জলবায়ু সম্মেলন: ক্ষয়ক্ষতির প্রশ্নে চুক্তির প্রত্যাশা

জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে ক্ষতিপূরণ ও নিঃসরণ হ্রাসে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে কার্যকর তহবিল গঠনে আন্তর্জাতিক চুক্তির বিষয়ে জলবায়ু সম্মেলনের শেষ দিনে শনিবার মতৈক্যের কাছে পৌঁছে। যথেষ্ট অগ্রগতি না হওয়ায় সম্মেলন একদিন বাড়ানো হয়েছিল।

বিবিসির ভাষ্যমতে, শনিবার বাংলাদেশ সময় রাত ১১ টা পর্যন্ত বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি। অন্যদিকে সন্ধ্যার পর বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে ক্ষয়ক্ষতির (লস অ্যান্ড ড্যামেজ) বিষয়ে তহবিল গঠনের চুক্তি দীর্ঘ অচলাবস্থার পর সমাধানে পৌঁছেছে।

চুক্তির সম্ভাবনার কথা জানার পর উন্নয়নশীল দেশগুলো তাদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে। মিশরের শারম এল শেখে কপ-২৭ সম্মেলনে উপস্থিত হওয়া আফ্রিকার দেশ গিনির প্রতিনিধি আলফা উমর কালোগা বলেন, ‘এটি খুবই অসাধারণ মুহূর্ত। ৩০ বছরের ধৈর্য্য, ৩০ বছরের সংগ্রাম এবং ৩০ বছর ধরে স্বীকৃতি ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানোর পর এটি সম্ভব হয়েছে। ’

তবে চুক্তিটির খসড়া প্রকাশের পর বিবিসি দাবি করেছে, এতে কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের বিষয়ে দিকনির্দেশনার অভাব রয়েছে। ইইউ এ বিষয়টি নিয়ে বেশ নাখোশ ছিল। তাত্পর্যপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে কপ২৬ সম্মেলনে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল যে, কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের পরিকল্পনা প্রতি বছর নবায়ন করতে হবে। কিন্তু কপ২৭ সম্মেলনে সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষার মতো কিছু নেই। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতেও কোনো ব্যবস্থার কথা বলা হয়নি। এ ছাড়া নতুন খসড়া চুক্তিতে কারা, কীভাবে অর্থায়ন করবে- সেই সম্পর্কে কোনো সুনির্দিষ্ট কথা বলা হয়নি।

এর আগে চুক্তি সম্পাদন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, কপ২৭ সম্মেলনে ইইউ আলোচক ফ্রান্স টিমারম্যান্স সাংবাদকিদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা কোনো খারাপ চুক্তি করার চেয়ে বরং কোনো চুক্তিতেই যাবো না। ’ এ সময় তিনি আরও বলেছিলেন, ইইউ এমন কোনও চুক্তি করবে না যাতে উষ্ণায়ন দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখার লক্ষ্য হারিয়ে যায়। উল্লেখ্য, উষ্ণায়নের লাগাম টানতে ২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু চুক্তি এবং গত বছর স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে কপ সম্মেলনের প্রতিশ্রুতিতে এ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়।

এর আগে উন্নয়নশীল দেশের ক্ষতিপূরণের দাবি পূরণে এবং কার্বন নিঃসরণ কমাতে একটি খসড়া প্রস্তাব উত্থাপন করেছিল মিশর। ওই চুক্তিতে সাড়া দেওয়ার নিয়ে দেন-দরবার চলছিল।

এ বিষয়ে মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং চলতি কপের সভাপতি সামেহ শুকরি বলেন, তিনি সম্ভাব্য চুক্তিটির গুরত্বপূর্ণ অগ্রগতি নিয়ে এখনও আশাবাদী। সম্ভাব্য চুক্তির খসড়াকে তিনি সবার জন্য ‘ভারসাম্যপূর্ণ’ বলে দাবি করেন।

খবরে আরও বলা হয়, ইইউ বিনা শর্তে ওই ধরনের কোনো চুক্তিতে যেতে রাজি ছিল না। ইইউ এর আশঙ্কা ছিল, চুক্তির পর বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখতে যে বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতি রয়েছে, সেটি অবজ্ঞা করা হতে পারে।

ইইউ আপত্তি জানিয়ে আরো বলেছিল যে, চীন এবং ভারত এখন আর উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে পড়ে না। এ দুটি দেশ এখন বিশ্বের অন্যতম বড় দুই অর্থনীতি এবং গ্রিন হাউস গ্যাসের অন্যতম প্রধান নিঃসরণকারী। এ ছাড়া বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় চীন, ভারত, ইন্দেনেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, সৌদি আরবের সঙ্গে মালদ্বীপ, মালি কিংবা মৌরিতানিয়া একই অবস্থানে থাকতে পারে না। সূত্র: এএফপি, গার্ডিয়ান, বিবিসি

LEAVE A REPLY