নির্বাচন মাথায় রেখে তৃণমূলে শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ কমিটি

সাংগঠনিক জেলা-উপজেলাগুলোর নির্বাচনী ছকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন, তৃণমূলে ভোটকেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন, সরকারের উন্নয়ন প্রচার ও বিরোধীদের আন্দোলন মোকাবেলায় সংগঠনকে প্রস্তুতের কাজ প্রাধান্য দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। তারা আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে এগুলোকেই গুরুত্বপূর্ণ বড় কাজ মনে করছে।

আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, কমিটির সভাপতি-সম্পাদকের নাম ঘোষণার পর দু-তিন বছর পেরিয়ে যায়, কিন্তু পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয় না। এবার জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সব কমিটিই পূর্ণাঙ্গ দেখতে চাইছেন দলের নীতিনির্ধারকরা।

ক্ষমতাসীন দলের জাতীয় সম্মেলনের পর গত সপ্তাহে নবনির্বাচিত নেতাদের মাঝে দেশের আট বিভাগের সাংগঠনিক দায়িত্ব বণ্টন করা হয়। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা আগামী জাতীয় নির্বাচনে জয় পেতে সাংগঠনিক কোন কাজগুলোকে প্রাধান্য দেবেন, তা ঠিক করেছেন। আজ শনিবার আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত জাতীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের মুলতবি সভা থেকেও নির্বাচনী প্রস্তুতির কাজের নির্দেশনা আসবে।

আট বিভাগে সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের কয়েকজন কালের কণ্ঠকে জানান, নির্বাচনী প্রস্তুতির অংশ হিসেবে শিগগিরই সাংগঠনিক জেলা, উপজেলাগুলোর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে। পরে এসব কমিটির নেতা এবং স্থানীয় দলের সংসদ সদস্য অথবা সম্ভাব্য প্রার্থীদের সমন্বয় করে ওয়ার্ড ও ভোটকেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটিগুলোই আগামী নির্বাচনে দলের ভোট বাড়ানো এবং বিরোধী দলের আন্দোলন মোকাবেলায় কাজ করবে।

আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত নেতারা এর মধ্যেই উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলায় দলকে সংগঠিত করে নির্বাচনী প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছেন। আগামী ২৯ জানুয়ারি রাজশাহীতে নির্বাচনী জনসভায় অংশ নেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সে উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার রাজশাহী বিভাগের ৯ সাংগঠনিক জেলার নেতা ও সংসদ সদস্যদের নিয়ে রাজশাহীতে প্রতিনিধি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে নিজেদের কোন্দল ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে জনসভা সফল করার নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা।

আগামীকাল রবিবার নীলফামারীর সৈয়দপুরে রংপুর বিভাগের সব জেলা ও মহানগর কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা শীতবস্ত্র বিতরণ কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। সেখানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের রংপুর বিভাগের নেতাকর্মীদের বিশেষ নির্দেশনা দেবেন।

গত ৭ জানুয়ারি আট বিভাগে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দায়িত্ব বণ্টন হয়। আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আট বিভাগের সাংগঠনিক দায়িত্বে তেমন কোনো পরিবর্তন করেনি আওয়ামী লীগ। শুধু রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে পরিবর্তন করা হয়। এ বিভাগের দায়িত্ব পেয়েছেন সুজিত রায় নন্দী।

দলের একাধিক সূত্র কালের কণ্ঠকে জানিয়েছে, আগামী এক মাস নবনির্বাচিত নেতারা সারা দেশের জেলা-উপজেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে বিশেষ গুরুত্ব দেবেন। তাঁরা নির্বাচনের আগে তৃণমূলে দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি থাকা খুব দরকারি বলে মনে করছেন।

আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনের আগে ময়মনসিংহ বিভাগের পাঁচ সাংগঠনিক জেলার সব এবং ৪০ সাংগঠনিক উপজেলার মধ্যে ৩৪টির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু এগুলোর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়নি। আগামী এক মাসের মধ্যে এসব জেলা-উপজেলায় কমিটি গঠনের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন দলের সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।

ময়মনসিংহ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘একটি শক্তিশালী সাংগঠনিক কাঠামো নিশ্চিত করে দলকে নির্বাচনের দিকে নিয়ে যেতে হবে। গত ছয় মাসে আমরা যেসব জেলা-উপজেলা সম্মেলন করেছি, অনেক ক্ষেত্রেই সেগুলোর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হয়নি, আংশিক কমিটি হয়েছে। আমাদের প্রথম কাজ হলো, সর্বোচ্চ এক মাসের মধ্যে এসব কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা। দলকে আরো জনসম্পৃক্ত করা এবং সুসংগঠিত করে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি বছরব্যাপী চলবে।’

দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, যেসব এলাকায় সংসদ সদস্যদের সঙ্গে দলের নেতাদের দূরত্ব তৈরি হয়েছে, সেগুলো নিরসনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। আগামী নির্বাচনে যাঁরা নৌকার প্রার্থী হবেন বা বর্তমানে দলের সংসদ সদস্য রয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রতিটি ওয়ার্ডে ও নির্বাচনী কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন করা হবে। এর মধ্য দিয়ে দলের কর্মকাণ্ডকে নির্বাচনমুখী ও আরো গতিশীল করা হবে। ওয়ার্ড ও কেন্দ্রভিত্তিক কমিটিগুলোর মাধ্যমেই মাঠে বিরোধী দলের আন্দোলন-সংগ্রামকে মোকাবেলা করা হবে।

রংপুর বিভাগে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে এর মধ্যেই কাজ শুরু করেছেন নবনির্বাচিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। গত বৃহস্পতিবার রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহ্মুদের বাসায় বৈঠক করেন রংপুর জেলা ও মহানগরের নেতারা। সেখানে বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দীও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক থেকে অবিলম্বে রংপুর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেন কেন্দ্রীয় নেতারা। তাঁরা আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রংপুরে দলকে সুসংগঠিত করতে মহানগর ও জেলার নেতাদের জোরালো তাগিদ দেন।

রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা কালের কণ্ঠকে জানান, আগামীকাল রবিবার রংপুর বিভাগে শীতবস্ত্র বিতরণের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। সৈয়দপুরে শীতবস্ত্র বিতরণের অনুষ্ঠান হবে। সেখানে রংপুর বিভাগের সব সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত থাকবেন। সে কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা উপস্থিত থাকবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক প্রতিটি জেলায় সংগঠনকে শক্তিশালী করা, নিজেদের বিবাদ কমিয়ে আনা, আগামী নির্বাচনে দলের জয় নিশ্চিত করতে জনগণের মনজয়ের বিষয়ে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেবেন।

রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দলকে আগামী নির্বাচনে জয়ের জন্য প্রস্তুত করতে আমরা জোরালোভাবে কাজ শুরু করেছি। জেলা-উপজেলা নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। নির্বাচনে যেসব চ্যালেঞ্জ আছে, সেগুলো মোকাবেলায় সাংগঠনিক শক্তির বিকল্প নেই।’

দলের জাতীয় সম্মেলনের আগেই রাজশাহী বিভাগের ৯ সাংগঠনিক জেলার সম্মেলন শেষ হয়েছে। তবে এগুলোর বেশির ভাগেরই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়নি। বিভাগের ৮৩ সাংগঠনিক উপজেলার মধ্যে প্রায় সব উপজেলাই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু বেশির ভাগেরই পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। নির্বাচনে আগে তৃণমূলের এসব কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হবে।

রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত একাধিক নেতা কালের কণ্ঠকে জানান, রাজশাহী বিভাগের যেসব উপজেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন বাকি আছে, সেগুলো শিগগিরই হয়ে যাবে। কয়েকটি জেলা-উপজেলার কমিটি কেন্দ্রীয় দপ্তরে জমা পড়লেও সেগুলো নিয়ে আপত্তি ওঠায় আবারও যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের এখন মূল কাজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ হয়েছে, সেগুলো মানুষের সামনে তুলে ধরা, বিএনপি-জামায়াতের আমলে যে সন্ত্রাস-দুর্নীতি হয়েছে, সেগুলো মানুষকে বিনয়ের সঙ্গে মনে করিয়ে দেওয়া। এ জন্য দলকে ঐক্যবদ্ধ করে, মানুষের কাছে গিয়ে তাদের আকৃষ্ট করার কাজে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি।’

চট্টগ্রাম বিভাগের জেলা-উপজেলাগুলোর পূর্ণাঙ্গ কমিটি শিগগিরই ঘোষণা হবে বলে জানিয়েছেন বিভাগটির দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন, মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোর সম্মেলন আয়োজনের মধ্য দিয়ে আগামী নির্বাচনের জন্য একটি সাংগঠনিক টিমওয়ার্কের ব্যবস্থা করব।’

সিলেট বিভাগে বেশ কয়েকটি উপজেলায় দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হয়নি। এগুলোর কমিটি শিগগিরই গঠন করা হবে বলে কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন বিভাগটির দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন।

LEAVE A REPLY