কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে গত আসরের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে হারিয়ে তৃতীয় বারের মতো বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয় আর্জেন্টিনা। বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় আর্জেন্টিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে একটি বার্তা পাঠিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই বার্তার জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের মানুষকে ধন্যবাদ জানিয়ে টুইট করেছেন আলবিসেলেস্তেদের রাষ্ট্রপ্রধান অ্যাঞ্জেল ফার্নান্দেজ।
গত মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে বাংলাদেশ সরকারপ্রধানকে ধন্যবাদ জানান তিনি। টুইটে ফার্নান্দেজ লেখেন, ধন্যবাদ শেখ হাসিনা এবং পুরো বাংলাদেশের জনগণকে। সা¤প্রতিক সময়ে আর্জেন্টিনার প্রতি আপনার দেশের মানুষের যে ভালোবাসা দেখেছি, তা বর্ণনাতীত। নীল-সাদা পতাকার পাশাপাশি আমাদের দেশে লাল-সবুজের পতাকাও উড়ছে। আসুন, এই সম্পর্ককে আরো গভীর করি।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বার্তায় বলেন, আর্জেন্টিনার দুর্দান্ত জয়ে বাংলাদেশের জনগণ ও আমার নিজের পক্ষ থেকে আপনাকে, আর্জেন্টিনা প্রজাতন্ত্রের বন্ধুত্বপূর্ণ জনগণ এবং বিশ্বকাপ জয়ী দলকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। আপনার জাতীয় ফুটবল দলের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের স্বতঃস্ফূর্ত উদযাপনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ প্রশংসা ও ভালোবাসার পরিচয় দিয়েছে। আমাদের দুই দেশের জনগণের মধ্যে এই অভূতপূর্ব ভালোবাসা, স্নেহ ও দৃঢ় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের পথ প্রশস্ত করেছে।
আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের প্রতি বাংলাদেশের এই ভালোবাসা নতুন নয়। বিশ্বকাপ ফুটবলে বরাবরই বাংলাদেশের মানুষের কাছে প্রিয় নাম আর্জেন্টিনা। ম্যারাডোনার সময় থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত আর্জেন্টিনা দলের প্রতিটি জয়েই পাশে থেকে সমর্থন জোগান বাংলার ফুটবলপ্রেমীরা। কাতার বিশ্বকাপ চলাকালীন বাংলাদেশের মানুষের এই সমর্থনের খবর পৌঁছে যায় আর্জেন্টিনায়। কাতার বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার পরেই বাংলাদেশের সমর্থকরা পতাকা হাতে, জার্সি পরে আর্জেন্টিনার সমর্থনের জানান দেন। বিশ্বকাপ ফুটবলে অকুণ্ঠ সমর্থনের জন্য বাংলাদেশকে আরো ধন্যবাদ জানায় আর্জেন্টিনা জাতীয় ফুটবল দল। কাপ জয়ের আগেও বিশ্বকাপ চলার সময় বাংলাদেশি ভক্তদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আর্জেন্টিনা। সেলেকন আর্জেন্টিনা নামে দলীয় টুইটার একাউন্ট থেকে দেয়া এক পোস্টে বলা হয়, ধন্যবাদ বাংলাদেশ। ধন্যবাদ কেরালা, ভারত, পাকিস্তান। আপনাদের সমর্থন অসাধারণ ছিল। এছাড়া বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানিয়েছে অসংখ্য আর্জেন্টাইন নাগরিক। ফেসবুকে ‘ফ্যানস আর্জেন্টিনোস ডে লা সেলেকন ডি ক্রিকেট ডি বাংলাদেশ’ (বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের আর্জেন্টিনার ভক্তরা) নামের গ্রুপটিতে বাংলাদেশি সমর্থকদের প্রতি ধন্যবাদ জানায় তারা। বাংলাদেশে আর্জেন্টিনার ভক্ত অনেক। ছিয়াশিতে ম্যারাডোনার বিশ্বজয় দিয়ে শুরু। এখন লিওনেল মেসিতে মন্ত্রমুগ্ধ সবাই। ভক্তও বেড়েছে আগের চেয়ে অনেক বেশি। ফ্রান্সকে হারিয়ে আর্জেন্টিনার বিশ্বজয়ের পর গোটা বাংলাদেশ বুঁদ হয়ে ছিল মেসিদের উন্মাদনায়।
কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে ৩-৩ গোলের সমতায় হৃদয় হিম করা ও স্নায়ু জমাট বাঁধানো ম্যাচে টাইব্রেকারে ফ্রান্সকে হারিয়ে ৩৬ বছরের শিরোপা খরা কাটায় লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা। কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার প্রতিটি জয়ে বাংলাদেশের আর্জেন্টিনা ভক্তদের হৃদয়ে বয়ে যায় আনন্দের জোয়ার। গভীর রাতে রাস্তায় হয় মিছিল। বাংলাদেশি আর্জেন্টাইন ভক্তদের এ উল্লাসের আওয়াজ পৌঁছে যায় বিশ্ব ফুটবলের প্রধান নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা পর্যন্ত।
বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের আর্জেন্টিনা সমর্থকদের উল্লাসের ভিডিও শেয়ার করেছে ফিফা। বিশ্বকাপ শুরুর মাঝপথে রাজধানীর ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আর্জেন্টিনা-মেক্সিকো ম্যাচ দেখার একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়েছিল ফিফার অফিসিয়াল টুইটারে। লিওনেল মেসির গোল উদযাপনের ভিডিও ছিল সেটি। ক্যাপশনে লেখা হয়েছিল, এটাই ফুটবলের শক্তি। বাংলাদেশের আর্জেন্টিনা-সমর্থকেরা এভাবেই লিওনেল মেসির গোল উদযাপন করেছেন। এরপর বাংলাদশি ব্রাজিল সমর্থকদের বাঁধভাঙা উল্লাসের ছবি পোস্ট করে ফিফা। সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ১-০ ব্যবধানে জিতে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করে ব্রাজিল। ঢাকায় বড় পর্দায় ওই ম্যাচ দেখার দৃশ্য পোস্ট করে ফিফা। ভক্তদের উল্লাসের কয়েকটি ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখে, ফুটবলের মতো অন্য কিছু মানুষকে এতটা একত্র করতে পারে না।
বিশ্বকাপ জয়ের পর এবার লিওনেল মেসিকে বাংলাদেশে আনার উদ্যোগ নিয়েছে বাফুফে। আজ থেকে ১১ বছর আগে বাংলাদেশের মাটিতে পা রেখেছিলেন আর্জেন্টিনার ফুটবল জাদুকর লিওনেল মেসি। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ খেলেছিল আর্জেন্টিনা। ২০১১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর গ্যালারিতে থাকা অসংখ্য মানুষ নিজ চোখে দেখেছিলেন মেসিকে। ব্রাজিলে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সাদিয়া ফয়জুন্নেসা আর্জেন্টিনার জাতীয় সংবাদ সংস্থা তেলাম-কে বলেছেন মেসিকে বাংলাদেশে আনার কথা। তার বক্তব্য ‘ক্লারিন’ প্রকাশ করেছে এভাবে, ‘আমরা মেসিকে বাংলাদেশে নিয়ে আসতে চাই। আমরা এটা করার চেষ্টা করব। বাংলাদেশে আমরা একটি ম্যাচ আয়োজন করতে চাই। মেসি বাংলাদেশে খুব জনপ্রিয়। আমরাও ফুটবলের জন্য আর্জেন্টাইনদের ভালোবাসি। তাই আমাদের দেশে তাকে পাওয়া হবে সম্মানের ব্যাপার। এর আগে ২০১৪ সালে জার্মানির বিপক্ষে টুর্নামেন্টের ফাইনালে হেরে যাওয়া লাতিন আমেরিকার এ দলটি ১৯৮৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিশ্বকাপ জিততে পারেনি।ডি- এইচএ