কক্সবাজারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনকে ঘিরে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের বাইরে যাওয়া ও প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
শহর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে উখিয়া-টেকনাফের আশ্রয়শিবিরে মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত এই রোহিঙ্গারা রয়েছেন।
আজ কক্সবাজারের জনসভায় ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য দুই দিন ধরে রোহিঙ্গাদের চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে প্রশাসন। ক্যাম্পের পাশাপাশি চেকপোস্টগুলোয় যে কোনো সময়ের চেয়ে নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে।
সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। একই সঙ্গে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে বাড়তি নজরদারি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
প্রশাসনের স্থানীয় সূত্রগুলো যুগান্তরকে জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কক্সবাজার আগমনকে ঘিরে কোনো ধরনের ঝুঁকি নিতে চায় না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ কারণে নিরাপত্তার স্বার্থে এসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে মেরিন ড্রাইভের উখিয়ার ইনানীতে আন্তর্জাতিক নৌ-মহড়া পরিদর্শন করবেন। এরপর তিনি সমুদ্রসৈকতের লাবণি পয়েন্টের শহিদ শেখ কামাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় উপস্থিত হয়ে বক্তৃতা করবেন।
আগে থেকেই ক্যাম্পের বাইরে আসা-যাওয়া নিষিদ্ধ ছিল রোহিঙ্গাদের। তবে সেটি ছিল শুধু কথার কথা। বিভিন্ন সময় গিয়ে দেখা যায়, উখিয়া ক্যাম্পকেন্দ্রিক বলিবাজার, কুতুপালং, পালংখালীসহ আশপাশের আরও কয়েকটি বাজারে অন্তত লাখের বেশি রোহিঙ্গা নিয়মিত উপস্থিত থাকেন। তারা শ্রমিক, তাদের অনেকেই বিভিন্ন কাজে যুক্ত রয়েছেন। তবে গত পাঁচ বছরের মধ্যে এবারই প্রথম ক্যাম্পের বাইরে যেতে এভাবে কড়াকড়ি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত এসব রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গা নেতা হামিদ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, আগে থেকে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের বাইরে বের হওয়া নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু এরপর কাঁচাবাজার বিশেষ করে তরিতরকারিসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার জন্য ক্যাম্পকেন্দ্রিক বাজারগুলোয় প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষ যেত। ক্যাম্পে থাকা এপিবিএন পুলিশকে ম্যানেজ করে কিংবা কৌশলে তারা ক্যাম্প থেকে বের হতো। কিন্তু দুই দিন ধরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তদারকি জোরদার করেছেন। চেকপোস্ট পার হয়ে কাউকেই ক্যাম্পের বাইরে যেতে দিচ্ছে না পুলিশ। এতে কিছুটা সমস্যা হলেও আমরা একে-অপর থেকে সাহায্য নিয়ে তা ম্যানেজ করছি। তিনি বলেন, শুনেছি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারে আসছেন। এজন্য ওনার নিরাপত্তার প্রয়োজনে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ৮ এপিবিএন-এর সহকারী পুলিশ সুপার (মিডিয়া) ফারুক আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কক্সবাজারের আগমন ঘিরে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরের প্রবেশদ্বারগুলোয় সদস্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। কঠোরভাবে নজরদারি করা হচ্ছে। ক্যাম্পে যাতে কোনো অপরাধী প্রবেশ বা বের হতে না পারে, সেটি কঠোরভাবে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে। এছাড়াও সাধারণ কোনো রোহিঙ্গাকে তাদের আশ্রয়স্থল ক্যাম্প থেকে বের হতে দেওয়া হচ্ছে না।
১৪ এপিবিএন-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি সৈয়দ হারুন-অর-রশিদ যুগান্তরকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কক্সবাজারের আগমনের বিষয়টি মাথায় রেখে প্রতিটি চেকপোস্টে কঠোরভাবে তল্লাশি করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ক্যাম্পের ভেতরে-বাইরে নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের বাইরে যাওয়া সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা হয়েছে। তাই অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটার সুযোগ নেই।
টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার বলেন, আগে থেকে সীমান্তে কঠোরভাবে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কক্সবাজারে আগমনের বিষয়টি মাথায় রেখে সীমান্তসহ সর্বত্রই কঠোরভাবে নজরদারি করা হচ্ছে। মিয়ানমার থেকে এদিকে কাউকে অবৈধভাবে আসতে দেওয়া হচ্ছে না। কেউ যেতেও পারবে না।
রোহিঙ্গাদের দায়িত্বে থাকা শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মিজানুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কক্সবাজারে আগমনের কারণে ক্যাম্পের মনিটরিং বা স্বাভাবিক কার্যক্রম কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত হবে না। আগের মতো সবকিছু স্বাভাবিক থাকবে। নিরাপত্তার বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেখছে।