দেশের মোট জনসংখ্যার ২ দশমিক ৮০ শতাংশ প্রতিবন্ধী। এই প্রতিবন্ধীর মধ্যে পুরুষ ৩ দশমিক ২৮ শতাংশ এবং নারী ২ দশমিক ৩২ শতাংশ। এক্ষেত্রে ১১ ধরনের প্রতিবন্ধিতার শিকার তারা। ২০১১ সালের জনশুমারির তথ্যানুযায়ী মোট প্রতিবন্ধীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৪০ লাখ ৩৩ হাজার ২৬৮ জনে। সবচেয়ে বেশি প্রতিবন্ধী মানুষ রয়েছে খুলনা বিভাগে ৩ দশমিক ৬২ শতাংশ এবং সবচেয়ে কম রয়েছে সিলেট বিভাগে ২ দশমিক ১৫ শতাংশ। জন্মগত সমস্যায় সবচেয়ে বেশি ৪১ দশমিক ০৯ শতাংশ মানুষ প্রতিবন্ধী হচ্ছেন। সেই সঙ্গে কর্মক্ষম হলেও কর্মের বাইরে রয়েছেন ৬৬ দশমিক ২২ শতাংশ প্রতিবন্ধী মানুষ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জাতীয় প্রতিবন্ধী ব্যক্তি জরিপ-২০২১ এর চূড়ান্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য। মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিবিএস অডিটোরিয়ামে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
এতে সভাপতিত্ব করেন বিবিএসের মহাপরিচালক মতিয়ার রহমান। প্রধান অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন। বিশেষ অতিথি ছিলেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (গ্রেড-১) ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল। বক্তব্য দেন বিবিএসের ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ ইউং-এর পরিচালক মাসুদ আলম। মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন জাতীয় প্রতিবন্ধী ব্যক্তি জরিপ প্রকল্পের পরিচালক ইফতেখাইরুল করিম। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম-সচিব ড. দিপংকর রায়।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, জরিপ পরিচালনার জন্য হাতে নেওয়া প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এটি ২০১৯ সালের জুলাই থেকে চলতি ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদে বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রতিবেদন বলা হয়, দেশের মোট প্রতিবন্ধীর মধ্যে শহরে জনসংখ্যার ২ দশমিক ৪৫ শতাংশ এবং পল্লি এলাকায় ২ দশমিক ৮৯ শতাংশ। প্রতিবন্ধী মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শারীরিক প্রতিবন্ধী ১ দশমিক ৩৫ শতাংশ। এছাড়া অটিজম আছে শূন্য দশমিক ০৫ শতাংশ। প্রতিবন্ধিতা তৈরি করে এমন মানসিক অসুস্থতা আছে শূন্য দশমিক ২৯ শতাংশ। আরও আছে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শূন্য দশমিক ৪৬ শতাংশ, বাকপ্রতিবন্ধী শূন্য দশমিক ৩২ শতাংশ, বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিবন্ধী শূন্য দশমিক ২২ শতাংশ এবং শ্রবণপ্রতিবন্ধী শূন্য দশমিক ৩৮ শতাংশ। এছাড়া সেবিয়াল পালসি শূন্য দশমিক ০৮ শতাংশ, ডাউন সিন্ড্রোম শূন্য দশমিক ০৪ শতাংশ, শ্রবণ ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিতা শূন্য দশমিক ০২ শতাংশ, বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধিতা শূন্য দশমিক ৩৫ শতাংশ এবং অন্যান্য প্রতিবন্ধিতা শূন্য দশমিক ০৫ শতাংশ।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ঢাকা বিভাগের প্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা ২ দশমিক ৫১ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে ২ দশমিক ৪১, বরিশালে ২ দশমিক ৪২, ময়মনসিংহে ২ দশমিক ৪৫, রাজশাহীতে ৩ দশমিক ৩০ এবং রংপুর বিভাগের প্রতিবন্ধী আছে ৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ। অসুস্থতাজনিত কারণে প্রতিবন্ধী হয়েছে ৩৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ, গাছ বা ছাদ থেকে পড়ে ১২ দশমিক ২৭ শতাংশ, সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং আগুন দুর্ঘটনায় ১ দশমিক ০৮ শতাংশ। এছাড়া বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে শূন্য দশমিক ৪৬ শতাংশ, রেল দুর্ঘটনায় শূন্য দশমিক ০৫ শতাংশ এবং অন্যান্য দুর্ঘটনায় প্রতিবন্ধী হচ্ছে ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ মানুষ। সেই সঙ্গে বেশি বয়স্ক মানুষের মধ্যে প্রতিবন্ধিতার হার বেশি বলে লক্ষ করা গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈষম্যমূলক আচরণ বা নিগ্রহের শিকার হয়েছেন এমন প্রতিবন্ধীর শতকরা হার ৪৩ দশমিক ৭০। এছাড়া যাদের নিবন্ধন রয়েছে এমন প্রতিবন্ধীরা কখনো ভাতা পেয়েছেন তাদের হার ৯১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত মিলে ভাতা পেয়েছেন ৩৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ প্রতিবন্ধী।
প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. শাহনাজ আরেফিন বলেন, এসব তথ্য সরকারের নীতিনির্ধারণ এবং গবেষণাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্র ব্যাপক অবদান রাখবে। এর ফলে প্রতিবন্ধীদের কল্যাণ এবং তাদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি পরিকল্পনা নেওয়াটা সহজ হবে।
ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল বলেন, প্রতিবেদনে দেখা গেছে-সাধারণ মানুষের চেয়ে প্রতিবন্ধীরা সব ধরনের কাজে আড়াইগুণ পিছিয়ে আছে। এটি একেবারেই নতুন একটি বিষয়। এছাড়া প্রতিবন্ধীদের মধ্যে কর্মে নিয়োজিত নয় এমন সংখ্যা মোট প্রতিবন্ধীর ৬৬ দশমিক ২২ শতাংশ। এর বাইরে কর্মে নিয়োজিত আছেন ৩৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এসব তথ্য নীতিনির্ধারণের ব্যাপক কাজে আসবে।