রাশিয়ায় শিরোপা উৎসব করা ফ্রান্স চার বছর পর আবারও বিশ্বকাপের ফাইনালে। বিশ্বকাপের ৯২ বছরের ইতিহাসে মাত্র চতুর্থ দল হিসাবে শিরোপা জয়ের পরের আসরে ফাইনালে ওঠা কম বড় সাফল্য নয়। ফ্রান্সের সামনে এখন ইতালি (১৯৩৪ ও ১৯৩৮) এবং ব্রাজিলের (১৯৫৮ ও ১৯৬২) পর তৃতীয় দল হিসাবে টানা দুটি বিশ্বকাপ জয়ের কীর্তি গড়ার হাতছানি। তবে কাজটি যে সহজ হবে না ভালো করেই জানা আছে ফ্রান্সের।
রোববারের ফাইনালে যে তাদের প্রতিপক্ষ মেসির আর্জেন্টিনা। সৌদি আরবের কাছে হার দিয়ে বিশ্বকাপ শুরুর পর প্রতিটি ম্যাচই ফাইনালের মতো খেলেছেন মেসিরা। টুর্নামেন্ট যত এগিয়েছে আর্জেন্টিনার খেলার ধার তত বেড়েছে। কোয়ার্টার ফাইনালে নেদারল্যান্ডস ও সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে আর্জেন্টিনা অধিনায়ক লিওনেল মেসির জাদুকরী পারফরম্যান্স আরও বেশি ভাবিয়ে তুলেছে ফ্রান্সকে।
বুধবার রাতে মরক্কোকে ২-০ গোলে হারিয়ে ফাইনালে ওঠার পর ফ্রান্সের প্রায় সবার মুখেই মেসি! অধিনায়ক উগো লরিসের কণ্ঠে শোনা গেল সতর্কতার সুর, ‘আর্জেন্টিনা অনেক বড় দল। কতটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতে পারে, সেটা তারা দেখিয়েছে। আর মেসির মতো একজন বিশেষ খেলোয়াড় রয়েছে তাদের, খেলার ইতিহাসেই যে ছাপ রেখে দিয়েছে। দারুণ একটি ম্যাচ হওয়ার সব রসদ আছে ফাইনালে।’
রাশিয়া বিশ্বকাপের শেষ ষোলোতে আর্জেন্টিনাকে ৪-৩ গোলে হারালেও এবারের আর্জেন্টিনাকে সমীহের দৃষ্টিতে দেখছেন ফ্রান্স কোচ দিদিয়ের দেশম, ‘চার বছর আগের আর্জেন্টিনা আর এই দলটা এক নয়। চার বছর আগে মেসি সেন্টার ফরোয়ার্ড হিসাবে খেলেছে। কিন্তু এবার সে মূল স্ট্রাইকারের পেছনে থেকে দুর্দান্ত খেলছে। বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের একজন সে। মাঠে তার ভূমিকা রাখার জায়গাগুলো কমিয়ে আনার চেষ্টা করব আমরা। মেসিকে থামাতে মানুষের পক্ষে যা যা করা সম্ভব, আমরা তাই করব। তবে ফাইনাল শেষে কেউ না কেউ জার্সিতে তৃতীয় তারকা তো পাবেই।’
তৃতীয় বিশ্বকাপ জয়ের পথে ফরাসি ফরোয়ার্ড আঁতোয়া গ্রিজমানও সবচেয়ে বড় হুমকি মনে করছেন মেসিকে, ‘আর্জেন্টিনা খুবই কঠিন প্রতিপক্ষ। মেসিকে নিয়ে যে কোনো দল সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা ব্যাপার। শুধু মেসি নয়, তার চারপাশে শক্তিশালী একটা দল আছে।’
মেসির জবাবে ফ্রান্সেরও আছে কিলিয়ান এমবাপ্পে। কাতার বিশ্বকাপে দুই পিএসজি তারকাই করেছেন পাঁচ গোল। কিন্তু মেসির মতো মাতামাতি হচ্ছে না এমবাপ্পেকে নিয়ে। এ নিয়ে যেন কিছুটা ক্ষুব্ধ ফরাসি মিডফিল্ডার চুয়ামেনি, ‘মেসির বিপক্ষে খেলার সুযোগ তো বিশেষ কিছু। সে গ্রেট খেলোয়াড়। তবে আমার কাছে এমবাপ্পেই সেরা। রোববার সে তা দেখিয়ে দেবে।’
সেমিফাইনালে ফ্রান্সকে জিতিয়েছেন ডিফেন্ডার থিওহার্নান্দেজ ও বদলি ফরোয়ার্ড রান্দাল কোলো মুয়ানি। মেসিকে তারা ভয় পাচ্ছেন না। হার্নান্দেজ তো বলেই দিয়েছেন, ‘টানা দুটি বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলা অবিশ্বাস্য ব্যাপার। এবারও আমরা জিততে চাই। আমরা লিওনেল মেসিকে ভয় পাই না। আর্জেন্টিনা অসাধারণ দল, তবে আমরাও কম নই।’ মুয়ানির কণ্ঠেও অভিন্ন সুর, ‘ফাইনাল শুধু খেলার জন্য খেলা নয়, ফাইনাল মানে জেতার ম্যাচ। জয়ের ক্ষুধা আর প্রত্যয় নিয়েই খেলব আমরা।’
