ভোটকক্ষে অরাজক পরিস্থিতি ছিল

গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনে ইসির বন্ধ করা কেন্দ্রগুলোর ভোটকক্ষে ‘অরাজক পরিস্থিতি’র প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। ওইসব কেন্দ্রে ইভিএমে একজনের ভোট আরেকজন দিয়ে দিয়েছে।

আচরণবিধি লংঘন করে এক প্রার্থীর পোলিং এজেন্টরা প্রতীক সংবলিত পোশাক পরে বুথে অবস্থান করাসহ নানা ধরনের অনিয়ম পেয়েছে। প্রায় অর্ধশত কেন্দ্রের প্রিসাইডিং ও সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা এসব ঘটনায় তাদের দায়ও স্বীকার করেছেন।

এছাড়া নৌকা প্রতীকের বেশ কিছু পোলিং এজেন্টকে এসব অনিয়মের ঘটনায় চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) অন্যের ভোট নিজেরাই দিয়ে দেওয়ার প্রমাণও উঠে এসেছে। এসব তথ্য-উপাত্ত উলে­খ করে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কমিটি।

ইসির বিদায়ি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকারের কাছে এ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। এসব অনিয়মের ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব ও তদন্ত কমিটির প্রধান অশোক কুমার দেবনাথ যুগান্তরকে বলেন, নির্ধারিত সময়ে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি। তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে কিনা-জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন।

গাইবান্ধা-৫ আসনে উপনির্বাচনে গত ১২ অক্টোবর ভোট হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল ও তিনজন নির্বাচন কমিশনার সিসি ক্যামেরায় ওই নির্বাচনের অনিয়ম দেখতে পেয়ে প্রথমে ৫১টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করেন। দুপুর আড়াইটায় পুরো নির্বাচনই বন্ধ করে দেন।

এ ঘটনায় ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। গতকাল কমিটির প্রতিবেদন জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল। এদিন অফিস সময় শেষে রাতে কমিটি কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়।

তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা গেছে, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এবং নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও স্থানীয়দের বক্তব্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। ৫০ পৃষ্ঠার বেশি এ প্রতিবেদনের সঙ্গে সংযুক্তি রয়েছে কয়েকশ পৃষ্ঠা।

এ নির্বাচনে ১৪৫টি কেন্দ্র থাকলেও শুধু ৫১টি কেন্দ্রের অনিয়মের তদন্ত করা হয়েছে। ফলে বাকি সব কেন্দ্রে অনিয়ম হয়েছিল কিনা-সে বিষয়ে অস্পষ্টতা রয়েই গেছে। যদিও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ওইসব কেন্দ্রে অনিয়ম হয়নি বলে দাবি করে আসছে।

তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ভোটকেন্দ্রের নাম উলে­খ করে বলা হয়েছে-এসব কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা বাদে অন্যদের বক্তব্যে প্রমাণ হয় ভোটকক্ষে অরাজক পরিস্থিতি ছিল। এতে নৌকা প্রতীকের পোলিং এজেন্টদের নামের তালিকা উলে­খ করা হয়েছে। ভোটে অনিয়মের ঘটনায় তাদের কী ধরনের ভ‚মিকা ছিল-তারও বিবরণ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তারা জবানবন্দিতে কী কী বক্তব্য দিয়েছেন তাও তুলে ধরেছে কমিটি।

আরও জানা গেছে, ভোটকেন্দ্রের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে এসব পোলিং এজন্টকে শনাক্ত করা হয়েছে। এছাড়া নির্বাচনে অনিয়মের ঘটনায় পোলিং এজেন্টদের তালিকাসহ বিভিন্ন ধরনের নথিপত্র সিলগালা অবস্থায় থাকায় সেগুলো পরীক্ষা করতে পারেনি কমিটি। ওইসব নথিপত্র পরীক্ষা ছাড়াই এ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

কমিটি সূত্রে জানা গেছে, তদন্ত কার্যক্রমে গাইবান্ধার ডিসি, এসপিসহ ৬২২ জন প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও পোলিং এজেন্টদের বক্তব্য নিয়েছে কমিটি। তাদের প্রায় বেশিরভাগই নির্বাচনের দিন ভোটগ্রহণের পরিবেশ ভালো ছিল এবং কোনো অনিয়ম ছিল না বলে কমিটির কাছে দাবি করেছে। তবে ওইসব ভোটকেন্দ্রের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ তাদের দেখানোর পর অনেকেই অনিয়মের কথা স্বীকার করেছেন। কেউ কেউ এটাকে স্বাভাবিক ভোটের চিত্র বলেও কমিটিকে বক্তব্য দিয়েছেন। তদন্ত প্রতিবেদনে ওইসব বক্তব্য উলে­খ করা হয়েছে।

এছাড়া সাঘাটা উপজেলার অনেক প্রিসাইডিং কর্মকর্তা তাদের বক্তব্যে সাদা কাগজে ভোটের পরিবেশ ভালো থাকার পরও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার নির্দেশে ভোট বন্ধ করার বিষয়টি উলে­খ করে বক্তব্য দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরদার মোস্তফা শাহিনের নির্দেশে ওই লিখিত দিয়েছেন বলে বক্তব্য দিয়েছেন।

তদন্ত কমিটি সূত্র জানায়, যেসব কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া সামনের নির্বাচনগুলোতে সিসি ক্যামেরা স্থাপনেরও সুপারিশ এসেছে।

LEAVE A REPLY