ইউরোপের বাজারে ৯০ শতাংশ ক্ষতি রাশিয়ার

জ্বালানি তেল। ফাইল ছবি

রাশিয়া এরই মধ্যে ইউরোপে ৯০ শতাংশ জ্বালানি তেলের বাজার হিস্যা হারিয়েছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় অঞ্চলটিতে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রপ্তানি দৈনিক এক লাখ ব্যারেলেরও নিচে নেমেছে। অথচ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগে রপ্তানির পরিমাণ ছিল দৈনিক ১২ লাখ ব্যারেল।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) সমুদ্রপথে রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। অন্যদিকে পশ্চিমা দেশগুলো রুশ জ্বালানি তেলের ওপর প্রাইস ক্যাপ (সর্বোচ্চ মূল্যসীমা) বেঁধে দেয়ার ঘোষণাও দিয়েছে। এসব সিদ্ধান্ত আগামী ৫ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে।

নেদারল্যান্ডসের রটারডামভিত্তিক ক্রেতাদের কাছে রাশিয়া এরই মধ্যে ৯০ শতাংশ বাজার হিস্যা হারিয়েছে। ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত চার সপ্তাহে ডাচ হাবটিতে জাহাজীকরণ কমেছে দৈনিক ৯৫ হাজার ব্যারেল। রাশিয়ার বাল্টিক সাগরীয় বন্দরগুলোয় বর্তমানে ৭৫ শতাংশ অপরিশোধিত জ্বালানি তেল লোড করার কার্যক্রম চলছে। এসব তেলের গন্তব্য এশিয়ার দেশগুলো। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এ অঞ্চলের শীর্ষ আমদানিকারক দেশ চীন ও ভারত যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই রাশিয়া থেকে বিপুল পরিমাণে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ক্রয় করছে। এক্ষেত্রে রাশিয়া দেশগুলোকে সাশ্রয়ীমূল্যের কিংবা আকর্ষণীয় মূল্যছাড়ের সুবিধা দিচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য ও জি-৭ভুক্ত দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হতে আর মাত্র দুই সপ্তাহ বাকি। কিন্তু এরই মধ্যে সেটির প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ভারতসহ অন্য ক্রেতারা ৫ ডিসেম্বরের আগেই রাশিয়ার বন্দরগুলোয় জ্বালানি পণ্য লোডিং সম্পন্ন করার জোর প্রয়াস চালাচ্ছে। ১৯ জানুয়ারির আগে থেকে ক্রয়কৃত এসব জ্বালানি নির্ধারিত গন্তব্যে খালাস করার পরিকল্পনা রয়েছে। যদিও এক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার শর্ত কার্যকর হবে না।

তবে ভারত ও চীনের ক্রেতারা বলছেন, তারা বর্তমানে রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল কেনার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করছেন। বিশেষ করে ৫ ডিসেম্বরের পর যাতে না হয়, সেটি নিশ্চিত করার ঘোষণা দিয়েছেন। প্রাইস ক্যাপ কীভাবে প্রয়োগ করা হবে, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার অপেক্ষায় আছেন ব্যবসায়ীরা।

এদিকে রুশ জ্বালানি তেলের ওপর ইউরোপের নিষেধাজ্ঞা আন্তর্জাতিক জ্বালানি বাজারে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি করবে বলে মনে করছে ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ)। মাসভিত্তিক জ্বালানি তেলের বাজারবিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সংস্থাটি।

আইইএ বলছে, অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা কমে যাওয়ার আশঙ্কা এরই মধ্যে প্রকট আকার ধারণ করেছে। তার ওপর রুশ জ্বালানি তেলের ওপর ইউরোপের নিষেধাজ্ঞা এবং মেরিটাইম পরিসেবায় নিষেধাজ্ঞা বৈশ্বিক জ্বালানি তেলের জন্য ভারসাম্যহীন পরিস্থিতি তৈরি করবে। ডিজেলের বাজার আরো বেশি জটিলতার মধ্যে পড়বে। এরই মধ্যে জ্বালানিটির বাজারে তীব্র সংকট চলছে।

প্রসঙ্গত, রাশিয়ার অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন গত মাসে আবারো কমেছে। তবে কমে যাওয়ার এ হার চলতি মাসে ব্যাপক আকার ধারণ করতে পারে। কারণ ইউরোপীয় ইউনিয়ন রুশ জ্বালানি তেল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আগামী ৫ ডিসেম্বর এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। গত মাসে রাশিয়া কনডেনসেটসহ অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন করেছে দৈনিক ১৪ লাখ ৭০ হাজার টন করে। এটি দৈনিক ১ কোটি ৭ লাখ ৮০ হাজার ব্যারেলের সমান। সেপ্টেম্বরে উত্তোলনের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৮ লাখ ব্যারেল।

LEAVE A REPLY