অর্থায়ন, গুণগত অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ, বিশ্বব্যাজারে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব, কোভিড-১৯ পরবর্তী কৃষি খাতের মজুরির ভিন্নতাসহ অন্যান্য বিষয় নিয়েও আলোচনা হবে।

LEAVE A REPLY