বিশ্বকাপের মঞ্চে ছোট দলের বড় চমক

    বিশ্বকাপ মানেই উন্মাদনা। হোক ক্রিকেট কিংবা ফুটবল। যেখানে সবার প্রত্যাশা থাকে জিতবে বড় দলগুলো। তবে বিশ্বকাপটা যেমন উপভোগের তেমনি এই টুর্নামেন্টে নানা সময় ঘটে নানা অঘটন। প্রায় প্রতিটি বিশ্বকাপেই এমন কিছু ঘটনার সাক্ষী হয় ক্রিড়াপ্রেমীরা। এ পর্যন্ত ফুটবলের ২১টি বিশ্বকাপ আসর হয়েছে। আর তাতে কম অঘটন দেখেনি বিশ্ব। গতকাল ২২তম আসরেরও প্রথম অঘটন দেখলো ফুটবলবিশ্ব।

    সোমবার রাতে বিশ্বকাপে অন্যতম শিরোপার দাবিদার আর্জেন্টিনা হেরে গেছে সৌদি আরবের কাছে। তাতেই ছোট দল হিসেবে চমক দেখিয়েছে এশিয়ার এই দেশটি। লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে ২-১ গোলে জিতে চমকের জন্ম দেয় দেশটি। শক্তি-সামর্থ্য, ঐতিহ্য, সাফল্য সবদিক থেকেই সৌদি আরবের চেয়ে যোজন-যোজন ব্যবধানে এগিয়ে আর্জেন্টিনা। প্রথমার্ধে একটি গোল হজম করলেও দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর ৫ মিনিটের ব্যবধানে বিশ্বকে চমকে দেয় সৌদি আরব। মাত্র ৫ মিনিটের ব্যবধানে সালেহ আলসেহরি ও সালেম আল দাওসারির গোলে ২-১ গোলে এগিয়ে যায় সৌদি আরব। এতেই ছোট দল হিসেবে বিশ্বকাপের এই আসরে চমক দেখায় সৌদি আরব।

    এর আগে ২০১৮ বিশ্বকাপে ২০১৪ বিশ্বকাপের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হিসেবে রাশিয়ার বিশ্বকাপে আসে জার্মানি। গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে জার্মানদের প্রতিপক্ষ ছিল মেক্সিকো। সেই ম্যাচের ৩৪ মিনিটে কাউন্টার অ্যাটাক থেকে চাকি লোজানোর গোলে এগিয়ে যায় মেক্সিকো। এরপর শত চেষ্টা করেও ম্যাচে ফিরতে পারেনি জার্মানি। গ্রুপপর্বের প্রথম ম্যাচে হারের পর শেষ ম্যাচেও দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে ২-০ গোলে হেরে প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নেয় জোয়াকিম লোর শিষ্যরা।

    আগের দুই বিশ্বকাপের মতোই ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের গ্রুপপর্বে বাদ পড়ার ধারাও বজায় রাখে জার্মানি। ছোট দল হিসেবে চমক দেখায় দক্ষিণ কোরিয়া। ২০০২ সালের বিশ্বকাপে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে হারিয়ে দেয় সেনেগাল। বিশ্বকাপ ফুটবলের অন্যতম সেরা চমকের একটা বলা হয় এ ম্যাচকে। ১৯৯৮ সালের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স গ্রুপপর্বের ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল নবাগত সেনেগালের। টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচে পাপ বোবা দিওপের একমাত্র গোলে হেরে বসে চ্যাম্পিয়নরা। নতুন এবং ছোট দল হিসেবে বিশ্বকাপের মঞ্চে চমক দেখায় সেনেগাল।

    এর আগেও ছোট দলের কাছে হেরে গিয়েছিল আর্জেন্টিনা। ১৯৯০ বিশ্বকাপে আগের আসরের চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে দিয়েছিল ক্যামেরুন। বিশ্বকাপে সেবারই প্রথম সুযোগ পেয়েছিল ক্যামেরুন। ডিয়েগো ম্যারাডোনার নেতৃত্বাধীন আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয় পেয়েছিল ১-০ গোলে। দ্বিতীয়ার্ধের ৬৭ মিনিটে ম্যাচের জয়সূচক গোলটি করেছিলেন ফ্রান্সিস ওমাম-বিয়িক। চমকে দিয়েছিল ফুটবল বিশ্বকে।

    ১৯৮২ বিশ্বকাপে পশ্চিম জার্মানিকে হারিয়ে চমক দেখিয়েছিল আলজেরিয়া। বিশ্বকাপে নতুন দল মানেই চমক। সে ঐতিহ্য রক্ষা করতেই টুর্নামেন্টে নিজেদের প্রথম ম্যাচে শিরোপার দাবিদার জার্মানিকে হারিয়ে অঘটন ঘটায় আফ্রিকার দেশ আলজেরিয়া। চমক দেয় ফুটবলপ্রেমীদের। ১৯৬৬ বিশ্বকাপে ইতালিকে হারিয়ে চমক দেয় উত্তর কোরিয়া। সেবারই প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে এসেছিল উত্তর কোরিয়া। এখন পর্যন্ত সেটাই তাদের সর্বোচ্চ সাফল্যও।

    কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল এশিয়ার দেশটি। প্রথম ম্যাচে সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে পরাজয়, দ্বিতীয় ম্যাচে চিলির বিপক্ষে ড্র আর শেষ ম্যাচ ইতালির বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয় দিয়ে আজ্জুরিদের গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায় করে দিয়েছিল দলটি। ১৯৫০ বিশ্বকাপে শৌখিন দল পাঠিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। ইউরোপ আর দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবল পরাশক্তিদের বিপক্ষে লড়াই করতে পারবে না বলেই ভেবেছিল তারা।

    গ্রুপপর্বের ১ম ম্যাচে স্পেনের কাছে ৩-১ গোলের হার। ২য় ম্যাচে তারা মুখোমুখি হয় ইংল্যান্ডের। ইংল্যান্ড তখন স্বীকৃতভাবেই বিশ্বের সেরা দল। সেই দলকেই কিনা মার্কিনিরা হারিয়ে দেয় ১-০ গোলে। ম্যাচের প্রথম ১৫ মিনিটেই ইংল্যান্ড গোলমুখে ৬টি শট নেয়। যুক্তরাষ্ট্রের গোলকিপার ফ্র্যাংক বোরগি অসাধারণ কয়েকটি সেভ করেন। ছোট দল হিসেবে চমক দেখায় যুক্তরাষ্ট্র।কেএইচ 

    আরও পড়ুন

    LEAVE A REPLY