বিশ্ববাজারে দাম দুই মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন

ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম কমে দুই মাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারজুুড়ে জ্বালানি তেলের সরবরাহ সংকট শিথিল হওয়ার আভাস মিলেছে। তার ওপর চীনে পণ্যটির চাহিদা আরো কমার আশঙ্কা এবং ডলারের মূল্যবৃদ্ধি জ্বালানি তেলের বাজারে নিম্নমুখী চাপ তৈরি করেছে।

সোমবার (২২ নভেম্বর) আইসিই ফিউচারসে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের দাম ৭৪ সেন্ট বা দশমিক ৮ শতাংশ কমেছে। প্রতি ব্যারেলের মূল্য স্থির হয়েছে ৮৬ ডলার ৮৮ সেন্টে।

অন্যদিকে, নিউইয়র্ক মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জে ডিসেম্বরে সরবরাহ চুক্তিতে মার্কিন বাজার আদর্শ ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম ৬৮ সেন্ট বা দশমিক ৯ শতাংশ কমেছে। প্রতি ব্যারেলের মূল্য স্থির হয়েছে ৭৯ ডলার ৫২ সেন্টে। গত শুক্রবার উভয় বাজার আদর্শের দাম লক্ষণীয় মাত্রায় কমে যায়, যা ছিল ২৭ সেপ্টেম্বরের পর সর্বনিম্ন। এ নিয়ে টানা দ্বিতীয় সপ্তাহের মতো পণ্যটির বাজার সর্বনিম্ন রয়েছে। এর মধ্যে ব্রেন্টের সাপ্তাহিক দাম ৯ শতাংশ এবং ডব্লিউটিআইয়ের ১০ শতাংশ কমেছে।

সিএমসি মার্কেটসের বিশ্লেষক টিনা টেং বলেন, সপ্তাহান্তে চীনে কভিডজনিত বিধিনিষেধের কারণে চাহিদা কমে যাওয়ার পাশাপাশি মার্কিন ডলারের মূল্যবৃদ্ধিও জ্বালানি তেলের বাজার নিম্নমুখী হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে।

সম্প্রতি সব শীর্ষ অর্থনীতির দেশে মন্দার আশঙ্কা তীব্র হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে যুক্তরাজ্য ও ইউরো জোন বেশি ঝুঁকিতে। এমন পরিস্থিতিতে সরবরাহ সংকটের উদ্বেগ কমেছে। কারণ মন্দা পরিস্থিতির মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই জ্বালানি পণ্যটির চাহিদা কমবে। অন্যদিকে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ আবারো ৭৫ বেসিস পয়েন্টে সুদের হার বাড়াতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা জ্বালানি তেলের দামকে আরো নিম্নমুখী করে তুলবে।

আগামী ৫ ডিসেম্বর থেকে রুশ জ্বালানি তেলের ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। তার আগেই এ অঞ্চলের পরিশোধন কেন্দ্রগুলো পর্যাপ্ত মজুত নিশ্চিত করেছে। ফলে ইউরোপে সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেছে।

অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা বৃদ্ধির হার আরো শ্লথ হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পণ্যটির চাহিদা প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস আবারো কমিয়েছে ওপেক। এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত এ নিয়ে টানা পাঁচবার পূর্বাভাস কমানো হলো। চলতি বছরের পাশাপাশি আগামী বছরের পূর্বাভাসও কমানো হয়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং সুদের হার বৃদ্ধিসহ বিশ্ব অর্থনীতিতে পাহাড়সম চ্যালেঞ্জের কারণেই মূলত চাহিদায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

সম্প্রতি মাসভিত্তিক এক প্রতিবেদনে ওপেক জানায়, চলতি বছর অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা দৈনিক ২৫ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেল বা ২ দশমিক ৬ শতাংশ করে বাড়বে। আগের তুলনায় চাহিদা পূর্বাভাস দৈনিক এক লাখ ব্যারেল করে কমানো হয়েছে।

প্রতিবেদনটিতে ওপেক জানায়, বিশ্ব অর্থনীতি ভয়াবহ অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। চলতি প্রান্তিকে (অক্টোবর-নভেম্বর) পরিস্থিতি আরো জটিল আকার ধারণ করতে পারে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি, শীর্ষ অর্থনীতির কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর মুদ্রানীতি সংকোচন, শ্রমবাজারে সংকট, সরবরাহ চেইনে অব্যাহত প্রতিবন্ধকতাসহ নানা বিষয় নিম্নমুখী ঝুঁকি তৈরি করেছে।কেএইচ 

LEAVE A REPLY