ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে ই-সিগারেট কারখানা স্থাপনে বিদেশি বিনিয়োগের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। একই সাথে জনহিতকর পণ্য উৎপাদনে বিদেশি বিনিয়োগে উৎসাহ দেয়ার জন্য অনুরোধ জানায়। বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ প্রোগ্রামের লাইন ডাইরেক্টর অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এই উদ্বেগ ও অনুরোধ জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, প্রচলিত তামাক পণ্যসমূহের বাইরে আধুনিক কিছু পণ্যের প্রচলন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গভীর উদ্বেগের সাথে পর্যবেক্ষণ করছে। সময়োপযোগী যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে অদূর ভবিষ্যতে জনস্বাস্থ্যের ভয়াবহ বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। ই-সিগারেট এমনই একটি নতুন প্রজাদের তামাকজাত পণ্য। ব্যাটারি চালিত এই চক্রের মাধ্যমে আরো কিছু কেমিক্যালসহ তামাকের নির্বাস বা নিকোটিনকে বাষ্পীভূত করা হয়। যা নিশ্বাসের সাথে গ্রহণ করা যায়।
নিকোটিন ছাড়া এতে সরাসরি ব্যবহৃত কেমিক্যালসমুহের মধ্যে থাকে প্রোপাইলিন গ্লাইকল, গ্লিসারল এবং বিভিন্ন সুগন্ধি। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নিরাপদ রাখতে দেশে ই-সিগারেটের বাজার নিয়ন্ত্রণে এর আমদানি, ব্যবহার নিষিদ্ধ করার প্রস্তাবনার পাশাপাশি এর সম্প্রসারণে সহায়ক সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন। জনস্বাস্থ্য রক্ষায় ইতোমধ্যে ভারত, থাইল্যান্ডসহ বিশ্বের ৩২টি দেশ ই-সিগারেটকে নিষিদ্ধ করেছে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, নিকোটিন একটি উচ্চমাত্রার ক্ষতিকর কেমিক্যাল এবং এর ব্যবহারে হৃদস্পন্দন ও রক্তচাপে বৈষম্যের সৃষ্টি হয়। গর্ভবতী নারী ও শিশু-কিশোরদের ক্ষেত্রে নিকোটিনের ব্যবহার শিশুর মস্তিষ্কের বিবাশকে বাধাগ্রস্থ করে। ই-সিগারেটে ব্যবহৃত কেমিক্যাল খাদ্যমান সম্পন্ন হলেও দীর্ঘমেয়াদে শ্বাসতন্ত্রে ঝুঁকির কারণ আশঙ্কায় জনস্বাস্থ্যের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়।
এছাড়াও ই-সিগারেটে ব্যবহৃত তরল বাষ্পীভূত করার ফলে ফরমালডিহাইড উৎপন্ন হয়। যা ক্যান্সারের কারণ। গবেষণায় ই-সিগারেটের বাষ্পে সীসা, নিকেল, ক্রোমিয়ামসহ অন্যান্য ভারী ধাতুর উপস্থিতিও প্রমাণিত হয়েছে। যা ক্যঅন্সারসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ই-সিগারেট ব্যবহারে হৃদরোগ ও শ্বাসতন্ত্রের জটিলতার ঝুঁকি বাড়ে এবং এখনো প্রথাগত ধূমপানের চেয়ে এর ক্ষতিকর মাত্রা কম হওয়ার পর্যাপ্ত প্রমাণ পাওয়া যায়নি। গবেষণায় প্রতীয়মান, ধূমপানের সাথে ই-সিগারেটের ব্যবহার হার্ট এ্যাটাকের ঝুঁকি ৫ গুণ পর্যন্ত বাড়ায়। তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে ধূমপান নিবারনে সহায়ক ঘোষণা দেয়ার পরিবর্তে ই-সিগারেটের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।
শিশু-কিশোরদের ই-সিগারেটের প্রতি আগ্রহ এবং ই-সিগারেট দিয়ে শুরু করে পরবর্তীতে ধূমপানে আসক্তি, যা যুক্তরাষ্ট্রে প্রমাণিত, এই ক্ষেত্রে আরো একটি বিশেষ উদ্বেগের বিষয়। ই-সিগারেট বাজারজাতকরণে কোম্পানিগুলির শিশু-কিশোরদের চিত্তাকর্ষক বাজারজাতকরণ কৌশল এবং প্রতিষ্ঠিত তামাক কোম্পানিগুলির ই-সিগারেট ব্যবসায় সম্প্রসারণ এই উদ্বেগকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশের ধূমপান ও তামাকজাত পণ্য নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনীতে ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বাংলাদেশে ই-সিগারেটের উৎপাদন-বিপণন নিষিদ্ধ করার সুপারিশ করেছে। মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত সংশোধনীর প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।কেএইচ