ফাইল ছবি
৩ দিনে ১১ বার ভোটভুটি হওয়ার পরেও স্পিকার নির্বাচন করতে ব্যর্থ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ বা প্রতিনিধি পরিষদ। এমন কলঙ্কিত অচলাবস্থা সর্বশেষ হয়েছিল ঠিক ১০০ বছর আগে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রাক্? গৃহযুদ্ধ যুগের পর এমন দৃশ্য আর দেখেনি যুক্তরাষ্ট্র। সে সময় প্রতিনিধি পরিষদে স্পিকার নির্বাচনে মোট ৪৪ দফা ভোট হয়।
গত নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন জিতে প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণ পায় রিপাবলিকান পার্টি। তবে প্রতিনিধি পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও দলীয় বিভক্তির কারণে রিপাবলিকানরা এখন পর্যন্ত স্পিকার নির্বাচিত করতে পারেননি। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, দলটিতে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বিরোধ এখন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে স্পিকার নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত ভোট চলবে। এর আগে ১৯২৩ সালে দেশটির প্রতিনিধি পরিষদে স্পিকার নির্বাচন মুলতবির ঘটনা ঘটেছিল।
মার্কিন কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটল হিলের প্রতিনিধি পরিষদ অংশে গভীর রাতেও আলো জ্বলতে দেখা গেছে। চলছে দাপ্তরিক কাজ। অচলাবস্থা নিয়ে গতকাল এমন ছবি প্রকাশ করেছে রয়টার্স। কংগ্রেসের নি¤œকক্ষে যখন আরো ক্ষমতার জন্য বিদ্রোহ চলছে, তখন নিজেদের কাজটা সেরে নীরবে শহর ছেড়েছেন উচ্চকক্ষ সিনেটের সদস্যরা। উদ্বেগের সঙ্গে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে পুরো জাতি।
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি : প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার নির্বাচন নিয়ে এই অচলাবস্থা নতুন কিছু নয়। ঠিক ১০০ বছর আগেও কংগ্রেসের নিম্নকক্ষে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। ২০২৩ সালে এসে কেভিন ম্যাকার্থি যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন ১৯২৩ সালে একই ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিলেন আরেক রিপাবলিকান নেতা ফ্রেডেরিখ এইচ গিলেটও।
ফয়সালা হচ্ছে না যে কারণে : স্পিকার নির্বাচনের ভোটাভুটিতে ২০ জন রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা ম্যাকার্থির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তাদের মধ্যে সবচেয়ে ডানপন্থি কয়েকজন যারা ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল অস্বীকার করে আসছেন। আর তাদের প্রায় সবাই উগ্র-রক্ষণশীল ফ্রিডম ককাসেরও সদস্য। স্পিকার হতে রিপাবলিকান ম্যাকার্থির প্রয়োজন ২১৮ ভোট। প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকানদের আছে ২২২টি। কিন্তু ক্যালিফোর্নিয়ার এই রিপাবলিকান প্রতিনিধিকে স্পিকার পদে সমর্থন দিচ্ছেন না পার্টিরই উগ্র ডানপন্থি আইনপ্রণেতারা। ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলার পরও ম্যাকার্থি বিদ্রোহী রিপাবলিকানদের সমর্থন পাচ্ছেন না।
সর্বশেষ ভোটে ম্যাকার্থি পেয়েছেন ২০০ ভোট। ম্যাকার্থির বিরুদ্ধে রিপাবলিকান বায়রন ডনাল্ডসকে ভোট দিয়েছেন ১২ জন। অন্যদিকে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জেফরিস ২১২টি ভোট পেয়েছেন। ফলে স্পিকার পদে ২১৮ ভোটের নিশ্চিত করতে পারছেন না তিনি। এদিকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের
দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির আসন সংখ্যা ২১২টি।
কট্টরপন্থিরা তাহলে কী চান : ম্যাকার্থির বিরুদ্ধে ডানপন্থিদের এই বিদ্রোহ কেবল ব্যক্তিগত বিরোধের জায়গাতেই সীমাবদ্ধ নেই। এখানে মতাদর্শিক বিষয়ও রয়েছে। বিদ্রোহীরা কেন্দ্রীয় সরকারের আকার, কাজ ও কাজের পরিধিকে ব্যাপকভাবে সীমিত করতে চান। আর কংগ্রেস এই কাজটি যেন সহজভাবে করতে পারে, সেভাবেই কংগ্রেসের কার্যপ্রণালিতে সংস্কার আনতে চান।
এত ছাড়ের পরও সায় নেই : কট্টরপন্থিদের ভোট পেতে কয়েকটি বিষয়ে ছাড় দিয়েছেন ম্যাকার্থি। এমন কিছু পদক্ষেপের বিষয়ে তিনি সায় দিয়েছেন যাতে স্পিকারের ভূমিকা দুর্বল হয়ে পড়বে। অথচ আগে এ ধরনের পদক্ষেপ সমর্থন করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছিলেন এই রিপাবলিকান। ছাড় দেয়ার পরও ভিন্নমতাবলম্বীদের সমর্থন আদায় করতে সক্ষম হননি ম্যাকার্থি। এখন পর্যন্ত স্পিকার নির্বাচিত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ভোট নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি।
তাহলে বিকল্প কী : স্পিকার পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় একটি বড় সুবিধা পাচ্ছেন ম্যাকার্থি। আর সেটা হলো- এখন পর্যন্ত তাকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো কোনো রিপাবলিকান প্রার্থীকে উঠে আসতে দেখা যায়নি। এরই মধ্যে হওয়া কয়েক দফা ভোটাভুটিতে কেউই প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারেননি। তবে রিপাবলিকানরা অন্য কারো দিকেও ঝুঁকতে পারেন। এক্ষেত্রে এগিয়ে আছেন স্টিভ স্কেলিস। প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকানদের দ্বিতীয় এই শীর্ষ নেতা ম্যাকার্থির ডেপুটি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
সমাধান কোন পথে : প্রতিনিধি পরিষদের বর্তমান অচলাবস্থার কারণ নিয়ে বিশদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক পোস্ট। ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতার আলোকে কোন পথে এই অচলাবস্থার অবসান হতে পারে, সেটা নিয়েও প্রতিবেদনে ধারণা দেয়া হয়েছে। প্রতিনিধি পরিষদের অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, স্পিকার পদে কোনো একজন প্রার্থীর সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে ভোটাভুটি চলতে থাকে। স্পিকার নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত প্রতিনিধি পরিষদ মূলত একটি অকেজো প্রতিষ্ঠান। এটি কোনো আইন পাস করতে পারে না। এমনকি সদস্যদের শপথও দিতে পারে না। স্পিকার নির্বাচনে এ ধরনের অচলাবস্থা সচরাচর দেখা যায় না।
কংগ্রেসের শুরুর দিকে স্পিকার নির্বাচন নিয়ে বারবার ভোটাভুটির ঘটনা কিছু সময় পরপরই ঘটত। তবে প্রায় সবগুলো ঘটনাই ঘটেছে গৃহযুদ্ধের আগে। ওই সময় দলগত অবস্থানের মাত্রা এতটা দৃঢ় ছিল না। প্রতিনিধি পরিষদের পুরনো নথিপত্র অনুযায়ী, স্পিকার নির্বাচনে একাধিকবার ভোটাভুটির ঘটনা ঘটেছে কমপক্ষে ১৪ বার। এর মধ্যে ১৮৮৬ সালে স্পিকার নির্বাচনে রেকর্ড ১৩৩ বার ভোটাভুটি হয়েছিল। এরপর ১৯২৩ সালে স্পিকার নির্বাচনের ভোটাভুটিও ৩ দিন প্রলম্বিত হয়। ওই সময় নবম দফা ভোটে ফিনিস জে গ্যারেটকে ২১৫-১৯৭ ভোটে পরাজিত করে স্পিকার হয়েছিলেন গিলেট। ওই সময়কার অচলাবস্থার অবসান চলতি বছরের সংস্করণের চেয়ে তুলনামূলক তাড়াতাড়িই হয়েছিল। বর্তমান অচলাবস্থাও গতকাল বৃহস্পতিবার তৃতীয় দিনে গিয়ে ঠেকে। এদিন ১১তম বারের মতো ভোটাভুটি হলেও এখন পর্যন্ত স্পিকার পায়নি প্রতিনিধি পরিষদ।এনজে