তথ্যচিত্রে মোদি ও গুজরাট দাঙ্গা : বিবিসির দাবি, সরকারের ভয়ে মুখ খোলেনি ৩০ ভারতীয়

ফাইল ছবি

‘ইন্ডিয়া : দ্য মোদি কোয়েশ্চেন’ আপাতত ভারতে রিলিজ করছে না ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। তবে নরেন্দ্র মোদি সরকারের আপত্তি সত্ত্বেও সেটির আনুষ্ঠানিক রিলিজের সিদ্ধান্ত থেকে সরছে না তারা।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিবিসি-টু চ্যানেলে ব্রিটেনবাসী আগামী ২৪ জানুয়ারি তথ্যচিত্রটি (প্রামাণ্যচিত্র) দেখতে পাবেন। গত ১০ জানুয়ারি সেটি সীমিতসংখ্যক বাছাই করা দর্শককে দেখানো হয়েছিল।

বিবিসির ওই তথ্যচিত্রে ভারতে মুসলিমদের অবস্থা, গুজরাট দাঙ্গার সময় রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভূমিকা ইত্যাদি বিষয় রয়েছে। ভারত সরকার ওই তথ্যচিত্রের বিষয়বস্তু নিয়ে তীব্র আপত্তি তুলে বলেছে, ভিত্তিহীন তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি ওই তথ্যচিত্রে ঔপনিবেশিক মানসিকতাই প্রকাশ পেয়েছে।

শুধু ভারত সরকারই নয়, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকও তথ্যচিত্রটি নিয়ে অসন্তুষ্ট। সে দেশে অনেকে মনে করছেন, এই তথ্যচিত্র ভারত-ব্রিটেন সম্পর্কে ছায়া ফেলতে পারে। বিঘ্নিত হবে ব্রিটেনে বসবাসকারী হিন্দু ও মুসলিমদের অবস্থা। সুনাক নিজেই ভারতীয় বংশোদ্ভূত হিন্দু ধর্মাবলম্বী।

সমালোচনার জবাবে বিবিসি জানিয়েছে, তারা সাংবাদিকতার সর্বোত্তম উপায় অবলম্বন করে ওই তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছে। এর পেছনে আছে দীর্ঘ গবেষণা। তারা তিনটি তথ্যও তুলে ধরেছে জবাবে। 

প্রথমত, তথ্যচিত্রে তুলে ধরা প্রশ্নগুলোর বিষয়ে ভারত সরকারের জবাব চাওয়া হয়েছিল। তারা জবাব দেয়নি। দ্বিতীয়ত, ৩০ জন ভারতীয় বিবিসির ক্যামেরার সামনে এ ব্যাপারে মুখ খুলতে চাননি ভয়ে। তৃতীয়ত, তথ্যচিত্রটি নির্মাণের সঙ্গে সংস্থার ভারতে কর্মরত সাংবাদিকরা কেউ যুক্ত ছিলেন না।

সূত্রের খবর, তথ্যচিত্রটিতে নতুন তথ্য তেমন কিছু নেই। অজানা তথ্য হলো- গুজরাট দাঙ্গার সময় তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের উদ্বেগ এবং তৎপরতা। তৎকালীন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী একটি টিম গঠন করে গুজরাট দাঙ্গার বিষয়ে রিপোর্ট তৈরি করেন। তথ্যচিত্রটিকে দাঙ্গার সময় ভারতে কর্মরত ব্রিটিশ সাংবাদিককে দেওয়া নরেন্দ্র মোদির সাক্ষাৎকারের অংশবিশেষ দেখানো হয়েছে। মোদি তখন বলেছেন, দাঙ্গাবিধ্বস্ত এলাকায় সংবাদমাধ্যম অবাধে যেতে পেরেছে। এটাই কি ভুল ছিল?

গুজরাট দাঙ্গায় রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভূমিকা নিয়ে চর্চা নতুন নয়। তার ভূমিকা খতিয়ে দেখতে সিবিআই তদন্ত এবং একাধিক মামলাও হয়। সিবিআই অনেক আগেই তাকে ক্লিনচিট দিয়েছিল। গত বছর চূড়ান্ত রায়ে সুপ্রিম কোর্টও বলেছে, দাঙ্গা থামাতে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদির ভূমিকায় কোনো রকম কমতি ছিল না।

ব্রিটেনের ‘হাউস অব লর্ডসে’র সদস্য লর্ড রামি রেঞ্জার চিঠি লিখে বিবিসিকে জানালেন, সিরিজটির দ্বিতীয় পর্বের সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হোক। তার দাবি, এরই মধ্যে ব্রিটিশ হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, সেই উত্তেজনাকে আরো বাড়িয়ে দেবে নতুন পর্বটি। 

পাশাপাশি রামি পরিষ্কার জানতে চেয়েছেন, এ ধরনের সিরিজের পেছনে পাক বংশোদ্ভূতদের কোনো ভূমিকা রয়েছে কি না।

প্রসঙ্গত, শুরু থেকেই বিতর্ক ঘনিয়েছে এই সিরিজকে ঘিরে। গত মঙ্গলবার সম্প্রচারিত হয় ধারাবাহিক এই সিরিজের প্রথম পর্ব। কিন্তু পরদিনই সেটা ইউটিউব থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। দ্বিতীয় পর্ব ২৪ জানুয়ারি সম্প্রচারিত হওয়ার কথা।

রামি জানিয়েছেন, এমন একসময়ে বিবিসি এই সিরিজটির সম্প্রচার শুরু করেছে, যখন জি২০’র সভাপতির দায়িত্বে রয়েছে ভারত, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত এবং ভারত ও ব্রিটেন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির দিকে এগোচ্ছে। রামির দাবি, তিনি সিরিজটি দেখে হতভম্ব হয়ে গেছেন।

তিনি লিখেছেন, বিবিসি তাদের ডকুমেন্টারি সিরিজে পুরনো ক্ষতকে খুঁচিয়েছে। যেভাবে ব্রিটিশ হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে ঘৃণা ছড়িয়ে দিতে এই তথ্যচিত্রে ভারতকে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে। যেন মুসলিমরা এখানে নিরাপদ নন। সত্যিই তাই হলে মুসলিমরা তো ভারত ছেড়ে চলে যেতেন। কিন্তু ঘটনা হলো, মুসলিম জনসংখ্যায় পাকিস্তানের চেয়ে ভারত এগিয়ে।’

সূত্র : দ্য ওয়াল, সংবাদ প্রতিদিন

LEAVE A REPLY