ইরানে সর্বোচ্চ ক্ষমতা আসলে কার হাতে

ইরানে নিরাপত্তা হেফাজতে থাকা অবস্থায় মাহশা আমিনি নামে তরুণীর মৃত্যুর পর গড়ে ওঠা বিক্ষোভ সহিংস পন্থাতেই দমন করছে দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

মাহসা আমিনি আটক হয়েছিলেন হিজাব ঠিকমতো পরিধান না করার অভিযোগে। এরপর পুরো দেশে বিক্ষোভ হয়েছে এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে এবারের বিক্ষোভে দেড় শতাধিক মানুষ মারা গেছে। কিন্তু বিক্ষোভ দমনে শক্তি প্রয়োগের সিদ্ধান্ত আসলে দেশটিতে কে নেয়?

সবচেয়ে বেশি ক্ষমতা কার হাতে?

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হলেন আয়াতুল্লাহ আল খামেনি।

তার অধীনেই প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, বিচার বিভাগ, পার্লামেন্ট, গার্ডিয়ান কাউন্সিল ও সশস্ত্র বাহিনী।

আবার সশস্ত্র বাহিনীর অধীনে আর্মি, পুলিশ ও ইসলামিক রিভলিউশনারি গার্ড। পুলিশের অধীনে আবার আছে নৈতিকতা পুলিশ। আর ইসলামিক রিভলিউশিনারি গার্ডের অধীনে বাসিজ।

সর্বোচ্চ নেতার ক্ষমতা কতটা
ইরানের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হলেন আয়াতুল্লাহ আল খামেনি। ১৯৮৯ সাল থেকে তিনি দেশটির সর্বোচ্চ নেতা। তিনিই সরকার প্রধান ও কমান্ডার-ইন-চিফ। দেশটির ন্যাশনাল পুলিশ ও নৈতিকতা পুলিশের ওপর তার কর্তৃত্ব আছে। এই নৈতিকতা পুলিশের কর্মকর্তারা মাহসা আমিনিকে আটক করেছিল।

খামেনি একই সাথে ইসলামিক  রিভলিউশনারির গার্ড কোর এবং এর স্বেচ্ছাসেবী শাখা, দি বাসিজ রেজিস্ট্যান্স ফোর্সকেও নিয়ন্ত্রণ করেন। আর ইসলামিক  রিভলিউশনারির গার্ড কোরের দায়িত্ব হলো অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

বাসিজ বরাবরই ইরানে ভিন্নমত দমনে কাজ করেছে। আর কিভাবে প্রতিবাদ বিক্ষোভ দমন করা হবে সেটি বলার বেশি এখতিয়ার খামেনির।

প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা

প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি শীর্ষ নির্বাচিত নেতা এবং সর্বোচ্চ নেতার পরেই তার অবস্থান। তিনি দৈনন্দিন সরকার পরিচালনার কাজে নিয়োজিত এবং একই সাথে অভ্যন্তরীণ নীতি ও পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে তার ব্যাপক ভূমিকা থাকে। তবে তার ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে সীমিত, বিশেষ করে নিরাপত্তা ইস্যুতে।

সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ন্যাশনাল পুলিশ পরিচালনা করে, যারা এখন বিক্ষোভ দমন করছে। তবে এর কমান্ডার নিয়োগ করেন সর্বোচ্চ নেতা এবং কমান্ডার তার কাছেই জবাবদিহি করেন।

একই সাথে ইসলামিক রিভলিউশনারি গার্ড ও বাসিজের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য। যদি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা মনে করেন যে, শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বিক্ষোভ দমন করা হোক, তাতে প্রেসিডেন্টের সেটি অনুসরণ করা ছাড়া কিছু বলার সুযোগ খুবই কম।

আবার প্রেসিডেন্টের কর্মকাণ্ড দেখভাল করতে পারে পার্লামেন্ট যেখানে নতুন আইন পাস হয়। বিপরীতে গার্ডিয়ান কাউন্সিলে থাকেন সর্বোচ্চ নেতার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা যারা পার্লামেন্টে পাস হওয়া আইনের অনুমোদন দেন এবং তাদের ভেটো দেয়ার ক্ষমতা আছে।

নৈতিকতা পুলিশ কারা
এটি ন্যাশনাল পুলিশের একটি অংশ। ইসলামি নীতি নৈতিকতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ”সঠিক পোশাকের” আইন কার্যকরের লক্ষ্যে ২০০৫ সালে এই বাহিনী প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। আইনটি করা হয়েছিল ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের পর।

প্রায় সাত হাজার নারী ও পুরুষ সদস্য আছে এই বাহিনীতে, কাউকে সতর্ক ও জরিমানা করতে পারেন তারা এবং সন্দেহভাজন কাউকে আটকও করতে পারেন।

প্রেসিডেন্ট রাইসি একজন কট্টরপন্থী হিসেবে পরিচিত। তিনি হিজাব সম্পর্কিত নিয়ম কানুন প্রয়োগে আরও কিছু আইন করেছেন।

হিজাব ছাড়া চলাফেরা করলে যেন চিহ্নিত করা যায়, সেজন্য নজরদারি ক্যামেরা বসিয়েছেন। আর সামাজিক মাধ্যমে হিজাবের বিরোধিতা করার জন্য বাধ্যতামূলক কারাদণ্ডের বিধান চালু করেছেন।

রিভলিউশানির গার্ড কারা
অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এটিই ইরানের প্রধান সংগঠন। বিপ্লবের পর ইসলামি নিয়মকানুন কার্যকরের জন্য এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিলো।

যদিও এখন এটিই ইরানের বৃহত্তম সামরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তি। প্রায় দেড় লাখ জনবল আছে এই সংস্থায়। এর সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী আছে। এই সংস্থাটি ইরানের কৌশলগত অস্ত্রের দেখভাল করে।

কুদস ফোর্স নামে এর একটি শাখা আছে, যারা পুরো মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে সহযোগীদের অর্থ, অস্ত্র, প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তা করে। এরা একই সাথে বাসিজ রেসিস্ট্যান্স ফোর্সকেও নিয়ন্ত্রণ করে।

বাসিজ আসলে কী?

বাসিজ রেসিস্ট্যান্স ফোর্স ১৯৭৯ সালে স্বেচ্ছাসেবী প্যারামিলিটারি সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। প্রতিটি প্রদেশ ও শহরে এবং সরকারি অনেক সংস্থার মধ্যে এর শাখা আছে।

এর সদস্যদের বাসিজিস নামে ডাকা হয়, যারা বিপ্লবের প্রতি অনুগত। এর প্রায় এক লাখ সদস্য অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত থাকে। ২০০৯ সালের বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর থেকেই বিরোধীদের বিক্ষোভ দমনে এ সংস্থাটিকে ব্যবহার করা হচ্ছে।
সূত্র: বিবিসি।

LEAVE A REPLY