বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সঙ্গে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)-এর নব-নির্বাচিত সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তারের নেতৃত্বে পরিচালনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দ সাক্ষাৎ করেছেন।
সোমবার (৯ জানুয়ারি) বাংলাদেশ সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীর কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন তারা। ঢাকা চেম্বারের ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি এস এম গোলাম ফারুক আলমগীর (আরমানবাণিজ্য), সহ-সভাপতি মো জুনায়েদ ইবনে আলী সহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
সাক্ষাৎকালে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার বলেন, এলডিসি উত্তরণের পর বাংলাদেশের রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা হতে বঞ্চিত হবে এবং অনেক উন্নয়নশীল দেশে পণ্য রপ্তানিতে ৮-১৬% হারে শুল্ক প্রদান করতে হবে, এমতাবস্থায় আমাদের রপ্তানির ধারাকে অব্যাহত রাখতে সম্ভাবনাময় দেশগুলোর সাথে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষর, প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন ও সংষ্কার এবং স্থানীয় শিল্পখাতের প্রস্তুতি প্রভৃতি বিষয়ে কার্যকর কৌশল নির্ধারণ একান্ত অপরিহার্য।
তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমানের আমাদের রপ্তানির বাজার অধিক মাত্রায় ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীল, তবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও আফ্রিকায় নতুন নতুন বাজারে পণ্য রপ্তানিতে আরো বেশি হারে নজর দিতে হবে, সেই সাথে এলডিসি পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রাপ্তির লক্ষ্যে রপ্তানি সম্ভাবনাময় দেশগুলোর সাথে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে।
ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার বলেন, ২০২৬ সালের পর বৈশ্বিক বাজারে নিজেদের সঢাকাক্ষমতা বৃদ্ধিতে পণ্য আমদানিতে বিদ্যমান আমদানি শুল্ক হার হ্রাস করা প্রয়োজন, কারণ প্রতিযোগী অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের এ হার তুলনামূলক ভাবে বেশি।
তিনি আরো বলেন, আসন্ন রামজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সাপ্লাই চেইন নিরবিচ্ছিন্ন থাকা প্রয়োজন, যেন সাধারণ মানুষ সহনীয় মূল্যে পণ্য ক্রয় করতে সক্ষম হয়।
ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার বলেন, পণ্যের মূল্য সহনীয় ও সাধারণ জনগনের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) রমজান মাসে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে আমদানিকারকদের কর সুবিধা প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে।
বাণিজ্য সক্ষমতা বাড়াতে ডিসিসিআই সভাপতি একটি পৃথক ‘কমার্শিয়াল কোর্ট’ গঠনের প্রস্তাব করেন, যার মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে বাণিজ্য বিষয়ক বিরোধ নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে এবং ‘আরবিট্রেশন অ্যাক্ট ২০০১’-এর প্রয়োজনীয় সংষ্কারের প্রস্তাব করেন।
টিপু মুনশি বলেন, এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী তিনবছর পণ্য রপ্তানিতে শুল্ক সুবিধা পাওয়া গেলে, আমাদের রপ্তানি সম্প্রসারণে সম্ভাবনাময় দেশ ও আঞ্চলিক ব্লকগুলোর সাথে এফটিএ, পিটিএ ও সেপাসহ অন্যান্য চুক্তি স্বাক্ষরের উপর আরো বেশি হারে মনোনিবেশ করতে হবে এবং বর্তমান সরকার বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করছে। বিভিন্ন বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের ‘ইন্টারন্যাশনাল সাপোর্ট মেজার্স (আইএসএমএস)’ বিষয়ক সুবিধা আদায়ের জন্য দক্ষতা বাড়ানোর উপর তিনি জোরারোপ করেন। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ সম্প্রসারণে ব্যবসা সহায়ক পরিবেশ উন্নয়নের কোন বিকল্প নেই এবং দেশে অবকাঠামো উন্নয়ন ও প্রয়োজনীয় নীতিমালা সংষ্কারের ক্ষেত্রে সরকার বদ্ধ পরিকর।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন. কৃষি ও খাদ্য পণ্য উৎপাদনে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি এবং আমাদের ‘কৃষি প্রক্রিয়াজতকরণ খাত’ অত্যন্ত সম্ভাবনাময়, যেখানে স্পেনসহ বেশ কয়েকটি দেশ বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে এবং আশা করা যাচ্ছে, অদূর ভবিষ্যতে এ খাতে আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষনে সক্ষম হব। এছাড়াও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী, ১ ইঞ্চি জমিও অনাবাদি না রেখে কৃষি কাজের আওতায় নিয়ে আসার উপর অধিক হারে গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে।
তিনি উল্লেখ করেন, সমুদ্র অর্থনীতির সম্ভাবনা এখনও কাজে লাগানো যায়নি, আমাদেরকে এর উপর আরো অধিক হারে জোরারোপ করতে হবে।কেএইচ