বিশ্বকাপ জয়ের রহস্য জানালেন মেসি

ছবি: সংগৃহীত

ফ্রান্সকে হারিয়ে ৩৬ বছর পর বিশ্বকাপ ফুটবলের শিরোপা জিতেছে আর্জেন্টিনা। আলবিসেলেস্তেদের এই কৃতিত্বের নায়ক অধিনায়ক লিওনেল মেসি। শৈশবের ক্লাব গ্রানডলিতে খেলার সময় থেকে বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দেখেছেন তিনি। কখনো কখনো মেসি হেরে গেছেন। হতাশা আর আবেগের কারণে ২০১৬ সালে জাতীয় দলকে বিদায়ও বলেছিলেন। কিন্তু স্বপ্ন তার পিছু ছাড়েনি। তাড়িয়ে বেড়িয়েছে। তিনি স্বপ্ন দেখতেন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার। দেশকে বিশ্বকাপ এনে দেয়ার। জানতেন, স্বপ্ন সত্যি নাও হতে পারে। কিন্তু স্বপ্ন দেখা থামাননি।

লুসাইল স্টেডিয়ামে গত রবিবারের ফাইনালে ফ্রান্সকে টাইব্রেকারে হারিয়ে ৩৬ বছর পর তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পায় আর্জেন্টিনা। আলো ঝলমলে লম্বা ফুটবল ক্যারিয়ারে অবশেষে বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন পূরণ হয় মেসির। দেশকে বিশ্বকাপ জিতিয়ে যেন ঘোরের মধ্যে আছেন তিনি। কখনো বিমানে বসে, আবার কখনো আয়েশি ভঙ্গিতে বিছানায় শুয়ে, সব সময় সঙ্গী সোনালি ট্রফিটা- বিশ্বকাপ জয়ের পর থেকে এমন সব ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দিচ্ছেন লিওনেল মেসি। সবকিছুতেই ফুটে উঠছে তার স্বপ্ন পূরণের উচ্ছ¡াস। আর্জেন্টিনা অধিনায়ক এবার একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন, দিয়েছেন আবেগঘন বার্তা। যেখানে তার শৈশব, বিশ্বকাপ নিয়ে স্বপ্ন, ব্রাজিল আসরের দুঃখগাথা, ডিয়েগো ম্যারাডোনা, কোচিং স্টাফসহ অনেক বিষয় নিয়েই লিখেছেন রেকর্ড সাতবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী তারকা। এখন সাথে জানা যায় বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার সাফল্যের রহস্য।

বিশ্বকাপ ট্রফি নিয়ে আর্জেন্টিনার সময় মধ্যরাতে রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সের বিমানবন্দরে অবতরণ করে আর্জেন্টিনা দলকে বহনকারী বিমানটি। ছাদখোলা বাসে চড়ে লাখো সমর্থকের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে স্বল্প দূরত্বে আর্জেন্টিনার ফুটবল এসোসিয়েশনে যান মেসি, ডি মারিয়া, রদ্রিগো দে পলরা।

আবেগঘন বার্তায় মেসি বলেন, ‘গ্রানডলি থেকে কাতার বিশ্বকাপ, প্রায় ৩০ বছর কেটে গেছে। বল পায়ে তিন দশকের কাছাকাছি। যে বল আমাকে অনেক আনন্দ দিয়েছে, আবার কিছু দুঃখও দিয়েছে। কিন্তু আমি সব সময় বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন দেখেছি এবং আমি হাল ছাড়িনি। এই স্বপ্ন কোনোদিন সত্যি নাও হতে পারে, এটা জেনেও লড়েছি।’

মেসির মতে, এই শিরোপা শুধু তার নয়, তার সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে খেলা খেলোয়াড়দেরও নয়। যারা সেই ১৯৮৬ বিশ্বকাপের পর থেকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার চেষ্টা করেছেন। যারা ২০১৪ বিশ্বকাপে শেষ মিনিট পর্যন্ত সর্বোচ্চটা দিয়ে শিরোপা ঘরে তোলার চেষ্টা করেছেন, তাদের সবার। তিনি লিখেছেন, ‘এই যে বিশ্বকাপ যা আমরা জিতলাম, এটা ২০১৪ সালে ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে খেলা ফুটবলারদের মতো পূর্বের আসরগুলোতে যারা শিরোপার জন্য খেলেছেন এবং জয়ের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন কিন্তু পারেননি, এটা তাদেরও শিরোপা। যারা আমার মতো এটা জিততে চেয়েছিলেন এবং কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন।’

অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার পর আর্জেন্টিনার ৩৬ বছরের আক্ষেপ ঘুচিয়ে কাতারে শিরোপা হাতে নিলেন লিওনেল মেসি। কিন্তু সে দৃশ্য মাঠে বসে দেখার জন্য ছিলেন না আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি ডিয়েগো ম্যারাডোনা। তবে এমএলটেনের বিশ্বাস, ম্যারাডোনা স্বর্গে বসেই তাদের বিজয়োল্লাস দেখেছেন। দেশে ফেরার পর কিংবদন্তিকে উৎসর্গ করেছেন ফিফা বিশ্বকাপের ট্রফি। ১৯৮৬ সালে ম্যারাডোনার হাত ধরে শেষবার বিশ্বকাপ জিতেছিল আর্জেন্টিনা। এরপর অনেক তারকাই গায়ে জড়িয়েছিল আলবিসেলেস্তেদের ১০ নম্বর জার্সি। কিন্তু কেউই কথা রাখতে পারেননি। তবে মেসির ওপর ভরসা ছিল ম্যারাডোনার। যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে তার হাত ধরে আর্জেন্টিনার তৃতীয় বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন ছিল ম্যারাডোনার।

গুরু ম্যারাডোনাকে স্মরণ করে মেসি বলেছেন, ‘স্বর্গ থেকে ম্যারাডোনা আমাদের উৎসাহ দিয়েছেন। তেমনি জাতীয় দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত সকলে ফলের দিকে না তাকিয়ে আমাদের সমর্থন জুগিয়ে গেছেন। কিছু সময় গেছে যখন সবকিছু প্রত্যাশা মতো হয়নি, তবু তারা পাশে থেকেছেন।’

সকলকে ধন্যবাদ দিয়ে মেসি লিখেছেন, ‘আমরা অসাধারণ এই দলটা গঠন করতে পেরেছিলাম, দারুণ কোচিং স্টাফ পেয়েছিলাম, যাদের সঙ্গে জাতীয় দলের অন্যরা স্বপ্নটা বাস্তবায়ন করার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করে গেছেন। এই যাত্রায় অনেকবার আমরা ব্যর্থ হয়েছি, আমরা শিখেছি এবং ওই হতাশা ছাড়া এই সাফল্য সম্ভব হয়নি। হৃদয় থেকে সকলকে ধন্যবাদ। ভামোস আর্জেন্টিনা।’

৩৬ বছরের খরা ঘুচিয়ে বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তুলল আর্জেন্টিনা। অপরদিকে তাদের চিরপ্রতিদ্ব›দ্বী ব্রাজিলের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে কোয়ার্টার ফাইনালেই। তবে অখুশি নয় দেশটি। লাতিন আমেরিকাতেই বিশ্বকাপ যাওয়ায় উচ্ছ¡সিত দেশটির তারকা ফুটবলাররা। ইতোমধ্যেই আলবেসিলেস্তেদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অনেকেই।

এবার আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জেতানোর নায়ক মেসিকে আমন্ত্রণ করেছে দেশটি। তাদের বিখ্যাত মারাকানা স্টেডিয়ামের ‘হল অব ফেমে’ তার নাম যুক্ত করা হব। যে কারণে পায়ের ছাপ লাগবে পিএসজির এই ফরোয়ার্ডের। মারাকানা স্টেডিয়ামের পরিচালনাকারী রিও ডি জেনেরিওর প্রাদেশিক ক্রীড়া সুপারিনটেনডেন্ট মেসিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। সভাপতি আদ্রিয়ানো সান্তোস মেসির কাছে আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়েছেন আর্জেন্টাইন এফএর মাধ্যমে। আমন্ত্রণপত্রে লেখা হয়েছে, ‘মেসি এরই মধ্যে মাঠ ও মাঠের বাইরে তার গুরুত্ব দেখিয়েছেন। তিনি এমন খেলোয়াড়, যিনি ফুটবলের বহু বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ অবস্থানে। তাকে মারাকানায় শ্রদ্ধা জানানোর চেয়ে উপযুক্ত কিছুই আর হতে পারে না।’

মেসি যদি ব্রাজিলের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে ব্রাজিলে যান, তাহলে বিরাট সম্মানে ভূষিত হবেন তিনি। ফুটবলের কিংবদন্তিদের সঙ্গেই তার পায়ের ছাপও থাকবে মারাকানায়। ব্রাজিলের পেলে, গ্যারিঞ্চা, রিভেলিনো, রোনালদো নাজারিওর পাশাপাশি চিলির এলিয়াস ফিগুয়েরোয়া, সার্বিয়ার ডিজান পেটকোভিচ, পর্তুগালের ইউসেবিও, উরুগুয়ের সেবাস্তিয়ান আবরিউ ও জার্মানির ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার মারাকানায় গিয়ে পায়ের ছাপ দিয়েছেন।ডি- এইচএ 

LEAVE A REPLY