লিওনেল মেসির ‘ম্যারাডোনা’ হওয়ার মঞ্চ

দিনভর কাতারে হয়েছে ডিয়েগো ম্যারাডোনা স্মরণ। দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে কিংবদন্তির সতীর্থরা মিলে কালকের দিনটিকে রেখেছিল পুরোপুরি শোকের আবহে। মেসির আর্জেন্টিনা দলের ছবিও একই। সেখানে শোক চলছে সৌদি আরবের কাছে হারের পর থেকে।

এক ম্যাচের ধাক্কায় আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ আটকে গেছে গ্রুপের বাকি দুই ম্যাচে, মেক্সিকো ও পোল্যান্ডের বিপক্ষে। দুটো ম্যাচ যেন সেমিফাইনাল ও ফাইনাল।

কী ভেবে এসেছিল আর এখন কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি হারে আলবেসেলেস্তেদের বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্নটা সংকুচিত হয়ে এখন টিকে থাকার লড়াইয়ে রূপ নিয়েছে। সেটা এমন এক চাপ যে মিলিয়ে গেছে মেসিদের মুখের হাসি। এরপর প্রায় প্রতিদিনই সমর্থকরা উজ্জীবিত করার চেষ্টা করছে কাতার ইউনিভার্সিটি মাঠে গিয়ে। ওখানেই দলের আবাস। সমর্থকরা স্লোগান ধরে বলছে, ‘তোমাদের প্রতি আমাদের বিশ্বাস আছে। তোমরা পারবে। ’ তাদের সমর্থনের বার্তা খেলোয়াড়রাও পেয়েছেন। লিওনেল মেসিও শুনেছেন তবে হাসিটা আর ফিরছে না। তিনি হাসছেন শুধু কাতারের প্রাণকেন্দ্রে বিশাল ভবনে টাঙানো ছবিতে।

গতকাল সংবাদ সম্মেলনেও আসেননি আর্জেন্টিনার অধিনায়ক। আগের দিন আলাদা ট্রেনিং করার খবর মিলেছে। সেই খবর উড়িয়ে দিয়ে আর্জেন্টিনার কোচ বেশ জোর দিয়ে তাঁর সুস্থ থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এই দুঃসময়ে তাঁর সুস্থ থাকা এবং মাঠে দলের সঙ্গে উপস্থিতি খুব জরুরি। আর্জেন্টিনার জনপ্রিয় দৈনিক ক্লারিনের সাংবাদিক ডিয়েগো মেজার বিশ্বাস, ‘লিওনেল মেসি মাঠে থাকলে এই দল উজ্জীবিত হবে। আগের মতো দারুণ খেলে ম্যাচ জিতিয়ে আনবে। মেক্সিকোকে হারানোর সামর্থ্য আছে এই দলের। ’ পরিসংখ্যানও বলছে, মেসির উপস্থিতিতে আর্জেন্টিনা কখনো হারেনি মেক্সিকোর কাছে। আর্জেন্টিনার জার্সিতে পাঁচ ম্যাচের চারটিই জিতেছেন মেসি আর একটি ড্র হয়েছে। কাতারে ষষ্ঠ ম্যাচে কি ইতিহাস ঘুরে যাওয়ার শঙ্কা কম। কারণ বড় দল কখনো টানা অঘটনের শিকার হতে পারে না।

সৌদি আরবের অঘটনের পরপরই মেসি সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে নিজের বিশ্বাসের কথা বলেছিলেন, ‘৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থাকা মানে এই দলের সামর্থ্য আছে। একটা বড় আঘাতের পর এই দল আবার ঘুরে দাঁড়াবে। ’ যারা ব্রাজিলের বিপক্ষে মারাকানা জয় করে কোপা আমেরিকা জিততে পারে, তাদের শক্তি-সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন নেই। তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি আছে। আর্জেন্টাইন অধিনায়কও সতীর্থদের জাগিয়ে তুলতে তিনি কথা বলেছেন সবার সঙ্গে। একাট্টা হয়ে মানুষের মনের ভুল ভাঙিয়ে দিতে তৈরি লিওনেল মেসি। তবে এটা তাঁর স্বভাবের সঙ্গে খুব একটা যায় না। অন্তর্মুখী স্বভাবের মানুষটি সব সময় নিজের মধ্যেই গুটিয়ে থাকেন। এত দিনে মেসিকে জানা বা বোঝা এ রকমই।

হঠাৎ মেসির এই রূপান্তর! আর্জেন্টাইন সাংবাদিকরা মনে করছেন, নিজের শেষ বিশ্বকাপটা এভাবে স্মরণীয় করে রাখতে চান না তিনি। আগের চারটি আসরেও তিনি ফিরেছেন খালি হাতে। এবার ফেভারিট হয়ে এসেও গ্রুপ থেকে বিদায় নিলে সেটা হবে নিষ্ঠুর নিয়তি। তাই বয়স পেছন থেকে টেনে ধরলেও মনোবল সামনের দিকে এগিয়ে ৩৫ বছর বয়সীকে। সাতবারের ব্যালন ডি’অর জয়ীর জন্য নতুন পরীক্ষার মঞ্চ আজ মেক্সিকোর ম্যাচ। সময় কখনো কখনো জীবনকে এমন কঠিন জায়গায় এনে দাঁড় করিয়ে বড় পরীক্ষার মুখে ফেলে। মেসিও এখন সেই বাঁকে দাঁড়িয়ে। এখান থেকে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে নিতে পারলে তো ম্যারাডোনার মতোই অমরত্বের পথে যাত্রা। ম্যারাডোনাও ওপর থেকে নিশ্চয় দেখছেন এবং আশীর্বাদ করছেন। মেসিরাও কাল আর্জেন্টাইন ঈশ্বরকে স্মরণ করেছেন শ্রদ্ধাভরে। মেক্সিকোর ম্যাচ জয়টাই হবে তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীর বড় স্মারক।

LEAVE A REPLY