প্রতিদিন যেতে পারবে ৪০ হাজার পর্যটক
বঙ্গোপসাগরের ঢেউ আর বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত ঘেঁষে সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের সাবরাংয়ে ট্যুরিজম পার্কের কাজ এগিয়ে চলেছে। কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের পাশে এই ট্যুরিজম পার্কটি ১ হাজার ৪৭ একর জমির ওপর থাইল্যান্ডের পাতায়ার সৈকতের আদলে গড়ে তোলা হচ্ছে। পার্কটির চলমান কাজ শেষ হলে প্রতিদিন সেখানে ৪০ হাজার পর্যটক যাতায়াত করতে পারবেন। সাবরাং পর্যটন অঞ্চল চালু হলে মাত্র আধা ঘণ্টায় যাওয়া যাবে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে। সমুদ্রসৈকত দেখার পর পর্যটকরা সাবরাং পর্যটন অঞ্চল ও সেন্টমার্টিন অল্প সময়ে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। কক্সবাজারের কলাতলী থেকে টেকনাফের যেখানে মেরিন ড্রাইভ শেষ হয়েছে, তার পাশের জমিতে গড়ে তোলা হচ্ছে সাবরাং পর্যটন অঞ্চল।
সাবরাং পর্যটন অঞ্চল হবে দক্ষিণ এশিয়ার সেরা পর্যটন অঞ্চল। বিনিয়োগ হবে কয়েক হাজার কোটি টাকা। সেখানে থাকবে পরিবেশবান্ধব শহর, সুন্দরবনের থিম পার্ক ও নাইট সাফারি, রয়্যাল ক্যাসিনো, গলফ ক্লাব, অ্যাকোয়ারিয়াম, জাদুঘর, হেরিটেজ পার্ক, শপিং মল, রেস্টুরেন্ট, ক্লাবসহ অন্যান্য সুবিধা। এছাড়া থাকছে ১০০ শয্যার হাসপাতাল এবং একটি স্কুলও। গত বছরের সেপ্টেম্বরে নির্মাণাধীন সাবরাং ট্যুরিজম পার্কের কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করেছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনটি তারকা হোটেল নির্মাণকাজ শুরুর মধ্য দিয়ে সাবরাং ট্যুরিজম পার্কের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়। গ্রেট আউটডোর এন্ড অ্যাডভেঞ্চার লিমিটেড, গ্রিন অরচার্ড হোটেল এন্ড রিসোর্টস লিমিটেড এবং সানসেট বে লিমিটেড নামের তিনটি প্রতিষ্ঠান ৫ দশমিক ৫ একর জমিতে ৩২ দশমিক ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ২৫৭ কোটি টাকা বিনিয়োগের মাধ্যমে পাঁচ তারকা ও তিন তারকা মানের হোটেলসহ পর্যটনবান্ধব বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের এই কাজ করছে বলে জানা গেছে।
এছাড়া ৯টি পর্যটনবান্ধব প্রতিষ্ঠানের আরো ২১২ দশমিক ৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করার কথা রয়েছে। এই বিনিয়োগকারীর তালিকায় নেদারল্যান্ডস ও সিঙ্গাপুরের দুটি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। পাতায়ার আদলেই হচ্ছে সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক। আর এখানে প্রতিদিন যাতায়াত করতে পারবে ৪০ হাজার পর্যটক। বর্তমানে এই পর্যটন অঞ্চলের প্রশাসনিক ভবন ও ভূমি উন্নয়ন, প্রতিরক্ষা বাঁধ, সেতু-কালভার্ট তৈরিসহ বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলছে।
সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামালের সভাপতিত্বে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় টেকনাফের সাবরাং ট্যুরিজম পার্কের ভূমি উন্নয়ন বাবদ ১৮০ কোটি ৭৯ লাখ ৯ হাজার ২৪৮ টাকা অনুমোদন করা হয়েছে।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) কর্তৃক ‘সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক’ এর ‘ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্ক ইন সাবরাং পার্ক’ প্যাকেজ নম্বর ডব্লিউ-০৯ এর পূর্ত কাজ যৌথভাবে পেয়েছে টিডিসি এবং জেডএইচইসি ঢাকা। এতে ব্যয় হবে ১৮০ কোটি ৭৯ লাখ ৯ হাজার ২৪৮ টাকা। এর আগে কক্সবাজারের সীমান্ত শহর টেকনাফের সাবরাংয়ে মিঠাপানি সরবরাহের বড় পরিকল্পনা হাতে নেয় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, আগামী ৩০ বছরে ৬ ধাপে ৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে। অতিরিক্ত লবণাক্ত পানিতে তৈরি হওয়া সংকট দূর করে বিনিয়োগ পরিবেশ তৈরি করতে এমন পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। ওই প্রকল্পের আওতায় ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত উখিয়ার পাহাড়ি অঞ্চল থেকে সরবরাহ লাইনের মাধ্যমে মিঠা পানি যাবে।
বেজার নিজস্ব উদ্যোগে নেয়া এই পরিকল্পনা অনুসারে ২০৫০ সাল পর্যন্ত ছয়টি ধাপে বাস্তবায়ন হবে এই প্রকল্প। সব মিলিয়ে সম্ভাব্য খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা। প্রথম ধাপের কাজ হবে ২০২১ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত। এতে খরচ হবে ১৪৪ কোটি টাকা। দ্বিতীয় ধাপে খরচ হবে আরো ৮ কোটি টাকা। সেন্টমার্টিনের পাশাপাশি পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা অত্যাধুনিক এই অঞ্চল ব্যাপক পর্যটক আকর্ষণে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে বেশ কিছু বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বেজা সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে গ্যাস, পানি, বিদ্যুতের মতো ইউটিলিটির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানকে অতি দ্রুত নির্মাণকাজ শুরু করার তাগিদ দেন ইউসুফ হারুন। পাশাপাশি এই অঞ্চলের প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে রেখে পাঁচ কিলোমিটার সমুদ্রসৈকত পর্যটকদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে বলেও জানান বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান।
প্রসঙ্গত, গত রবিবার (২০ নভেম্বর) সকালে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে কক্সবাজারের টেকনাফে সাবরাং ট্যুরিজম পার্কের প্রশাসনিক ভবনসহ ৫০টি শিল্প ও অবকাঠামোর উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রকল্প উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন একযোগে মোট আটটি ভেন্যু থেকে অনুষ্ঠিত হয়।
ভেন্যুগুলো হলো- গণভবন, ঢাকা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর (মিরসরাই, চট্টগ্রাম), শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল (শ্রীহট্ট, মৌলভীবাজার), কর্ণফুলী ড্রাইডক এসইজেড (আনোয়ারা, চট্টগ্রাম), মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অর্থনৈতিক অঞ্চল (সোনারগাঁও, নারায়ণগঞ্জ), জামালপুর অর্থনতিক অঞ্চল (জামাপুর সদর), সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক (সাবরাং, কক্সবাজার) ও হোসেন্দি অর্থনৈতিক অঞ্চল (গজারিয়া, মুন্সীগঞ্জ)। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।কেএইচ স