চট্টগ্রাম নগরীর পলোগ্রাউন্ডে ১২ অক্টোবর বড় সমাবেশ ঘটিয়ে শক্তির মহড়া দেখিয়েছিল বিএনপি। বিভাগীয় ওই গণসমাবেশ থেকে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একদফা দাবি জানান। আর তা হলো সরকারের পদত্যাগ। একই সঙ্গে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটানোর হুমকিও দেন তিনি।
এই সমাবেশের পর উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন দীর্ঘদিন বড় পরিসরে সমাবেশ করতে না পারা বিএনপি নেতাকর্মীরা। দলে ফিরে এসেছে চাঙাভাব। বিএনপি নেতাকর্মীরা মনে করছেন, বিশাল শোডাউনের মাধ্যমে তারা রাজপথে শক্তিমত্তা জানান দেওয়ার পাশাপাশি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন। চট্টগ্রামের পর কয়েকটি বিভাগীয় শহরেও বড় সমাবেশ করেছে বিএনপি, যা রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়িয়ে দিয়েছে।
এসব সমাবেশের অনুপ্রেরণা ছিল পলোগ্রাউন্ডের ব্যাপক জনসমাগম। বিএনপি নেতাদের কেউ কেউ এমনও বলছেন, আওয়ামী লীগের পক্ষে পলোগ্রাউন্ডে তাদের মতো জনসমাবেশ ঘটানো সম্ভব হবে না। এদিকে এমন পরিস্থিতিতে বিএনপিকে রাজপথ বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দিতে রাজি নয় আওয়ামী লীগ। পালটা জাবাব হিসাবে তারাও একই ভেন্যু অর্থাৎ পলোগ্রাউন্ডে ৪ ডিসেম্বর বড় জনসমাবেশের আয়োজন করতে যাচ্ছে। এতে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী নির্বাচনকে ঘিরে দলের নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করে তোলা এবং রাজপথে সরকারবিরোধী আন্দোলন মোকাবিলা করতে শক্তির মহড়া প্রদর্শন এই সমাবেশের মূল লক্ষ্য।
এখনো এক মাসের বেশি সময় বাকি থাকলেও এরই মধ্যে সমাবেশ ঘিরে আওয়ামী লীগের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। পলোগ্রাউন্ডে স্মরণকালের সর্ববৃহৎ উপস্থিতি ঘটাতে চায় তারা। ১০ লাখ মানুষের সমাগম ঘটিয়ে বিএনপিকে দেখিয়ে দিতে চায় আওয়ামী লীগ-এমন আভাস মিলেছে বিভিন্ন সূত্রে। সোমবার ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে জাসদের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ফখরুল সাহেবদের দাওয়াত দিচ্ছি, ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম আসুন। লোক কাকে বলে, জনসমুদ্র কাকে বলে, দেখেননি তো!’
চট্টগ্রামের সমাবেশে বিএনপি ১০ লাখ লোক জমায়েতের টার্গেট করে ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘চট্টগ্রামে আপনাদের সমাবেশে কত লোক ছিল? যে কোনো নিরপেক্ষ মানুষ বলবে ৭০ থেকে ৮০ হাজার। ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে পলোগ্রাউন্ডে আমাদের জনসভা জনসমুদ্র হবে। আপনারা ১০ লাখ লোক মুখে বলবেন, আর আমরা বাস্তবে দেখাব।’
জনসভা সফল করতে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতারা সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছেন। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ সালাম প্রস্তুতি প্রসঙ্গে যুগান্তরকে বলেন, ‘প্রস্তুতি উপলক্ষ্যে আমরা প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় মিটিং করব। ৯ নভেম্বর নগরীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে চট্টগ্রাম নগর, দক্ষিণ ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের যৌথ প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে কেন্দ্রীয় নেতারাও উপস্থিত থাকবেন। তারা প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবেন। মাসব্যাপী জেলা ও উপজেলার ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়ে মিটিং করা হবে।’
উপস্থিতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘এটা স্মরণকালের সেরা জনসমাবেশ হবে। এই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। মাঠ পূর্ণ হয়ে আশপাশের সড়কেও হাজার হাজার মানুষ অবস্থান নেবে। গোটা এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হবে। পলোগ্রাউন্ডে অতীতে এ পর্যন্ত যত বড় সমাবেশ হয়েছে, সেগুলোর রেকর্ড ভঙ্গ করা আমাদের টার্গেট। উপস্থিতি ১০ লাখ কিংবা তার চেয়ে বেশিও হতে পারে।’
সর্বশেষ ২০১২ সালের ২৮ মার্চ চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডে আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের মহাসমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দীর্ঘ এক দশক পর ৪ ডিসেম্বর সেই একই মাঠে জনসভায় প্রধান অতিথি হিসাবে তিনি বক্তব্য দেবেন। এর আগে ২০১১ সালে পলোগ্রাউন্ডে বড় সমাবেশ করেছিল বিএনপি। তাতে উপস্থিত ছিলেন দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ওই সমাবেশে মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে আশপাশের সড়ক ছাড়িয়ে সিআরবি এলাকা পর্যন্ত লোকসমাগম হয়েছিল।
২৯ অক্টোবর সন্ধ্যায় নগরীর দারুল ফজল মার্কেটস্থ কার্যালয়ে নগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশকে জনসমুদ্রে পরিণত করা হবে বলে মন্তব্য করেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন।
সভায় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামবাসীর উদ্দেশে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য এবং আশা-ভরসার নির্দেশনা দেবেন। এ লক্ষ্যে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। শুধু বড় সমাবেশ নয়, সর্বজনের অংশগ্রহণে একটি বিশাল জনসমুদ্রে পরিণত করা হবে।’ তিনি নীতি-আদর্শ এবং শৃঙ্খলাকে সামনে রেখে তৃণমূলস্তরের নেতাকর্মীদের শান্তিপূর্ণভাবে এই সমাবেশে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান।
সভায় শিক্ষা উপমন্ত্রী ও কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘৪ ডিসেম্বর জননেত্রী শেখ হাসিনার জনসভাকে জনসমুদ্রে পরিণত করতে সবাইকে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে।’