কাপড় থেকে শুরু করে নকশা প্রতিটি ধাপেই এখন চলছে অভিনবত্ব। এখন ফ্যাশন সচেতন মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। প্রযুক্তি ও আধুনিকতার সঙ্গে মানুষের চিন্তা-চেতনার বৈশ্বিক যে বহিঃপ্রকাশ দেখা যায়, তাতে সবাই চায় ট্রেন্ডি এমন ফ্যাশন অনুসরণ করতে। ফ্রিল ও ড্রেপিং এটা হালে ডিজাইনারদের নানাভাবে অনুপ্রাণিত করছে পোশাক নকশায়।
এখনকার তরুণীরা আগের চেয়ে অনেক বেশি ফ্যাশন-সচেতন। তারা পোশাক কেনার আগে তার ডিজাইনের নতুনত্ব, মান, রঙ, বিশেষত্ব, প্যাটার্ন সবকিছু দেখেই কেনে। তাই ক্রেতা চাহিদার ফলেই ডিজাইনে নিরীক্ষাধর্মী কাজ বেড়েছে।
ট্রেন্ডে কুচির কদর বেড়েছে
ডিজাইনে আবার ঘুরে ফিরে কুচি দেয়া জামা, ঘটি হাতা, পলকা ডট ফিরছে বলেই দাবি করছেন ফ্যাশন বিশেষজ্ঞরা।
কখনও বিশেষ কোনো স্টাইলের জন্য ট্রেন্ডি জায়গা দখল করে নেয় সে ফ্যাশন। মেয়েদের টপস ডিজাইনে এখন জনপ্রিয় নাম ফ্রিল বা কুচির স্টাইল। মানে কুচির বিভিন্ন ব্যবহার এখন মেয়েদের টপসে লক্ষ করা যায়। মূলত ২০১৬ তে লন্ডন ফ্যাশন উইকে প্রর্দশিত পোশাক থেকেই বেরিয়ে আসে এই ট্রেন্ড। আমাদের দেশেও অনুসরণ হচ্ছে একই ট্রেন্ড। ট্র্যাডিশনাল লেডিস ড্রেসে খুব সহজে জায়গা করে নিয়েছে এই স্টাইল। কিছু ক্ষেত্রে পোশাকে কুচি মানেই বর্ণিল সাজসজ্জা! এই যেমন গাউন বা লেহেঙ্গায় আধিপত্য ছাড়িয়ে কুচি এনে দিচ্ছে লেডিস টপস বা সিঙ্গেল কামিজে ভিন্নরকম বৈচিত্র্য। আর উৎসব, পার্টিতে সেহেতু বরাবরই তরুণীদের পছন্দের শীর্ষে থাকে রঙচঙা টপস, তাই এমন ডিজাইনের জায়গা পেতেও দেরি হচ্ছে না। টপসেই ট্রেন্ডের প্রতিফলন দেখা যায় বেশি। এবার সেই জায়গায় পরিবর্তন এনেছে বিভিন্ন ফ্রিল। আজকাল ঢিলেঢালা টপসের চল বেশ চোখে পড়ছে। ঢিলেঢালা টপসেও ফ্রিলের ব্যাপকতা দেখা যায়। বডিতে ফিটিং প্যাটার্নই গত কয়েক বছর অধিকাংশ ডিজাইনে দেখা গেছে। যার সঙ্গে পুরোপুরি ভিন্নমাত্রা এনেছে ফ্রিল। টপসের নেকের বা হাতার অংশে দেখা যায় বেশি ফ্রিলের কাজ। র্যাপড ফ্রিল টপসের নেকে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম মাত্রা এনে দিয়েছে, যা এখন বেশ জনপ্রিয়। নেক থেকে নরমাল গেদার বা ফ্রিল নিচে নেমে আসার ডিজাইন কমবেশি সব সময়ই পরিলক্ষিত। এবার এটি পরিবর্তিত হয়েছে একটু প্লিট আকারে। নেকের বিভিন্ন শেপেও ব্যবহৃত হচ্ছে ফ্রিলের বিশেষ ব্যবহার। এখনকার ট্রেন্ডি পোশাকে নতুনত্ব এসেছে ড্রেসে নিচের অংশ, অর্থাৎ বটমে। মানে ফ্রিলের সবচেয়ে বেশি ব্যবহার দেখা যায় এখন বটমেই। অনেকটা সময় দেশীয় কামিজে প্রায় একই রকম কাটিং দেখা গেছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মানুষের বিচরণ সে ডিজাইন, চাহিদা পাল্টে দিয়েছে। বহির্বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাই ডিজাইনের সবচেয়ে পরিবর্তন দেখা যায় পোশাকের বটম পার্টেও।
বটমের কিছু ফ্রিল দেখা যায় সমান প্রস্থবিশিষ্ট এবং একটার ওপর আরেকটা উঠে আছে, এমন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ফ্রিলগুলো ইলাস্টিকের সাহায্যে বিন্যাসিত থাকে। কিন্তু ট্রেন্ডি পোশাকে তার বক্স প্লিট করা ফ্রিলের গুরুত্ব বেশ, যা সাধারণত ভাঁজের দূরত্ব ৩ :১ অনুপাত থাকে। ৩ :১ অনুপাতের অর্থ হলো, ১ ইঞ্চি ভাঁজের মাঝে ৩ ইঞ্চি কাপড় থাকে। দেখে মনে হয়, ভেতরের দিকে ফাঁপা।
ড্রেপিং ম্যাজিক
সেলাইবিহীন কাপড়ে ক্ল্যাসিক ড্রেপিং-এর রয়েছে পাঁচ হাজার বছরের ইতিহাস। রোমান রাজা-রাজাদের ভাস্কর্যে চোখ রাখলে আমরা অসাধারণ সব ড্রেপিং দেখে থাকি। এটা হালে ডিজাইনারদের নানাভাবে অনুপ্রাণিত করছে পোশাক নকশায়। যদিও সারা বিশ্ব থেকে হারিয়ে গেলেও এই উপমহাদেশে রয়ে গেছে ড্রেপ করে কাপড় পরার চল। যাকে ফ্যাশন আর স্টাইলের ভাষায় বলা হয়ে থাকে ‘ড্রেপিং’। স্ট্রাকচারড এবং টেইলরড-এর মিশেলে ড্রেপিং ট্রেন্ড এখন বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে টপস, কেপ, গাউন, সিঙ্গেল কামিজ, কুর্তা বা ওমেন শার্টে। নিজেকে নিজের মত প্রকাশ করার ট্রেন্ডটাই এখন ট্রেন্ডি। তাই সনাতনকে শানিয়ে নেওয়া হচ্ছে সমকালীন ফ্যাশন ফোরকাস্টের নিয়মকানুন মেনে। পোশাকের রঙহীন ক্যানভাসও এখন প্রিন্ট-কাট-প্যাটার্ন আর ড্রেপিংয়ের মুনশিয়ানায় তৈরি করছে স্বতন্ত্র সব স্টাইল স্টেটমেন্ট।
পাফি স্লিভস
সেই ছোটবেলার ঘটি হাতা ফ্রকটাই আবার ফিরছে। গত বছরও এর বেশ কদর ছিল বলিউড, হলিউড ও ফ্যাশন হাউসে। এবারও ক্যারোলিনা হেরেরা, ব্রোক কালেকশন, সিমোন রোচার মত আন্তর্জাতিক সব ফ্যাশন হাউস পাফি স্লিভকে প্রাধান্য দিচ্ছে।
প্লিটস
ফ্যাশন ডিজাইনাররা নানা রংয়ের পোশাকে প্লিটসকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন। স্কার্ট, কামিজ, টি-শার্টে পাবেন প্লিটস। তাই এবার বাকি ফ্যাশন ক্যালেন্ডারেও প্লিটস বাজিমাত করবে বলেই মনে হচ্ছে।
পলকা ডট
কিছু নকশা চিরায়ত, ইংরেজিতে বললে ‘ক্ল্যাসিক’। যুগ যুগ ধরে ব্যবহৃত হচ্ছে, কিন্তু আবেদন ফুরায় না। পোশাকের বেলায় পলকা ডট সে রকমই। ছোট-বড় নানা আকারের অনেক বৃত্ত। কখনো ছোট-বড়, কখনো একই আকারের, কখনো একরঙা, কখনো নানান রঙের। যেকোনো কাটের পোশাকে খুব সহজে নিয়ে আসে অভিজাত ভাব। পোশাকে ফিউশন বাড়াতে পলকা ডটের সাথে স্ট্রাইপ ব্যবহারের প্রাধান্য বেড়ে যেতে পারে আবারও।
আশরাফুল ইসলাম রানা
মডেল: প্রমি, জারিন, সিনি
ডিজাইন: নুরেজান্নাত, ডিজাইনার ( নিডেলওয়ার্ক )
মেকআপ: আমিনুল
আলোকচিত্রী: রক্তিম, রাউফান
তথ্যসূত্র: ট্রেন্ড স্পটার ডট কম, কসমোপলিটানডি- এইচএ