করোনা ও যুদ্ধের কারণে সংকটময় বৈশ্বিক পরিস্থিতির সঙ্গে যোগ হয়েছে ব্যবসায়ীদের কারসাজি। এতে আকাশছোঁয়া সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম। যা ভোক্তার কাছে অসহনীয় হয়ে উঠেছে। তাই ক্রেতাকে স্বস্তি দিতে ৩৯টি পণ্যের যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। তবে তা শুধু কাগজে-কলমে। বাজারে সেই দাম উপেক্ষিত। মূল্য কার্যকর করতেও নেই কোনো জোরালো পদক্ষেপ। দাম যে নির্ধারণ করা হয়েছে তাও জানে না অনেকে।
এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চিনি ও ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণ করা হলেও তা অকার্যকর। বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেসব সংস্থা, অধিদপ্তর কিংবা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পণ্যের দাম নির্ধারণ করা হয় তা কার্যকরের কৌশল তাদেরই বের করতে হবে। তা না হলে ভোক্তা কোনো সুফল পাবে না।
এদিকে সর্বশেষ বৃহস্পতিবার ৩৯টি পণ্যের যৌক্তিক খুচরা দর নির্ধারণ করে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। দাম নির্ধারণ করে সেই তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী প্রতিকেজি মোটা চালের যৌক্তিক দাম ৪৫-৪৭ টাকা নির্ধারণ করা হলেও শুক্রবার খুচরা বাজারে বিক্রি হয়েছে ৫২-৫৫ টাকা। প্রতিকেজি ভালো মানের মসুর ডালের দাম ১৩২ টাকা নির্ধারণ করলেও ১৩৫-১৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতিকেজি ছোলার নির্ধারিত দাম ৭৩ টাকা হলেও বাজারে খুচরা মূল্য ৭৫-৮০ টাকা।
প্রতিলিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫৮ টাকা, যা খুচরা বাজারে ১৬৫-১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিলিটার বোতল সয়াবিনের দাম নির্ধারণ করা হয়েছ ১৭৮ টাকা, যা ১৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতিলিটার পাম তেলের (সুপার) নির্ধারিত মূল্য ১২৫ টাকা। যা খুচরা বাজারে বিক্রি হয়েছে ১৩২-১৩৫ টাকা। পাশাপাশি প্রতিকেজি চিনির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৯০ টাকা। যা রাজধানীর খুচরা বাজারে ৯৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, যৌক্তিক দাম যারা নির্ধারণ করে তাদের এই দাম কার্যকরের কৌশল বের করতে হবে। তা না হলে ভোক্তা ঠকেই যাবে। কারণ ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও সার্বিক মূল্যস্ফীতির কারণে এমনিতেই বাজারে পণ্যমূল্যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। সঙ্গে যোগ হয়েছে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি। ফলে সব ধরনের পণ্যের দাম আরেক দফা বেড়েছে। তবে কী পরিমাণ বাড়ার কথা বা কী পরিমাণে বেড়েছে তা নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর যেন নির্বিকার। সার্বিক মূল্যস্ফীতি ও ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তবে তা যথেষ্ট নয়। সব মিলে ভোক্তা স্বার্থ উদ্ধারে যেসব প্রতিষ্ঠান কাজ করছে তাদের জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে। কঠোরভাবে বাজার তদারকি করতে হবে।
এছাড়া দেশি পেঁয়াজের দাম ৪৭ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বিক্রি হয়েছে ৫০-৫৫ টাকা। দেশি রসুনের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৮ টাকা, যা খুচরা বাজারে বিক্রি হয়েছে ৯০-১০০ টাকা। আমদানি করা আদার দাম ১৭৪ টাকা নির্ধারণ করলেও বাজারে ২৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতিকেজি আলুর দাম দেওয়া আছে ২৫ টাকা, যা বাজারে ২৮-৩০ টাকা। সবজির মধ্যে প্রতিকেজি বেগুনের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ টাকা, কিন্তু বাজারে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
প্রতিকেজি চিচিঙ্গা ও ঢেঁড়সের দাম ৫৬ টাকা হলেও বিক্রি হয়েছে ৬০ ও ৭০-৮০ টাকা। কেজিপ্রতি ৫০ টাকা পটোলের দাম নির্ধারণ করা হলেও বিক্রি হয়েছে ৫৫ টাকা। ৬৩ টাকার লতি বিক্রি হয়েছে ৭০ টাকা। প্রতিকেজি কাঁচামরিচের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৬ টাকা, যা বাজারে বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা। প্রতি হালি ফার্মের ডিমের নির্ধারিত দাম ৪৮-৪৯ টাকা হলেও বাজারে বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকা। প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগির দাম দেওয়া আছে ১৮৮ টাকা তবে বাজারে বিক্রি হয়েছে ১৯০ টাকা।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পণ্যের যৌক্তিক দাম নির্ধারণ ও বাজার তদারকি সংস্থা কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) আ. গাফ্ফার খান যুগান্তরকে বলেন, অধিদপ্তর তদারকি টিম প্রতিদিন বাজারে যাচ্ছে। আমি নিজেও বাজার তদারকি করছি। পাশাপাশি আমরা তথ্য সংগ্রহ করে পণ্যের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করেছি। ওই মূল্যে পণ্য বিক্রি হচ্ছে কিনা তা দেখতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার যুগান্তরকে বলেন, অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে প্রতিদিন বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। অনিয়ম সামনে এলে সঙ্গে সঙ্গে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। তিনি জানান, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর বেশকিছু পণ্যের দাম বেড়েছে। ওই দাম যৌক্তিকভাবে বাড়ানো হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আমরা ব্যবসাবান্ধব ও ভোক্তাবান্ধব পরিবেশ চাই। তবে কেউ কারসাজি করলে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না।