সুইডেনে দরিদ্রের সংখ্যা বাড়ছে, গবেষণায় আভাস

একসময়ের স্বচ্ছল অনেক সুইডিশ এখন এ ধরনের পুরনো জিনিষের দোকানে ঢুঁ মারছেন

কল্যাণমূলক ধনী রাষ্ট্র সুইডেনে দরিদ্রের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং সংশ্লিষ্ট গবেষকরা এই আভাস দিয়েছেন। সুইডেনের স্থানীয় মিশনারী সহায়তা প্রতিষ্ঠান স্টেট-মিশন, রেড ক্রস এবং স্যালভেশন আর্মিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন এ বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন।

রেডক্রস বলছে, সুইডেনে যারা ইতিমধ্যেই খাদ্য এবং অর্থ সংকটে ভুগছে, খাদ্য ও বিদ্যুতের দাম আরো বাড়ানো হলে তাঁদের দৈনন্দিন জীবনযাপন সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।

সুইডিশ রেড ক্রসের সেক্রেটারি জেনারেল মার্টিন আর্নলোভ বলেন, ‘অতীতে আমরা শুধু সমাজের অভাবগ্রস্ত, গৃহহীন দরিদ্রদের সাহায্য করতাম। তাদের সংখ্যা খুব বেশি ছিল না। কিন্তু বর্তমানে এমন সব মানুষ এবং পরিবার আমাদের কাছে সাহায্যের জন্য আসছে, যাদের কিছুদিন আগেও আর্থিক স্বচ্ছলতা ছিল। খাদ্যাভাবের কথা তারা ভাবতেই পারতো না। বিশেষ করে শিশু এবং বয়স্ক সুইডিশরাই এই দলে বেশি। ’

মিশনারী প্রতিষ্ঠান স্টেট-মিশন অনেক বছর ধরে মূলত অপেক্ষাকৃত অস্বচ্ছলদের সাহায্য করে আসছে। বিগত মাসগুলোতে খাদ্য ও শীতবস্ত্রের বর্ধিত চাহিদা পূরণ করতে তাঁরা হিমশিম খাচ্ছে। শুরুতে বিদেশি শরণার্থীরাই মূলত তাঁদের কাছে সাহায্যের জন্য আসতো। কিন্তু বর্তমানে যেসব সুইডিশ পরিবারগুলোতে শিশু এবং বয়স্ক সদস্য রয়েছে, তাঁরাও স্টেট-মিশনের কাছে সাহায্য চাইতেআসছে। দিন দিন এর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে সংস্থাটি জানায়।

স্টেট-মিশনের সেক্রেটারি জেনারেল জোনাস উইহলস্ট্র্যান্ড বলেছেন,  ‘ সমাজের ব্যাপক পরিসরের মানুষ আমাদের কাছে সাহায্যের জন্য আসা শুরু করেছে। গত ৩০ বছরে সুইডেনে এই পরিস্থিতি কখনো দেখিনি। এটা খুবই ব্যতিক্রম যে, যারা আগে সাহায্য সংস্থাগুলোর কাছে হাত পাততে অসম্মানবোধ করতেন, বাধ্য হয়ে তারাও এখন তা করছেন। ’

আন্না অ্যাঞ্জেলিন নামের একজন সুইডেনের লুন্ড ইউনিভার্সিটির ‘সমাজসেবা, খাদ্য ও দারিদ্র্য’ নিয়ে গবেষণা করেন।   তিনি বলেন, ‘চোখ বন্ধ করে বলা যায় যে, সুইডেনে হঠাত্ করেই দরিদ্রের সংখ্যা আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ’

বিভিন্ন সংস্থার পরিচালিত হ্রাসকৃত মূল্যের মুদি দোকানগুলোতে ক্রেতার সংখ্যা বহু গুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। সুইডেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মালমোতে পর্যাপ্ত পণ্য না থাকায় ‘নামমাত্র দামের’ খাবার দোকানগুলোতে সাময়িকভাবে নতুন সদস্য গ্রহণ বন্ধ করা হয়েছে। আগে যেসব ধনী সুইডিশ দামি দোকান থেকে খাবার কিনতেন তারাও এখন অনেকটা গোপনে কম দামের দোকানগুলোতে যাচ্ছেন।

আনা অ্যাঞ্জেলিন মনে করেন, সুইডেনের সংবিধানে প্রত্যেক নাগরিকের জন্য অবশ্যই একটি যুক্তিসঙ্গত জীবনযাত্রার মান নিশ্চিত করার কথা বলা হলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে সে বিধান রক্ষা করা যাচ্ছে না।

জোনাস উইহলস্ট্র্যান্ড ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে স্টেট-মিশনে কাজ করছেন। তিনি বলেন, ’আমি খুব উদ্বিগ্ন যে বেকারত্ব বাড়া ছাড়াও ৯০-এর দশকের মত আরও একটি বড় সংকটের মধ্য দিয়ে যেতে হবে সুইডেনকে। ’

খ্রিস্টধর্মীয় আরেক সংগঠন স্যালভেশন আর্মি ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়তে একটি জাতীয় কর্মপরিকল্পনা কমিশন গঠনের দাবি করেছে। আর্থিক সহায়তা বৃদ্ধি ছাড়াও বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি পর্যালোচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারকে অনুরোধ করেছে তারা।

LEAVE A REPLY