ক্রমেই তেজ হারাচ্ছে শেয়ারবাজার। কমছে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের দাম। গত সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ১৭১টি কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে। এছাড়াও স্থবির ছিল ১৭৪ কোম্পানির শেয়ারের দাম। এর অধিকাংশ ন্যূনতম মূল্যসীমায় (ফ্লোর প্রাইস) অবস্থান করছে। কিন্তু নির্দিষ্ট কিছু কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ছে। তবে বাড়ছে না প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ। ফলে বাজারে তারল্য প্রবাহ কমছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারের ভেতরে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পুঁজি উধাও হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বড় মূলধনের কিছু কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়িয়ে বাজার ইতিবাচক দেখানো হচ্ছে।
জানা যায়, বর্তমানে বাজারে তারল্য সংকট চলছে। এর অন্যতম কারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক। বাজারের নিয়মিত কিছু সমস্যার পাশাপাশি যোগ হয়েছে সামষ্টিক অর্থনৈতিক সংকট। এছাড়াও বিশ্ব অর্থনীতির মন্দার বিষয়টি সামনে এসেছে। ফলে বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে উঠছেন। গত কয়েকদিনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছিল। বাজার কোথায় দাঁড়াবে, তা অনুমেয় নয়। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছে। তবে নির্দিষ্ট কিছু কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ছে।
জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে জানান, বাজারে আস্থার সংকট দীর্ঘদিনের। এটি কাটাতে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, এখানে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। বিনিয়োগকারীদের নিশ্চয়তা দিতে হবে, কারসাজির মাধ্যমে কেউ টাকা হাতিয়ে নিলে তার বিচার হবে। পাশাপাশি ভালো কোম্পানির শেয়ারের সরবরাহ বাড়াতে হবে। তার মতে, আস্থার সংকটের সঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছে বৈশ্বিক সংকট। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধসহ সামষ্টিক অর্থনীতিতে যে সমস্যা চলছে, শেয়ারবাজারেও তার প্রভাব পড়তে পারে। তবে তার মতে, বাজারের মূল্যস্তর অনেক নিচে। ফলে এখন বিনিয়োগের সময়। হুজুগে আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি করা উচিত নয়। এতে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি।
অন্যদিকে বাজারসংশ্লিষ্ট একটি গ্রুপ বলছে ভিন্নকথা। সাম্প্রতিক সময়ে নতুন একটি সার্কুলার জারি করেছে ডিএসই। এটি হলো কোনো বিনিয়োগকারী ব্রোকারেজ হাউজে বা মার্চেন্ট ব্যাংকে চেক জমা দিলে, ওই চেকের টাকা অ্যাকাউন্টে জমা হওয়ার আগে শেয়ার লেনদেন করা যাবে। এতে লেনদেনের পরিমাণ কমছে।
বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৯৭টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ৪১টি কোম্পানির শেয়ারের, কমেছে ১৭১টি এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৭৪টি কোম্পানির শেয়ারের দাম। সপ্তাহের শুরুতে ডিএসইর ব্রড সূচক ছিল ৬ হাজার ৪৯৪ পয়েন্ট। সপ্তাহ শেষে তা ১০১ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ৩৯২ পয়েন্টে নেমে এসেছে। গত সপ্তাহে ৫ দিনে ডিএসইতে ৫ হাজার ৮০১ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ১৬০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। আগের সপ্তাহে ৪ দিনে ৪ হাজার ৮৩২ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল। প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ২৭১ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল। এ হিসাবে গত সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন বেড়েছে ৯৬৯ কোটি টাকা। তবে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন কমেছে ৪৮ কোটি টাকা। শতকরা হিসাবে যা প্রায় ৪ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে ডিএসইর বাজারমূলধন ৪ হাজার কোটি টাকা কমে ৭ লাখ ৬৯ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে। কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই নির্দিষ্ট কিছু কোম্পানির দাম লাগামহীনভাবে বাড়ছে। এর সঙ্গে একটি কারসাজি চক্র জড়িত। অন্যদিকে বহুজাতিক কোম্পানিসহ বাজারের শক্ত মৌলভিত্তির কোম্পানির শেয়ারের দাম নিচে রয়েছে।
এদিকে সপ্তাহজুড়ে শীর্ষ ১০ কোম্পানির ২ হাজার ৩৫ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা ডিএসইর মোট লেনদেনের প্রায় ৩৬ শতাংশ। একক কোম্পানি হিসাবে গত সপ্তাহে লেনদেনের শীর্ষে ছিল বেক্সিমকো লিমিটেড ৩৮৬ কোটি এবং দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ইস্টার্ন হাউজিংয়ের লেনদেন ৩৪৮ কোটি টাকা। এরপর ওরিয়ন ফার্মা ৩৩৫ কোটি, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং ২১৬ কোটি, জেএমআই সিরিঞ্জ অ্যান্ড মেডিকেল ইকুইপমেন্ট ১৫৪ কোটি, জেএমআই হাসপাতাল ১৪৭ কোটি, পেপার প্রসেসিং ১১৪ কোটি, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন ১১১ কোটি, কেডিএস এক্সেসরিস ১১০ কোটি এবং ওরিয়ন ইনফিউশনের ১০৯ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।