নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে রোঁস্তোরায় বৈঠক বসতে অসম্মতি জানালে সেবা প্রত্যাশী এক নারীকে অশ্রাব্য-অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করার অভিযোগ উঠেছে কোম্পানীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. রতন মিয়ার বিরুদ্ধে। এমন আচরণে প্রত্যক্ষদর্শী এবং সাধারণ মানুষের মাঝে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।
শনিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে কোম্পানীগঞ্জ থানার প্রধান ফটকে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর দিন সকালে ভুক্তভোগী ওই নারীকে বাড়ি গিয়েও হুমকি দিয়ে শাসিয়ে আসেন এবং এ ঘটনা নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেন এসআই রতন।
ভুক্তভোগী ওই নারীর নাম সেতারা বেগম (৫৭), তিনি উপজেলার চরকাঁকড়া ইউনিয়নের আকবর হাজী বাড়ির মৃত আবুবক্কর ছিদ্দিকের স্ত্রী।
ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগ, ৭ মাস আগে তার ছেলে নুরনবীকে (২৭) প্রতারণা করে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সৌদি নিয়ে ৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় উপজেলার সিরাজপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মেহের আলী কামলা বাড়ির সৌদি প্রবাসী সাইফুল ইসলাম। কথা ছিল সাইফুল সৌদি নিয়ে আমার ছেলেকে আবাসিক হোটেলে চাকরি দিবে। বেতন হবে এক হাজার ৮০০ রিয়াল। কিন্তু চাকরি না দিয়ে তিন মাস একটা রুমে আটকিয়ে রাখে। গত ৭ মাসেও সে আমার ছেলেকে কোনো চাকরি দিতে পারেনি। একপর্যায়ে আকামা করার জন্য পুনরায় এক হাজার রিয়াল নেয়। এখানেও সাইফুল প্রতারণা করে আমার ছেলেকে খুরুজ লাগানো আকামা দেয়। এ কারণে কেউ তাকে আকামা দেখে কাজ দেয় না।
তিনি আরও জানান, এসব প্রতারণার অভিযোগে ১৫-২০ দিন আগে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগী বিবাদী করা হয় সৌদি প্রবাসী সাইফুল ইসলামের মা-বাবা ও স্ত্রীকে। কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি এ অভিযোগের তদন্ত করার দায়িত্ব দেন এসআই রতনকে। সমস্যার সমাধান করতে রতন আমাদের কাছে পাঁচ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে তাকে দুই হাজার টাকা দেওয়া হয়। বাকি টাকা পরে দেওয়ার কথা ছিল।
ওই ভুক্তভোগী নারী বলেন, শুক্রবার প্রথম বৈঠকে থানায় বিবাদী পক্ষের কেউ আসেনি। দ্বিতীয় বৈঠক বসার জন্য এসআই রতন বিবাদীদের বাড়িতে গিয়ে বৈঠকে বসার বিষয়ে অবহিত করে আসেন। তার পর শনিবার সন্ধ্যার দিকে এসআই রতন বাদীকে ফোন দিয়ে জানায় থানায় কোনো বৈঠক হবে না। বৈঠক হবে বসুরহাট বাজারের হক হোটেলে। এ নিয়ে অভিযোগকারী নারী রোঁস্তোরায় গিয়ে বৈঠকে বসতে অস্বীকৃতি জানালে এসআই রতন ওই নারীকে মুঠোফোনে অশ্রাব্য-অশ্লীল ভাষায় বেজায় গালাগাল করেন। তখন মুঠোফোনে ওই নারী এসআই রতনকে জানায় থানায় অভিযোগ করেছি বৈঠকও থানায় হবে। এর পর এসআই তাকে থানার গেইটে আসতে বলে। সেবা প্রত্যাশী নারী থানার গেইটের ভিতরে প্রবেশ করলে পুনরায় সে ওই নারীকে বিশ্রি ভাষায় প্রকাশ্যে সাধারণ মানুষের সামনে গালমন্দ করে। (যা লেখার অযোগ্য)। পরে ওই নারী কাঁদতে কাঁদতে থানা থেকে চলে যায়।
ভুক্তভোগী অভিযোগ করে আরও বলেন, একজন মাকে তার ছেলের সামনে প্রকাশ্যে এভাবে কোনো পুলিশ কর্মকর্তা গালিগালাজ করতে পারে। যা সভ্য সমাজে কল্পনা করা যায় না। ওই নারী আরও জানান, তিনি আতঙ্কে গত দুদিন যাবত কিছুই খাননি। এ ঘটনায় তিনি এসআই রতনের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেন বাংলাদেশ পুলিশ প্রধানের কাছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কোম্পানীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. রতন মিয়া বলেন, ওই নারী থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ করেনি। তার মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে তিনি বিষয়টি সমাধান করতে চেয়েছিলেন। তবে হোটেলে বৈঠকে না যাওয়া তিনি রাগের মাথায় একটু উত্তোজিত হয়ে ওই নারীর সঙ্গে ব্যবহার করেছিলেন বলে দাবি করেন। তবে ওই নারীর বাড়িতে গিয়ে তাকে শাসানো হয়নি এবং টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি মো. সাদেকুর রহমান বলেন, ঘটনাটি শোনার পর অভিযুক্ত এসআইকে বলেছি বদলি হয়ে এ থানা থেকে চলে যেতে।