যে কারণে কাতার বিশ্বকাপ সফল

ছবি: সংগৃহীত

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব পাওয়ার পরই শোনা যাচ্ছিল নানা সমালোচনা। তবে সব সমালোচনাকে সামলে নিয়ে জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পর্দা উঠেছিল বিশ্বকাপ ফুটবলের ২২তম এই আসরের। আবার ব্যতিক্রমধর্মী নানা আয়োজন করে বিশ্বকে চমকে দিয়েছে আয়োজকরা। এমনকি ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনো তো বলেই দিয়েছেন কাতার বিশ্বকাপ ইতিহাসের সেরা। এছাড়া নানা কারণে কাতার বিশ্বকাপকে একটি সফল বিশ্বকাপ বলা যায়।

এই বিশ্বকাপ উপহার দিয়েছে অনেক অবিশ্বাস্য মুহূর্ত। একদিকে যেমন লিওনেল মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, নেইমার এবং এমবাপ্পেদের মতো জনপ্রিয়রা ছিলেন। তেমনি স্মরণীয় পারফরম্যান্সে শিরোনামে উঠে এসেছে সৌদি আরব, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও মরক্কোর মতো দেশগুলো। কাতার বিশ্বকাপকে ইতিহাসের সেরা বিশ্বকাপ বলে অ্যাখ্যা দিয়ে বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফার সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো বলেন, এই প্রথমবারের মতো কোনো বিশ্বকাপে ছোট বড় কোনো দল ভেদাভেদ নেই। নকআউট পর্বে প্রতিটি মহাদেশ থেকে দলগুলো জায়গা করে নিয়েছে। যা সত্যিই রোমাঞ্চিত করেছে বিশ্ব ফুটবলকে। এছাড়া কাতার এবারের বিশ্বকাপে যা করে দেখিয়েছে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে।

এদিকে মরুর বুকে অনুষ্ঠিত প্রথম বিশ্বকাপের সব আয়োজন মুগ্ধ করেছে ফুটবলপ্রেমীদের। ইতিহাস রচনা করে নারী রেফারি দিয়ে ম্যাচ পরিচালনা করে আয়োজকরা। এছাড়া বিশ্বকাপ উপলক্ষে কাতারের সব আয়োজন ও নিরাপত্তা ছাপিয়ে গেছে যে কোনো আসরের কর্মযজ্ঞকে। অনেক নতুনের সূচনা করেছে কাতার বিশ্বকাপ। অনেক ইতিহাস রচনা করেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি। বিশ্বকাপের ৯২ বছরের ইতিহাসে এমন আসর কখনোই দেখেনি ফুটবল বিশ্ব। পশ্চিমাদের সব ধরনের সমালোচনাকে টেক্কা দিয়ে সফল করেছে বিশ্বকাপ আয়োজন। এবারের বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ড থেকে পাওয়ার হাউসখ্যাত দলগুলোরও বাদ পড়ার ঘটনা ঘটেছে। আবার ছিল মুদ্রার উল্টো পিঠও। ইতিহাসে যে দল কখনো দ্বিতীয় রাউন্ডের গণ্ডি পেরোতে পারেনি, তারাও পৌঁছেছে সেমিতে।

এর আগে ফুটবলপ্রেমীদের সুবিধার জন্য নানা আয়োজন করে তারা। বিশ্বকাপ উপলক্ষে ৩টি পাঁচতারকা হোটেল নির্মাণ করে দেশটি। এছাড়া কাতার কর্তৃপক্ষ ১ লাখ থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার কক্ষ নির্মাণ করে। ফুটবল বিশ্বকাপে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সামলাতে দোহা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পুনরায় চালুও করে তারা। দর্শক-সমর্থকদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে ৬ হাজার ইলেকট্রনিক বাস নামায় তারা। নানা দেশ থেকে আগত দর্শকদের জন্য কাতার তৈরি করেছে উন্নতমানের হোটেল।

এছাড়া তাদের স্টেডিয়ামে ফ্রি যাতায়াতের জন্য পরিবহন খাতেও প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়েছে। বিনামূল্যে নামানো হয়েছে চার হাজার বাস। প্রথমবারের মতো রোবট রেফারি, বলে নতুন প্রযুক্তি, ভিএআর এর নতুন নিয়ম চালু হয় এই বিশ্বকাপে। এবারের ফিফা বিশ্বকাপে তারা ২২০ বিলিয়ন ডলার খরচ করছে। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। আর যা কিনা বিশ্বকাপ ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল আয়োজন। ২০১৮ সালে রাশিয়া যে পরিমাণ খরচ করেছে কাতার বিশ্বকাপে তার ২০ গুণ বেশি ব্যয় হয়েছে। শুধু তাই নয়, ১৯৯৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৭টি বিশ্বকাপের একত্রিত খরচকেও হার মানিয়েছে আয়োজক দেশ কাতার।

এবারের বিশ্বকাপের চমক হিসেবে মরক্কো আফ্রিকার প্রথম দেশ হিসেবে সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছিল। গ্রুপ পর্বে বেলজিয়াম, শেষ ষোলোতে স্পেন এবং কোয়ার্টার ফাইনালে পর্তুগালের মতো দলকে হারিয়েছে তারা। শেষ বিশ্বকাপ খেলতে নামা মেসি, রোনালদো, দানি আলভেস, লুকা মড্রিচ, টমাস মুলার, লুই সুয়ারেজ, পেপে ও কাভানির মতো মহাতারকাদের বিদায় জানিয়েছে বিশ্বকাপের মঞ্চ। কিছু রেকর্ডও দেখা গেছে এই বিশ্বকাপে। প্রথম ফুটবলার হিসেবে টানা পাঁচটি বিশ্বকাপে গোলের নজির গড়েছেন রোনালদো ও লিওনেল মেসি। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রীড়া উৎসবের শুরু এবং মাঝে যতই বিতর্ক থাক, খেলার মাঠের সাফল্য সব বিতর্ক ঢেকে দিয়েছে।কেএইচ

LEAVE A REPLY