অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠছে ৮% জীবাণু

ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ বেশ কিছু রোগের জীবাণুর ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ঠিকমতো কাজ করছে না। এমন তথ্য উঠে এসছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) গবেষণায়।

ছয় হাজার ৮৬৮ জন রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ৮ শতাংশ জীবাণুর ক্ষেত্রে কোনো অ্যান্টিবায়োটিক কাজ না করার মতো ঝুঁকি তৈরি হয়েছে বা এসব জীবাণু অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার আইইডিসিআর আয়োজিত সেমিনারে বিজ্ঞানী ও গবেষকরা এ কথা জানান।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, যখন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক ও পরজীবীগুলো সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হয় এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত ওষুধে আর সাড়া দেয় না, তখনই অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সের (এএমআর) উদ্ভব হয়। এ পরিস্থিতিতে সংক্রমণের চিকিৎসা করা কঠিন হয়ে ওঠে এবং রোগের বিস্তার ঘটে, অসুস্থতা ও মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ে।

শুধু ২০১৯ সালে এএমআরের ফলে বিশ্বজুড়ে ১.২৭ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণা অনুযায়ী, জনস্বাস্থ্যের শীর্ষ ১০টি হুমকির মধ্যে একটি হলো এএমআর। এএমআর নিয়ন্ত্রণ প্রগ্রামের অংশ হিসেবে, প্রতিবছর ১৮ থেকে ২৪ নভেম্বর বিশ্ব অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল সচেতনতা সপ্তাহ পালিত হয়। প্রতিবছরের মতো এবারও আইইডিসিআর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সপ্তাহটি পালন করেছে। এরই অংশ হিসেবে গতকাল আইইডিসিআরের অডিটরিয়ামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়, যেখানে এএমআর সার্ভেইল্যান্স থেকে প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্যাদি উপস্থাপন করা হয়।

আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. রিপন বড়ুয়া বাংলাদেশের এএমআর সার্ভেইল্যান্সের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড উপস্থাপনা করেন। তিনি বলেন, আইইডিসিআর ২০১৭ সাল থেকে এএমআর সার্ভেইল্যান্স সফলতার সঙ্গে পরিচালনা করে আসছে। সারা দেশের আটটি মেডিক্যাল কলেজ ও একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে সার্ভেইল্যান্সটি পরিচালিত হয়। হাসপাতালের মেডিসিন, সার্জারি, শিশু বিভাগ, বার্ন ইউনিট ও আইসিইউতে ভর্তি রোগী এবং বহির্বিভাগের নির্বাচিত রোগীদের মধ্য থেকে রক্ত, প্রস্রাব, মল, কফ থেকে নমুনা এবং ওই রোগীদের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়।

এসব নমুনা সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি ল্যাবরেটরিতে জীবাণু শনাক্তকরণ এবং শনাক্তকৃত জীবাণুর মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যক্ষমতার হার দেখার জন্য পরীক্ষা করা হয়। সাইটগুলো থেকে প্রাপ্ত সব জীবাণু ও রোগী সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত আইইডিসিআরে নিয়মিত পাঠানো হয়।

ডা. রিপন জানান, শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল বরিশাল এবং চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে খুব শিগগির এ সার্ভেইল্যান্স কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে আইইডিসিআরের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অধ্যাপক ডা. জাকির হোসেন হাবিব ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত এএমআর সার্ভেইল্যান্স থেকে প্রাপ্ত হালনাগাদ তথ্য উপস্থাপন করেন। এই সময়ের মধ্যে মোট ২৭ হাজার ৪৩৮ জন রোগীর বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় ৮ শতাংশ জীবাণুর মধ্যে সব ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকের অকার্যকারিতা পাওয়া যায়। এ ধরনের জীবাণু মূলত শনাক্ত হয়েছে বার্ন ইউনিট, আইসিইউ ও সার্জারি বিভাগ থেকে। চলতি বছরে পরীক্ষাকৃত ২৭৩টি নমুনার মধ্যে ৪৮ শতাংশ ব্যাকটেরিয়ায় শনাক্ত হয় এক ধরনের রাসায়নিক এনজাইম, যা ব্যাকটেরিয়া নিজে তৈরি করে এবং যা অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যক্ষমতাকে অকার্যকর করে দিতে সক্ষম।

LEAVE A REPLY