আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)
অর্থনৈতিক চাপে থাকা বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি সংস্থার সঙ্গে সিরিজ বৈঠক করছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। আন্তর্জাতিক এই দাতাগোষ্ঠীর প্রতিনিধি দল গতকাল সোমবার পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ একচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ও বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সঙ্গে বৈঠক করে। এসব বৈঠকে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর চলমান কার্যক্রমের সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ।
বিএসইসির সঙ্গে বৈঠকে আইএমএফের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা পুঁজিবাজারের অবকাঠামো সংস্কারের সঙ্গে অটোমেশন কার্যক্রম জোরদার করার পরামর্শ দেন। বৈঠক শেষে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল সকাল সাড়ে ১০টায় বিএসইসিতে আসে। বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের সঙ্গে বৈঠক করে আইএমএফ। এটি একটি রুটিন বৈঠক। আইএমএফ যতবার বাংলাদেশে আসে প্রতিবার কমিশনের সঙ্গে বসে।
তিনি জানান, গতকালের বৈঠকে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে বিএসইসির উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় অটোমেশন বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। তবে ফ্লোর প্রাইস নিয়ে কথা হয়নি। ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের ব্যাপারে তারা খুব সন্তোষ প্রকাশ করেছে। এটা একটি ভালো উদ্যোগ বলে জানিয়েছেন তারা। এটা বাজার উন্নয়নে অনেক ভূমিকা রাখবে বলে তারা কমিশনকে ধন্যবাদ জানায়।
রেজাউল করিম জানান, রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট (রিটস) এ ধরনের প্রোডাক্ট ডেরিভেটিভসহ নতুন নতুন পণ্য কীভাবে আনা যায় সে বিষয়ে তারা সার্বিক সহযোগিতা করবে বলে জানিয়েছে। এসব বিষয়ে আরো বেশি উদ্যোগ নেয়ার জন্য তারা বিএসইসিকে অনুরোধ করেছে। এছাড়া কমোডিটি এক্সচেঞ্জসহ পুঁজিবাজার অবকাঠামো উন্নয়নে তারা কারিগরি সহযোগিতা করবে। বিএসইসি যে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ নিয়ে কাজ এগিয়েছে সেটা নিয়ে তারা সন্তোষ প্রকাশ করেছে। এছাড়া পরিবেশবান্ধব বন্ড বাজারে আনতে এবং এ ধরনের বন্ডের চাহিদা ও জোগান বাড়াতে তারা সহযোগিতা করতে চেয়েছে। তবে আইএমএফ কোনো সুপারিশ করেনি। তারা মূলত দেশের পুঁজিবাজার উন্নয়নে রিস্ক ম্যানেজমেন্টসহ অবকাঠামো উন্নয়নে কথা বলেছে। এছাড়া তারা অটোমেশনের ওপর জোর দিয়েছে।
ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, গতকাল আইএমএফের এশিয়া অঞ্চলের প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিবের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছে। বৈঠক শেষে ইআরডি সচিব শরিফা খান সাংবাদিকদের সঙ্গে দেখা করেননি। এমনকি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতেও রাজি হননি।
প্রতিনিধির মাধ্যমে শরিফা খান জানান, আইএমএফ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে এটা ছিল কার্টেসি কল। তারা তেমন কোনো বিষয় নিয়ে কথা বলেনি। তবে ইআরডির একাধিক কর্মকর্তা জানান, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছে। এ সময় আইএমএফের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বলেন, পাইপলাইনে প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলারের মতো জমা আছে। সেখান থেকে অর্থ খরচ বাড়াতে হবে। মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর প্রকল্প বাস্তবায়নের দক্ষতা বাড়ানো দরকার। সেইসঙ্গে বিভিন্ন চুক্তির ক্ষেত্রে ইআরডির দক্ষতাও বাড়াতে হবে। বৈদেশিক ঋণ ব্যবস্থাপনা এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়গুলোর সমন্বয় বাড়ানোর কথাও বলেছে প্রতিনিধি দল। একই সময়ে বিনিয়োগ কর্তৃপক্ষের (বিডা) সঙ্গেও বৈঠক করেছেন আইএমএফের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।
এর আগে গত রবিবার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সঙ্গে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম কীভাবে বাড়ানো হয়, আর বছরে কতবার দাম বাড়ানো যাবে এবং গ্যাসের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কেও জানতে চায় আইএমএফ।