‘আরেকটি বিশ্বযুদ্ধের’ বিপদ ডেকে আনছে

রাশিয়ার আগ্রাসন মোকাবিলায় ইউক্রেনকে পশ্চিমা দেশগুলো ভারী ট্যাংকসহ যুদ্ধাস্ত্র দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে যুদ্ধ পরিস্থিতি পালটে যেতে পারে। রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর প্রস্তুতি ইউক্রেন যুদ্ধকে ভয়াবহ পরিণতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ন্যাটোর সমালোচনা করে চীনা সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘আরেকটি বিশ্বযুদ্ধের’ বিপদ ডেকে আনছে ইউরোপ। খবর আলজাজিরা, এপি, বিবিসি, রয়টার্স ও নিউজউইকের।

পর্তুগিজ টেলিভিশন চ্যানেল আরটিপিকে ন্যাটোর সামরিক কমিটির চেয়ারম্যান রব বাউয়ার রয়্যাল জানান, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কৌশলগত উদ্দেশ্যগুলো ইউক্রেনকে ছাড়িয়ে গেছে। এটা হয়তো এখন কিয়েভের প্রতিবেশীদের দিকে প্রসারিত হতে পারে। নেদারল্যান্ডস নৌবাহিনীর অ্যাডমিরাল রব রয়্যাল আরও বলেন, ন্যাটোভুক্ত কোনো একটি দেশে রাশিয়া হামলা চালালে ন্যাটো তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানাবে। এক প্রশ্নের জবাবে দৃঢ়তার সঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রস্তুত।’ তবে ন্যাটোকে আরও ভালোভাবে প্রস্তুত করা উচিত। কারণ বর্তমানে রাশিয়ার সামরিক উদ্যোগ রয়েছে। তার ভাষায়, ‘আপনার শত্রুর কাছে আরও ভালো অস্ত্র থাকাটা শত্রুর সমস্যা নয়। এটা আপনার সমস্যা।’

রোববার চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসে চীনা সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধে ন্যাটোর সম্পৃক্ততায় ইউরোপ ‘আরেকটি বিশ্বযুদ্ধের’ বিপদ ডেকে আনছে। চীনা সামরিক বিশেষজ্ঞ এবং টিভি ভাষ্যকার গান ঝংপিং বলেন, রুশ বাহিনীর সঙ্গে সরাসরি লড়াইয়ে কিয়েভ তার ন্যাটো মিত্রদের টেনে আনার প্রচেষ্টা চালাবে। এর আগে ইউক্রেনকে সহায়তা দেওয়া ন্যাটো দেশগুলো রুশ সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হতে পারে।

রুশ আগ্রাসন মোকাবিলায় ইউক্রেনকে ৩২১টি ভারী ট্যাংক দেবে পশ্চিমা দেশগুলো। ফরাসি টিভি স্টেশন বিএফএম’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ফ্রান্সে নিযুক্ত ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত ভাদিম ওমেলচেঙ্কো বলেন, এখন পর্যন্ত অনেক দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ইউক্রেনে ৩২১টি ভারী ট্যাংক সরবরাহের কথা নিশ্চিত করেছে। আগ্রাসী বাহিনীকে প্রতিহত করতে কিয়েভের অবিলম্বে এ সহায়তা প্রয়োজন বলেও জানান তিনি। সুনির্দিষ্টভাবে তিনি কোনো দেশের নাম উল্লেখ না করলেও জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই কিয়েভকে ট্যাংক সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সর্বশেষ এ তালিকায় যুক্ত হয়েছে কানাডা। কিয়েভকে অত্যাধুনিক চারটি ‘লেপার্ড-২’ ট্যাংক দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী অনিতা আনন্দ। তিনি বলেন, এ সহায়তা ইউক্রেনীয় সেনাদের গতি বাড়ানোর পাশাপাশি তাদের নানা ধরনের কৌশলগত সুবিধা দেবে। আরও বেশি অঞ্চল পুনরুদ্ধারে সহায়তা করবে এটি।

মিত্রদের কাছে বারবার উন্নত প্রযুক্তির ট্যাংক চেয়ে আসছিল কিয়েভ। অনেক নাটকীয়তার পর ১৪টি লেপার্ড-২ ট্যাংক পাঠাতে রাজি হয়েছে জার্মানি। যুক্তরাষ্ট্রও জেলেনস্কির সরকারকে ৩১টি শক্তিশালী ‘আব্রামস’ ট্যাংক পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এরপরই ইউক্রেনকে অত্যাধুনিক চারটি ‘লেপার্ড-২’ ট্যাংক দেওয়ার ঘোষণা দেয় কানাডা।

শনিবার ইউক্রেনের সামরিক কর্মকর্তা মিখাইলো পোদোলিয়াক বলেন, যুদ্ধে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর মূল অস্ত্র হলো কামান। বর্তমানে এটা ব্যবহার করেই তারা মূল যুদ্ধক্ষেত্রে হামলা চালাচ্ছে। রাশিয়ার এ অস্ত্রের ব্যবহার কমাতে চাইলে ইউক্রেনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র প্রয়োজন। ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে তাদের কামান ও গোলাবারুদের সংরক্ষণাগারগুলো ধ্বংস করা যাবে। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়া আগ্রাসন চালায়।

LEAVE A REPLY