রাজবাড়ীতে নিষিদ্ধ জালে বিলুপ্ত হচ্ছে দেশি মাছ

ছবি: ভোরের কাগজ

# হুমকিতে জীববৈচিত্র্য

রাজবাড়ীর বিভিন্ন বিল ও নদীতে নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারি জাল দিয়ে মাছ শিকারের কারণে মা মাছ, পোনা মাছসহ জলজ প্রাণী অকালে মারা যাচ্ছে। ফলে বিলুপ্ত হচ্ছে দেশি প্রজাতির মাছ। হুমকির মুখে জীববৈচিত্র্য।

জানা যায়, মৎস্যজীবীদের কাছে নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারি বা চায়না জাল অনেক জনপ্রিয়। কারণ ৫০ থেকে ১০০ হাত লম্বা এই জাল একবার পেতে আর তুলতে হয় না। এটি নদী বা বিলের তলদেশ পর্যন্ত যায় এবং মাটির সঙ্গে মিশে থাকে। সকাল-বিকাল গিয়ে শুধু মাছ বের করে আনা হয়। ছোট থেকে বড় সব ধরনের মাছই চায়না জালে ধরা পড়ে।

এই জাল ক্ষুদ্র ফাঁসবিশিষ্ট। লোহার রিং দিয়ে খোঁপ খোঁপ আকারের বক্স তৈরি করে চারপাশ সূক্ষ জাল দিয়ে দিয়ে ঘের তৈরি করা হয়। এতে মাছের ডিমসহ ক্ষুদ্র পোনা, শামুক-ঝিনুক, জলজ পোকামাকড়, শ্যাওলা-শালুকসহ বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদ উঠে আসে। জালে ওঠে আসা অন্যান্য প্রাণী ও উদ্ভিদ মারা যায়। বিলে ও জলাশয়ে আষাঢ়ের শুরু থেকে কার্তিকের শেষ পর্যন্ত এই জাল দিয়ে মাছ ধরা হরেও গড়াই ও পদ্মা নদীতে বছরজুড়েই চায়না দুয়ারি দিয়ে মাছ ধরে জেলেরা। ফলে বিলুপ্ত হচ্ছে দেশি প্রজাতির অনেক মাছ। চায়না জালে বিভিন্ন জলজ প্রাণী একবার গেলে আর বের হতে পারে না। দীর্ঘ সময় আটকে থেকে জালের ভেতর মারা যাচ্ছে জলজ প্রাণী। এসব নিষিদ্ধ জালে মাছ ধরার কারণে মাছের স্বাভাবিক প্রজনন, বংশ বিস্তার ও বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে পানি বৃদ্ধি ও মাছের প্রজনন মৌসুমে ডিমওয়ালা চিংড়ি, পুঁটি, টেংরা, কৈ, শিং, মাগুর, শোল, টাকি, খয়রাসহ প্রাকৃতিক সব মাছ এই চায়না জালে নিধন হচ্ছে।

সরজমিন রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার গজারিয়া বিলে গিয়ে দেখা যায়, ভোর থেকেই স্থানীয় মৎস্য শিকারিরা মাছ ধরায় ব্যস্ত। সবাই মাছ ধরছে এই চায়না দুয়ারি দিয়ে। ছোট ছোট নৌকা নিয়ে বিলজুড়ে জেলেরা চায়না দুয়ারি থেকে মাছ বের করছে। পুঁটি, টেংরা, শিং, চাঁদা, খয়রা ছোট থেকে বড় সব আকারের মাছ ধরা পড়েছে দুয়ারিতে।

মাছ ধরতে আসা গহর শেখ বলেন, একটা সময় গজারিয়া বিলে প্রচুর মাছ ছিল। এখন আর তেমন নেই। আমার ১১টি দুয়ারি আছে। সকালে এসে মাছ বের করলে তিন-চারশ টাকা বিক্রি করা যায়। চায়না দুয়ারি দিয়ে মাছ ধরা নিষেধ এটা জানেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে গহর শেখ বলেন, শুনেছি নিষেধ। তবে বাজারে এই চায়না জাল বিক্রি হচ্ছে। সবাই কিনছে, মাছও ধরছে।

জেলে রিপন হালদার বলেন, বিলের আশপাশে যাদের বাড়ি সবারই তিন-চারটি করে এই চায়না জাল আছে। কয়েক বছর ধরে এই জাল দিয়েই আমরা মাছ ধরি। এই জালের কারণে মাছ কমে যাচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে রিপন বলেন, একটু তো কমছেই। কারণ আষাঢ় মাসে ছোট ছোট পুঁটি বা টেংরার পোনা ধরা পড়ছে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অভিজিৎ সোম অভি বলেন, যে প্রক্রিয়ায় চায়না দুয়ারি দিয়ে মাছ দরা হয় সেটির ফলে অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত দুই দিক দিয়েই ক্ষতি হয়। এসব কারণেই সরকার কিন্তু এ প্রক্রিয়ায় মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে। তবে জেলেরা সহজে মাছ ধরার জন্য এই চায়না দুয়ারি ব্যবহার করে। জেলেদের চায়না দুয়ারি ব্যবহার বন্ধে স্থানীয় প্রশাসনের ব্যাপক ভূমিকা রাখতে হবে। সেটি করতে না পারলে দেশি মাছ এক সময় হারিয়ে যাবে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, সরকার গেজেট করে চায়না দুয়ারি বন্ধে করেছে। তারপরও জেলেরা মাছ ধরছে এটি অস্বীকার করব না। তবে আমরা চায়না দুয়ারি বন্ধে মাঝেমধ্যেই মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করি। জেলেদের সচেতন করি।

LEAVE A REPLY