ইউক্রেনে যেভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে ‘কামিকাজি’ বা আত্মঘাতী ড্রোন

শাহেদ-১৩৬ ড্রোন -ছবি: বিবিসি/রয়টার্স+

ইউক্রেন রাশিয়ার বিরুদ্ধে কিয়েভে বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে ‘কামিকাজি’ ড্রোন ব্যবহার করার অভিযোগ করেছে।

মনে করা হয়, রাশিয়ার এসব ড্রোনের মধ্যে রয়েছে ইরানের তৈরি শাহেদ-১৩৬ ড্রোন। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে এগুলো ব্যবহার করছে।

শাহেদ-১৩৬ ড্রোনকে রাশিয়া জেরানিয়াম-২ বলে।

এটি একধরনের উড়ন্ত বোমা।

প্রসঙ্গত, জেরানিয়াম একটি ফুলের নাম।

শাহেদ-১৩৬ ড্রোনে বিস্ফোরক ভর্তি একটি যুদ্ধাস্ত্র থাকে। এতে আক্রমণ করার নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত লক্ষ্যবস্তুর আশপাশে ঘোরাফেরা করার ব্যবস্থা রয়েছে।

ড্রোনটি লক্ষ্যবস্তুর ওপর আঘাত করলে বিস্ফোরকগুলো ফেটে যায়। এতে ড্রোনটি নিজেও ধ্বংস হয়। এ জন্যই এগুলোকে কামিকাজি বা আত্মঘাতী ড্রোন বলা হচ্ছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান শত্রুপক্ষের জাহাজসহ লক্ষ্যবস্তুর ওপর এমন আত্মঘাতী কামিকাজি হামলা চালাত। কামিকাজি শব্দটির আক্ষরিক অর্থ ‘স্বর্গীয় হাওয়া’।

শাহেদ-১৩৬-এর ডানার বিস্তৃতি প্রায় আড়াই মিটার (৮ দশমিক ২ ফুট)। এটি রাডারে শনাক্ত করা কঠিন হতে পারে।

সামরিক বিশেষজ্ঞ জাস্টিন ক্রাম্প বিবিসিকে বলেন, ‘এগুলো অনেক নিচু দিয়ে উড়ে চলে। এগুলো ঢেউয়ের মতো ঝাঁকে ঝাঁকে পাঠানো যায়। এই ড্রোনের ঝাঁক আকাশ প্রতিরক্ষা দিয়ে মোকাবেলা করা অনেক কঠিন। ’

শাহেদ-১৩৬ তুলনামূলকভাবে সস্তাও। এর দাম প্রায় ২০ হাজার ডলার।

রাশিয়ার হাতে কতটি এ জাতীয় ড্রোন আছে তা স্পষ্ট নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ইরান রাশিয়াতে কয়েক শ ড্রোন পাঠানোর পরিকল্পনা করছে। ইরান তা অস্বীকার করেছে।

ইউক্রেন ও রাশিয়ার হাতে আরো যেসব ড্রোন আছে

ইউক্রেনের প্রধান সামরিক ড্রোন হচ্ছে তুরস্কের নির্মিত বেরাকতার টিবি২। এটি একটি ছোট বিমানের আকারের। এতে রয়েছে ক্যামেরা। বেরাকতারে লেজার-গাইডেড বোমা যুক্ত করা যেতে পারে।

যুক্তরাজ্যের গবেষণা প্রতিষ্ঠান রয়াল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের (রুসি) জ্যাক ওয়াটলিং বলেছেন, যুদ্ধের শুরুতে ইউক্রেনের ‘৫০টিরও কম’ বেরাকতার ড্রোনের একটি বহর ছিল।

রাশিয়া ছোট সাধারণ ধরনের ওরলান-১০ ড্রোনও ব্যবহার করে। ক্যামেরাসজ্জিত এ ড্রোনটি ছোট বোমা বহন করতে পারে।

রাশিয়া এবং ইউক্রেন উভয় পক্ষের জন্য ড্রোনগুলোকে শত্রুর লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত করে গোলাবর্ষণের জন্য কার্যকর ভূমিকা রাখতে দেখা গেছে।

রুসির বিশেষজ্ঞ জ্যাক ওয়াটলিং বলেন, রাশিয়ার বাহিনী একটি ওরলান-১০ ড্রোন দিয়ে লক্ষ্যবস্তু খুঁজে পাওয়ার মাত্র তিন থেকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে শত্রুর ওপর কামানের হামলা শুরু করতে পারে। অন্যথায় আক্রমণ চালাতে তাদের ২০-৩০ মিনিট সময় লাগতে পারে।

মেরিনা মিরন বলেন, ড্রোন ইউক্রেনকে তার সীমিত বাহিনী আরো বেশি কাজে লাগানোর সুযোগ করে দিয়েছে।

‘আগে শত্রুর অবস্থান খুঁজতে চাইলে তাদেরকে বিশেষ বাহিনীর ইউনিট পাঠাতে হতো… এবং কিছু সেনা হয়তো হারাতেও হতো। এখন, শুধু একটি ড্রোনই হারানোর ঝুঁকি নিচ্ছে তারা’, বলেন মেরিনা মিরন।  

সূত্র : বিবিসি

LEAVE A REPLY