পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষ নয়াপল্টন রণক্ষেত্র

পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় নয়াপল্টনসহ আশপাশের এলাকা। সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন মকবুল হোসেন (৩৩) নামের স্বেচ্ছাসেবক দলের এক নেতা।

বুধবার বেলা ৩টায় এ সংঘর্ষ শুরু হয়ে চলে প্রায় ৩ ঘণ্টা। দফায় দফায় ঘটে ধাওয়া-পালটাধাওয়া। মুহুর্মুহু রাবার বুলেট, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পুলিশ।

তাদের সঙ্গে যোগ দেয় পুলিশের বিশেষ টিম সোয়াতও। উত্তরে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। সাংবাদিক, পুলিশসহ আহত হয়েছেন শতাধিক।

গুলিবিদ্ধ ২৬ জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে গুরুতর আহত তিনজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। পুলিশের অ্যাকশনে একপর্যায়ে নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে সরে যেতে বাধ্য হন।

সংঘর্ষের পর অভিযান চালানো হয় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ভেতরে। সেখানে অবস্থান নেওয়া নেতাকর্মীদের বেধড়ক লাঠিচার্জ করে পুলিশ। কার্যালয়ের বিভিন্ন ফাইলপত্র তছনছ করা হয়।

সেখান থেকে ১৫টি ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি করে পুলিশ। কার্যালয়ের সামনে সেগুলো নিষ্ক্রিয় করা হয়। এছাড়া কার্যালয় থেকে ১৬০ বস্তা চাল জব্দ করা হয়েছে।

বিএনপির অফিস থেকে চাল, ডাল, পানি সবকিছু নিয়ে যায় পুলিশ। এদিকে কার্যালয়ের সামনে থেকে ও ভেতরে অভিযান চালিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা রুহুল কবির রিজভী, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, খায়রুল কবির খোকন, আমানউল্লাহ আমান, আব্দুস সালাম, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, মোস্তাক মিয়া, আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক এবং কয়েকজন নারী নেত্রীসহ তিন শতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করা হয়।

পল্টন থানা হাজতে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় তাদের আশপাশের থানা হাজতে নিয়ে যাওয়া হয়। এদিকে রাতে অনেকটাই সুনসান দেখা যায় নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও সামনের সড়ক। কার্যালয়ের ভেতরে কাউকে দেখা যায়নি।

রাত ৯টার দিকে নয়াপল্টন এলাকায় ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপির কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে ৩০০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।

পৌনে তিন লাখ পানির বোতল পাওয়া যায়। এছাড়া কার্যালয়ের সামনে একটি কাভার্ডভ্যান থেকে ১৬০ বস্তা চাল জব্দ করা হয়েছে। নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় পুলিশের অন্তত ৫০ সদস্য আহত হয়েছেন। 

সংঘর্ষ চলাকালে বিকাল ৪টার দিকে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দলীয় কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করতে গেলে পুলিশ তাকে বাধা দেয়।

যদিও পরে যেতে বলা হয়। কিন্তু ভেতরে প্রবেশ না করে কার্যালয়ের সামনে ফুটপাতে অবস্থান নেন তিনি। এ সময় মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলার পরও আমাকে কার্যালয়ে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।

তাহলে কী দেশে কোনো সরকার নেই। অথচ পুলিশ, বোম ডিসপোজাল ইউনিটের লোকজন ঢুকছে, বের হচ্ছে। আমরা সন্দেহ করছি, তারা ভেতরে বোমা জাতীয় কিছু রেখে এর দায় আমাদের ওপর চাপাবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যে পরিস্থিতি তাতে এই মুহূর্তে এখানে সমাবেশ করা সম্ভব নয়। রাত ৮টার দিকে কার্যালয়ের সামনে থেকে চলে যান মির্জা ফখরুল।

চলে যাওয়ার সময় তিনি গণমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করে বলেন, ‘ব্যাগে করে বিস্ফোরক দ্রব্যাদি পুলিশ (বিএনপির) কার্যালয়ের ভেতরে নিয়ে গেছে। নেতাকর্মীদের খাওয়ানোর জন্য কার্গো, ভ্যানভর্তি চাল আনা হয়েছিল।’ 

তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার জন্য তারা পাঁয়তারা করছে। পুলিশ আমাদের কার্যালয় থেকে সিসিটিভি, হার্ডডিস্ক, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সব নিয়ে গেছে।

যাতে হামলার কোনো আলামত না থাকে। শুধু তাই নয়, তারা অফিসের মধ্যে ঢুকে সবকিছু ভাঙচুর করেছে। আমাদের কয়েকশ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।

একাত্তরের হানাদার বাহিনীর মতো বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করেছে, যা পৈশাচিক ও সংবিধানবিরোধী। বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে পরবর্তী করণীয় জানানো হবে।

দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে রাতেই অনুষ্ঠিত হয় স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠক।

এতে নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশের হামলা-গুলিবর্ষণ, গ্রেফতার, কার্যালয়ে অভিযানের প্রতিবাদে আজ সারা দেশে মহানগর-জেলা পর্যায়ে বিক্ষোভ কর্মসূচির সিদ্ধান্ত হয়।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। 

এদিকে সন্ধ্যার পর গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে যেতে চাইলে কাকরাইল মোড়ে তাদের আটকে দেয় পুলিশ।

এ সময় নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপনসহ মঞ্চের নেতারা ছিলেন। 

এদিকে নয়াপল্টনে এ সংঘর্ষের জন্য পুলিশ ও বিএনপি একে-অপরকে দায়ী করেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল জোনের ডিসি হায়াতুল ইসলাম খান বলেন, ‘সমাবেশের স্থান নিয়ে যখন আলোচনা চলছে, তখন এ সংঘর্ষ শুরু হয়। পল্টনে বিএনপির নেতাকর্মীরা ভিড় করতে শুরু করে। একপর্যায়ে পুরো রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। আমরা তাদের সরে যেতে বারবার অনুরোধ করি। কিন্তু তারা আমাদের কথা শোনেনি। একপর্যায়ে তাদের সরিয়ে দিতে গেলে তারা পুলিশের ওপর হামলা করে।’

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেন-একটা ভয়াবহ, ভীতিকর ও উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

আমরা আশা করতে পারি না, একটি রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ের সামনে এ রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। সরকার পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে সেখান থেকে পুলিশ প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি। অন্যথায় সব দায়-দায়িত্ব সরকারের ওপর বর্তাবে।

এ পরিস্থিতিতে ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ করা সম্ভব হবে কিনা জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, সমাবেশকে কেন্দ্র করেই এগুলো হচ্ছে। তারা সমাবেশকে নষ্ট করার চেষ্টা করছে।

১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ। সমাবেশের স্থান নিয়ে কয়েকদিন ধরেই উত্তেজনা চলছে। বিএনপি নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুমতি চাইলে পুলিশ তা নাকচ করে দেয়।

পুলিশের পক্ষ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু বিএনপি সেখানে সমাবেশ করবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়। নয়াপল্টনের বিকল্প হিসাবে আরামবাগে অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়।

এ নিয়ে কয়েকদিন ধরে পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছে বিএনপির প্রতিনিধি দল। আজ পুলিশের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানোর কথা ছিল। কিন্তু এর আগেই বেধে যায় সংঘর্ষ। 

সমাবেশের স্থান নিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, বিকল্প স্থান আরামবাগে অনুমতি না দিলে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেই সমাবেশ করবে তারা।

ঢাকা বিভাগের ১১টি সাংগঠনিক জেলার নেতাকর্মীদের নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। হাইকমান্ডের নির্দেশ পেয়ে রাজধানীর আশপাশের নেতারা সেখানে জড়ো হতে থাকেন।

কয়েকদিন ধরে ঢাকা মহানগর বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কয়েক হাজার নেতাকর্মী কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে সরকারবিরোধী নানা স্লোগান দেন। অনেকে সেখানে রাতযাপনও করেন। 

এদিকে গত কয়েকদিন ধরে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ও আশপাশে সতর্ক অবস্থানে ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী। প্রিজন ভ্যান, রায়ট কার সেখানে আনা হয়।

বুধবার সকাল থেকে কার্যালয়ের আশপাশে বাড়ানো হয় পুলিশের সংখ্যা। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের তৎপরতাও ছিল চোখে পড়ার মতো।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অন্যান্য দিনের মতো বুধবার সকাল থেকেই নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে দলটির নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন।

এ সময় তারা নানা স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকেন। দুপুরের খাবারের জন্য স্লোগান ও বিক্ষোভ বন্ধ রাখা হয়। অনেকে সেখানে থাকা ট্রাক থেকে খাবার নিতে লাইন ধরেন।

কেউ খেতে ছিলেন। এসময় কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই পুলিশ তাদের ওপর হঠাৎ করেই হামলা চালায়। নেতাকর্মীরাও পালটা হামলা চালালে শুরু হয় সংঘর্ষ।

চলে ধাওয়া-পালটাধাওয়া। সংঘর্ষের একপর্যায়ে পুলিশ শটগানের গুলি ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। উত্তরে বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।

কেউ সেখানে থাকা লাঠি দিয়ে পুলিশকে আক্রমণ করে। এ সময় পল্টন থানার সামনে ও নাইটএঙ্গেল মোড় থেকে পুলিশের বিশাল বহর নয়াপল্টন কার্যালয়ের অভিমুখে মার্চ করে।

রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করতে করতে তারা সামনে এগোতে থাকে। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় সোয়াতও। সঙ্গে ছিল রায়ট কার, এপিজি, জলকামান।

মুহুর্মুহু গুলি, টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও পুলিশের গাড়ির সাইরেনের শব্দে আশপাশের এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পথচারীরা দিগ্বিদিক ছুটতে থাকেন।

সড়কে বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। বিএনপি নেতাকর্মীরা শুরুতে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন।

কিন্তু পুলিশের সাঁড়াশি আক্রমণের সামনে তারা বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। কার্যালয়ের সামনে থেকে পিছু হটেন তারা। অনেকে কার্যালয়ের ভেতরে ও আশপাশের গলিতে অবস্থান নেন।

বিভিন্ন গলির ভেতর ঢুকেও গুলি চালায় পুলিশ। পুলিশ কেন্দ্রীয় কার্যালয় লক্ষ্য করে অসংখ্য টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এতে কার্যালয়ের ভেতর ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়।

পুলিশের গুলিতে আহত কয়েকজন কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করেন। পরে অ্যাম্বুলেন্স এনে তাদের হাসপাতালে পাঠানো হয়। 

সন্ধ্যার দিকে নয়াপল্টনসহ আশপাশের এলাকা পুলিশ নিয়ন্ত্রণে নেয়। বিকালে কার্যালয়ের ভেতরে অভিযান চালায় পুলিশ। সেখানে থাকা নেতাকর্মীদের বেধড়ক লাঠিচার্জ করা হয়।

ভেতর থেকে আটক করা হয় অনেককে। তল্লাশির নামে কার্যালয়ের ভেতরে থাকা বিভিন্ন ফাইল তছনছ করা হয়। কার্যালয়ের ভেতর থেকে ১৫টি ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি পুলিশের। 

এদিকে মির্জা ফখরুল যখন একা ফুটপাতে বসে পড়েন তখন বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা তার পাশে এসে অবস্থান নেন। যারাই মহাসচিবের পাশে আসেন তাদের প্রায় সবাইকে ছোঁ মেরে প্রিজন ভ্যানে তুলে নেয় পুলিশ।

এ সময় প্রিজন ভ্যানের ভেতর থেকে নেতাকর্মীরা নানা স্লোগান দিতে থাকেন। কেউ কেউ ভ্যানে উঠার সময় জয়সূচক ‘ভি’ চিহ্ন দেখান। অনেকে দাবি করেন তারা পথচারী।

কয়েক দফায় নয়াপল্টনের সামনে থেকে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করা হয়। সন্ধ্যার দিকে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের প্রচারের জন্য থাকা দুটি ট্রাকও নিয়ে যায় পুলিশ।

এছাড়া কার্যালয়ের সামনে থাকা অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেল পল্টন থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। 

হাসপাতাল মর্গে মকবুলের লাশ, পরিবারের আহাজারি : সংঘর্ষের সময় পুলিশের গুলিতে মারাত্মক আহত হয়ে সড়কে পড়েছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মকবুল হোসেন।

রক্তাক্ত অবস্থায় মকবুলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান মোস্তাফিজুর নামের এক পথচারী। তিনি জানান, সড়কে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে মকবুলকে তিনি হাসপাতালে নিয়ে আসেন।

পরে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে অন্তত ২৬ জন ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন।

তাদের মধ্যে এক পুলিশ সদস্যসহ তিনজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। 

নিহত মকবুল পল্লবীর ৫নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। এর আগে তিনি ওই ওয়ার্ডের ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী ছিলেন।

১০ ডিসেম্বরের সমাবেশকে সামনে রেখে তিনি দুদিন আগে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থান নিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন তার নিকটাত্মীয় আল আমিন।

তিনি যুগান্তরকে বলেন, মকবুল মিরপুর-১১ নম্বর এলাকার বাউনিয়াবাদের এ ব্লকের ১২ নম্বর লাইনে আবুবক্কর মসজিদের সংলগ্ন ৮ নম্বর বাসায় থাকতেন।

তার মিথিলা নামে ৭ বছরের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। মকবুলের মৃত্যুর খবর পেয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসেন তার স্বজনরা।

জরুরি বিভাগের মর্গের সামনে মকবুলের স্ত্রী হালিমা বেগম এবং মেয়ে মিথিলা এবং অন্য স্বজনদের আহাজারিতে হাসপাতালের পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে। 

মকবুলের বড় ভাই আব্দুর রহমান বলেন-চার বোন, তিন ভাইয়ের মধ্যে মকবুল ছিলেন চতুর্থ। তিনি জুতার ডিজাইনের কাজ করতেন।

মিরপুরে একটি ঘর ভাড়া নিয়ে ১০-১২ জন শ্রমিক দিয়ে তিনি একটি ছোট কারখানা চালাতেন। মকবুলের গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার কদিমের চরে।

ঢামেক হাসপাতালে নিহতের স্ত্রী হালিমা বেগম বলেন, বুধবার সকাল ৮টায় আমার বড় বোন নাসরিন বেগমের কাছ থেকে ১ হাজার টাকা নিয়ে মার্কেটে কারচুপি কিনতে যাবে বলে বের হয় মকবুল।

সে খাবার না খেয়েই বাসা থেকে বের হয়েছিল। পরে টেলিভিশনে দেখতে পাই আমার স্বামী (মকবুল) মারা গেছে। লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাখা হয়েছে।

এদিকে ঢামেক জরুরি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নয়াপল্টনে সংঘর্ষের ঘটনায় আহতদের মধ্যে মাহফুজ নামের এক পুলিশ কনস্টেবল রয়েছে। 

বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নিন্দা-প্রতিবাদ : নয়াপল্টনে পুলিশি হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন।

বুধবার পৃথক বিবৃতিতে তারা এ নিন্দা জানান। এদের মধ্যে রয়েছে-লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), বাম গণতান্ত্রিক জোট, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, গণসংহতি আন্দোলন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ভাসানী অনুসারী পরিষদ, গণঅধিকার পরিষদ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), লেবার পার্টি, ডেমোক্রেটিক লীগ (ডিএল), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, গণফোরাম একাংশ, এবি পার্টি, বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ ও ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)।

বিবৃতিতে তারা বলেন, মানুষ হত্যার এ নির্মমতাকে সরকার নিয়মিত বিষয়ে পরিণত করতে চায়। সরকার তাদের অবৈধ ও দানবীয় ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতেই এসব করছে।

LEAVE A REPLY