বাপ্পারাজ
হিন্দি ছবি আমদানি করে ১০ পার্সেন্ট নিয়ে শিল্পী সমিতি কী করবে? তাদের এতই করুণ অবস্থা যে হিন্দি সিনেমার লাভ নিয়ে চলতে হবে? সম্প্রতি হিন্দি সিনেমার আমদানি বিষয়ে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির দাবি প্রসঙ্গে এ মন্তব্য করেছেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেতা ও পরিচালক বাপ্পারাজ।
তিনি বলছেন, ‘হিন্দি ছবি আমদানি করলে চলচ্চিত্রের নেতা-নেত্রীরা লাভবান হবে, তা ছাড়া তো আর কাউকে লাভবান হওয়া দেখছি না।’ রবিবার দুপুরে কালের কণ্ঠ’র সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ভারতে বাংলাদেশের সিনেমা যাচ্ছে না কেন? এমন প্রশ্ন রেখে বাপ্পারাজ বলেন, ‘আমরা ছোট ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করি। আমাদের একটা ছোট ইন্ডাস্ট্রি, আমাদের ওভারসিজ মার্কেট নেই। ভারতের তো ১০০ ওভারসিজ মার্কেট রয়েছে, তার পরও তারা বাংলাদেশে সিনেমা চালাতে চাচ্ছে। ঠিক আছে চালাক। কিন্তু আমাদের সিনেমা ওদের দেশে চালানোর সুযোগ দিক, ওরা কেন আমাদের সিনেমাকে আটকাচ্ছে?’
সাফটা চুক্তির বিনিময়ে যে সকল সিনেমা এবং যে পদ্ধতি ভারতে বাংলাদেশের সিনেমা চালানো হয় তা মোটেও পছন্দ নয় ‘জজ ব্যারিস্টার’ খ্যাত এই অভিনেতার। তিনি বলেন, “বারবার সাফটা চুক্তির কথা বলা হচ্ছে, সাফটা চুক্তি দিয়ে একটা বিগ বাজেটের সিনেমা নিয়ে আসলেন, কিন্তু শর্ত অনুযায়ী আমাদের একটা পুরনো আমলের কোনো রকম একটা সিনেমা নিয়ে গ্রামের হল যেখানে কেউ যায় না সেখানে চালিয়ে দিয়ে যদি বলে হ্যাঁ সাফটা চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের সিনেমা চালালাম, তাহলে তো হলো না। সাফটা চুক্তির আওতায় আমাদের ভালো ভালো সিনেমা ‘হাওয়া’, ‘পরাণ’ ভারতের ভালো ভালো মাল্টিপ্লেক্সে দেন, তাহলে বুঝব চুক্তি ঠিক আছে।”
হিন্দি সিনেমা আমদানি যারা করতে চান, তাদের প্রতি প্রশ্ন রেখে বাপ্পারাজ বলেন, ‘আমাদের দেশে এক শ্রেণির আঁতেল আছে, বোদ্ধা আছে। তারা বলছে হিন্দি সিনেমা আসুক। তারা এটা বলছে না কেন ওখানেও বাংলা সিনেমা চলুক? তারা কেন প্রটেক্ট করে রাখছে বাংলা সিনেমা বাংলাদেশি টেলিভিশন চ্যানেল? তারা তো নিজেদের সিনেমার ব্যবসা করছে, আবার তাদের আলাদা আলাদা ইন্ডাস্ট্রিও আছে। সেখানেও তাদের সিনেমা চলছে। আমাদের তো কোনো ওভারসিজ মার্কেট নেই, এমনকি চট্টগ্রাম-বরিশালেও ইন্ডাস্ট্রি নেই। আমাদের সিনেমা তাহলে চলবে কোথায়?’
শিল্পী সমিতির ১০ পার্সেন্ট মুনাফা চাওয়ার বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা করে বাপ্পারাজ বলেন, ‘তারা কেন ১০ পার্সেন্ট চায়? এই টাকা তারা কোথায় খরচ করবে? সেটা তো স্পষ্ট করে বলেনি। এই কমিশন চাওয়াটা শিল্পী সমিতির করুণ অবস্থাকেই বোঝায়। হিন্দি ছবি আমদানি করলে আসলে দেশের ইন্ডাস্ট্রি লাভবান হবে না, লাভবান হবে এই সব চলচ্চিত্রের নেতা-নেত্রীরা।’
কলকাতার শিল্পীরাও হিন্দি ছবি চালাতে চান না, এমন উদাহরণ টেনে এই অভিনেতা বলেন, ‘আমরা হিন্দি সিনেমা আমদানির যেন উঠেপড়ে লেগেছি, অথচ আপনি কলকাতার ইন্ডাস্ট্রির শিল্পীদের দেখেন তারা কিন্তু মুম্বাইয়ের সিনেমাই পশ্চিমবঙ্গের সিনেমা চালাতে দিতে চায় না। তারা তাদের ভাষার সিনেমার জন্য নিবেদিতপ্রাণ।’
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেতা কৌশিক গাঙ্গুলিও পশ্চিমবঙ্গে হিন্দি সিনেমা চালানোর বিপক্ষে কথা বলেন। তিনি বলেন, ভারতের দক্ষিণে হিন্দি সিনেমা ঢুকতেই দেবে না, তারা হিন্দি বলতে কিছু বোঝেই না। মহারাষ্ট্র পারবে মারাঠি সিনেমাকে নামিয়ে দিয়ে হিন্দি সিনেমা চালাতে? পশ্চিমবঙ্গের সিনেমা হলে বাংলা সিনেমা চালানোকে রীতিমতো অবমাননা হিসেবে অভিহিত করেছেন এই অভিনেতা।
কৌশিক গাঙ্গুলি আরো বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের অ্যাম্বাসাডর শাহরুখ খান। তার সঙ্গে আমার যদি যোগাযোগ থাকত তাহলে আমি বলতাম তোমার এই রাজ্যের ভাষার ছবিকে বাঁচাতে তুমি তোমার অঞ্চলে ফিফটি পার্সেন্ট ছেড়ে দাও।’
বাপ্পারাজ কৌশিক গাঙ্গুলি ও প্রসেনজিতের বক্তব্যের সঙ্গে সমর্থন জানিয়ে বলেন, ‘তারা তাদের ভাষার জন্য কতটা নিবেদিতপ্রাণ অথচ আমরা হিন্দি সিনেমা আনতে চাচ্ছি, কিন্তু আমাদের সিনেমা সেখানে যাবে কি না সেটা বলছি না।’
হিন্দি সিনেমা আমদানির বিপক্ষে বাপ্পারাজ। তাহলে সিনেমা হল বাঁচানোর বিষয়ে পরিত্রাণ কী? দেশে নির্মিত সিনেমা দিয়েই বাংলা চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিকে দাঁড় করানো সম্ভব বলে মনে করেন অভিনেতা। বাপ্পারাজ বলেন, ‘একসময় কলকাতার চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি বসে গিয়েছিল, একেবারে ধ্বংস্তূপে পরিণত হয়েছিল। তারা কিন্তু হিন্দি সিনেমা দিয়ে হল দাঁড়া করায়নি। তারা নিজেরা নতুনভাবে সিনেমা বানানো শুরু করে। বাংলাদেশে সে সময় চলচ্চিত্রের রমরমা অবস্থা, বাংলাদেশের হিট সিনেমার কপিরাইট নিয়ে সেটাকে রিমেক করে বানিয়েছে। একসময় তারা সফল হয়েছে। এখন কলকাতার ইন্ডাস্ট্রি দাঁড়িয়ে গেছে। আমরাও সেভাবে দাঁড়াব।’