দিল্লির সুলতানপুরীতে স্কুটার আরোহী তরুণী নিহতের ঘটনায় ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ ছড়িয়েছে। ছবি: বিবিসি
খ্রিস্টীয় নতুন বছরের উদযাপনকালে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে ঘটে যায় মর্মান্তিক এক সড়ক দুর্ঘটনা। ওয়ো হোটেলে পার্টি সেরে বেরিয়ে আসার ১৫ মিনিট নাগাদ এই দুর্ঘটনার শিকার হন অঞ্জলি সিং ও তার বন্ধু নিধি। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান অঞ্জলি সিং।
রাত দুইটার দিকে সুলতানপুরি এলাকায় অঞ্জলি ও নিধিকে বহনকারী স্কুটারটিকে ধাক্কা দেয় একটি গাড়ি। এতে অঞ্জলি ছিটকে পড়ে তার পা গাড়ির সামনের এক্সেলে আটকে যায়। এ অবস্থায় গাড়িটি এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে প্রায় ১৩ কিলোমিটার রাস্তা তাঁকে হিঁচড়ে নিয়ে চলে। এ সময় গাড়িটি দুবার ইউটার্নও নেয়। তৃতীয় ইউটার্নটি নেওয়ার সময় অঞ্জলির শরীরটি গাড়ি থেকে ছুটে যায়। খবর এনডিটিভি ও রয়টার্সের।
দুর্ঘটনার বর্ণনা দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, ওই রাতেই দুটি ফোনকল পাওয়ার পর গাড়িটির খোঁজে নামে তারা। একটি কলে বলা হয়, একজন নারীকে মারুতি বালেনো গাড়ি টেনে নিয়ে যাচ্ছে। আর অপর কলে বলা হয়, উত্তর দিল্লির একটি রাস্তায় একজন নারীর মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
গাড়িটিকে জব্দ করেছে পুলিশ। পাশাপাশি অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গাড়িতে থাকা পাঁচজন (গ্রেপ্তারকৃত) ওই সময় মদ্যপান করছিলেন বলে অভিযোগ এসেছে। তাদের ভাষ্য, স্কুটারটিকে ধাক্কা দেয়ার পর তারা ভয়ে পালিয়ে যান। গাড়িটি ওই তরুণীকে নিয়ে ১৩ কিলোমিটার রাস্তা যাওয়ার পর কানঝাওয়ালার একটি ইউটার্ন নেয়ার সময় তাদের মধ্যে একজন খেয়াল করেন, গাড়ির নিচ থেকে একটি হাত বের হয়ে আছে। সেখানে গাড়ি থামিয়ে তারা ওই তরুণীকে বের করে রেখে সেখান থেকে সটকে পড়েন।
ভিডিও ফুটেজে যা দেখা যায়দ
ওয়ো হোটেলের এক কর্মী বলেন, তারা দুজন ঝগড়া করছিল। পরে ম্যানেজার তাদের চলে যেতে বলেন। তাদের স্কুটিতে করে চলে যান তারা। এ দুর্ঘটনার পর থেকে হোটেলটি বন্ধ রয়েছে।
পাশের হোটেল রোহানির সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, ওয়ো হোটেলের সামনেই দুই বন্ধুর মধ্যে ঝগড়া ও ধাক্কাধাক্কি হয়। একপর্যায়ে হোটেল স্টাফ সেখান থেকে চলে যেতে বলেন তাদের।
আরেকটি ফুটেজে দেখা যায়, নিধি স্কুটার চালাচ্ছেন। পেছনে অঞ্জলি। এর কিছুক্ষণ পর দুজনের আসন পরিবর্তন হতে দেখা যায়।
নিধির জবানবন্দি
ওই স্কুটারে আরও একজন ছিলেন, প্রাথমিকভাবে পুলিশ তা জানতে পারেনি। পরে হোটেল রেজিস্ট্রার ও সিসিটিভি ফুটেজ দেখার পর পুলিশ নিধির উপস্থিতি জানতে পারে।
নিধি বলেন, দুর্ঘটনার পর তিনি ভয়ে সেখান থেকে চলে আসেন। ভয়ে এই নিয়ে তিনি কাউকে কিছু বলেননি। ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দেয়া জবানবন্দিতে নিধি বলেন, গাড়িচালকের ভুল ছিল। গাড়িটির ধাক্কায় স্কুটারটি দুমড়ে মুচড়ে যায়। সংঘর্ষের পর অঞ্জলি গাড়ির সামনে পড়ে যান, আর তিনি (নিধি) অন্য পাশে। তার গায়ে কোনো আঘাতও লাগেনি। সেখানে সরে পড়েন তিনি।
পরিবারের ভাষ্য
ওই তরুণীর স্বজনেরা বলেন, পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি এই তরুণী। তাদের অভিযোগ, হত্যার আগে তাকে যৌন নিপীড়ন করা হয়েছে। এদিকে, টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়, তরুণীর মা প্রশ্ন তুলেছেন, মরদেহটি কেন নগ্ন অবস্থায় ছিল? আর তার চাচার কাছে মরদেহ দেখে মনে হয়েছে, ‘তাকে যৌন নির্যাতন’ করে হত্যা করা হয়েছে।
পুলিশ যখন অঞ্জলির মরদেহ পায়, তখন তার শরীরে কোনো কাপড় ছিল না। তার গায়ের চামড়া উঠে গেছিল।
উত্তপ্ত রাজনৈতিক অঙ্গন
অভিযুক্তদের একজন ভারতের কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সদস্য হওয়ায় রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। শহরের নিরাপত্তাব্যবস্থাকে দুর্বল দাবি করে কেন্দ্রীয় সরকারকে দুষছে দিল্লির ক্ষমতাসীন দল আম আদমি পার্টি। তারা বলছে, নগর পুলিশ বাহিনীর ওপর এএপির কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এই বাহিনী কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন।ডি- এইচএ