চাঁদাবাজদের কাছে জিম্মি মালিক ও চালকরা

চাঁদাবাজদের কাছে জিম্মি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এবং রাজধানীর ডেমরা, যাত্রাবাড়ী ও বাগানবাড়িসহ আশপাশের এলাকার যাত্রীবাহী বাস মালিক ও চালকরা। তাছাড়া সড়কে সিটি টোলের নামে সব পরিবহণ থেকে ২৪ ঘণ্টা চাঁদা আদায় করায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন তারা।

এ ছাড়াও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দূরপাল্লার বেনামি পরিবহণেও চাঁদাবাজদের বেপরোয়া চাঁদাবাজির কারণে সাধারণ পরিবহণ মালিক ও চালকদের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। কারণ চাঁদা না দিলেই ট্রাফিক পুলিশের মাধ্যমে মামলা ঠুকে দেওয়া হয়। আর ওইসব চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে ডাকাতি, ছিনতাই, চুরি, মাদক, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও অপহরণসহ নানা অভিযোগ থাকলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে এসব প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয় না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। এদিকে এসব চাঁদাবাজি র‌্যাব, গোয়েন্দা পুলিশ, ট্রাফিক ও থানা পুলিশের ডাকের ডগায় ঘটছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, রাজধানীর সায়েদাবাদ থেকে ছেড়ে আসা মদনপুর, সোনারগাঁ, দূরপাল্লার হোমনা, দাউদকান্দি, কুমিল্লা, গৌরীপুর, লাকসাম ও চাঁদপুরসহ নামে বেনামে অন্তত ১৫টি রুটে চলা অন্তত ২০০ যানবাহন থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চিটাগাং রোডে চাঁদা আদায় করছে কিছু চাঁদাবাজ। এ ক্ষেত্রে বোরাক, শ্রাবণ, হিমালয়, মেঘলা ও বাঁধনসহ আড়াই শতাধিক বাস থেকে প্রকাশ্যে ৮০ টাকা নিচ্ছে চিহ্নিত ওই চাঁদাবাজরা। এদের মধ্যে আন্তঃজেলা ডাকাত নামে খ্যাত রাজুর নেতৃত্বে চিহ্নিত চাঁদাবাজ ইয়াসিন, ইসমাইল, সেন্টু, ভুট্টু, আলমগীর ওরফে আলীসহ কয়েকজন পুলিশের সামনেই ওপেন চাঁদাবাজি করছে।

জানা যায়, ওইসব চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট ও চক্রের মাধ্যমে গাড়ি ছিনতাই ও চুরি, গাড়ির চাকা খুলে ফেলা, চাঁদা না দিলে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও মোবাইল নিয়ে চালক ও মালিকদের জিম্মি করা, রাতে বাসে ডাকাতি, ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে বের হওয়া ব্যক্তিদের মাইক্রোবাসে তুলে টাকা নিয়ে অন্যত্র ফেলে দেওয়া, পথিকদের কাছ থেকে ছিনতাই করাসহ মাদক বিক্রি ও নানা অপরাধ করে। এদের বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ও র‌্যাব-১১ বরাবর একাধিক অভিযোগসহ মামলা রয়েছে। তবে প্রায়ই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের গ্রেফতার করলেও দ্রুত ছাড়া পেয়ে পরবর্তীতে একই কাজে লিপ্ত হয় তারা।

এ বিষয়ে র‌্যাব-১১ এর সিও লে. কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা মোবাইল ফোনে বলেন, পরিবহণ চাঁদাবাজ, কিশোর গ্যাং ও অন্যান্য দৃশ্যমান অপরাধীর বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকে। এরই মধ্যে আমরা পরিবহণ চাঁদাবাজ গ্রেফতার করেছি। তবে আমাদের উপস্থিতি টের পেলে চাঁদাবাজরা স্থান ত্যাগ করে। তার পরও তদন্তসাপেক্ষে অভিযুক্তদের প্রতিরোধে আমরা জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করে আইনের আওতায় আনব।

সরেজমিন আরও দেখা গেছে, ডেমরা-রামপুরা সড়কসহ কোনাপাড়া ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় সিটি টোল হিসাবে ৩০ টাকার রশিদের মাধ্যমে ছোট পিকআপ থেকে ৩০ টাকা, যাত্রীবাহী বাস থেকে ৬০ টাকা, বড় গাড়ি থেকে ৬০ টাকা যা নিষিদ্ধ, সিএনজি থেকে ১০ টাকা আদায় করে চাঁদাবাজরা। একই সঙ্গে রাত ও দিনে বড় পণ্যবাহী ট্যাংকলরি ও যানবাহন থেকে ২০০ থেকে ৮০০ টাকা আদায় করছে যা একেবারেই নিষিদ্ধ।

এ বিষয়ে ওয়ারী ট্রাফিক বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোস্তাক আহমেদ মোবাইল ফোনে যুগান্তরকে বলেন, যাত্রাবাড়ী ও ডেমরার স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় সিটি টোলের নামে চাঁদাবাজির বিষয়টিকে থানা পুলিশ ও ট্রাফিক বিভাগকে সমন্বয়ভিত্তিক দেখতে হবে। হাইকোর্টের নির্দেশ মতে সড়কে বা মহাসড়কে কোনো প্রকার চাঁদা আদায়ের বিধান নেই, তাই সড়কে সব ধরনের চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে।

জানা যায়, রাজধানীর ডেমরা থেকে শহরের কয়েকটি রুটে চলা আসমানী, রাজধানী, অছিম ও স্বাধীন নামের প্রায় আড়াইশ’ যাত্রীবাহী বাস থেকে ওইসব পরিবহণের পরিচালকরাই ৮০০ থেকে ১২শ’ টাকার উপর চাঁদাবাজি করছে যা এখন ওপেন সিক্রেট। পাশাপাশি মেরাদিয়া বাগানবাড়ী থেকে গাবতলী, নিউমার্কেট, ঝিকাতলা, শ্যামলী, মিরপুরসহ কয়েকটি রুটে চলা রবরব, তরঙ্গ, রমজান ও আলিফ পরিবহন সেক্টরেও একইভাবে চলছে চাঁদাবাজি। এ বিষয়ে আসমানি পরিবহণের চালক মো. ওমর জানান, তাদের কর্তৃপক্ষই জোরপূর্বক পাঁচটি পয়েন্ট থেকে বাসপ্রতি মাসে ৩৭ হাজার টাকা আদায় করে। আমরা অর্ধেক টাকা দিতে চাইলেও তারা মানছে না। আমাদের জিম্মি রেখে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। মোট কথা পরিবহণ সেক্টরে চাঁদা না দিলেই কর্তৃপক্ষের লোকজন সড়কে মামলা হামলার ভয় দেখায়।

এ বিষয়ে ঢাকা সড়ক পরিবহণ বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ মোবাইল ফোনে জানান, আমরা কোনো অন্যায়কে সমর্থন করি না। চাঁদা আদায়ের বিষয়টি ভুক্তভোগীরা সমিতির কাছে লিখিতভাবে জানালে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নেব।

এ বিষয়ে র‌্যাব-১০ এর অধিনায়ক (এডিশনাল ডিআইজি) মো. ফরিদ উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, সিটি টোলের নামে অনুমোদন ছাড়া সড়ক-মহাসড়কে চাঁদাবাজি করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। পাশাপাশি পরিবহণ সেক্টর থেকে সড়কে যেকোনো প্রকার চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে র‌্যাব তদারকি বা ছায়াতদন্ত করছে। আর দোষীদের ব্যাপারে জরুরি ভিত্তিতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

LEAVE A REPLY