গত সেপ্টেম্বর মাসে বাল্টিক সাগরে ডেনমার্ক ও সুইডেনের উপকূলের মাঝামাঝি জায়গায় এক বিস্ফোরণে নর্ড স্ট্রিম গ্যাস পাইপলাইনে বড় ছিদ্র তৈরি হয়। সাগরের নিচে হঠাৎ রহস্যজনক বিস্ফোরণ, নাম না জানা সূত্র থেকে সাইবার হামলা, অথবা পশ্চিমা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে খাটো করতে অনলাইনে সুচতুর প্রচারণা— এমন সব ‘হাইব্রিড হুমকি’ যুদ্ধের বড় অস্ত্র হয়ে উঠছে।
আর এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে নেটো সামরিক জোট এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
নিজের স্বার্থসিদ্ধিতে তথ্যপ্রবাহকে ব্যবহার করা, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে হামলা, হাইব্রিড যুদ্ধ ঠিক কী সে প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বলেন টিজা টিলিকাইনেন।
ইউরোপিয়ান সেন্টার অব একসিলেন্স ফর কাউন্টারিং হাইব্রিড থ্রেট (হাইব্রিড সিওই) নামক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক তিনি। ছয় বছর আগে এই সেন্টারটি প্রতিষ্ঠিত হয় ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিঙ্কিতে।
মিজ টিলিকাইনেন বলেন, এসব হুমকি এতটাই অস্পষ্ট, অদৃশ্য এবং অকস্মাৎ যে কোনো দেশের পক্ষেই এসব হুমকি মোকাবিলা অত্যন্ত জটিল ও কঠিন কাজ।
কিন্তু এসব হুমকি কোনো কল্পকথা নয়, একবারেই বাস্তব।
বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গেই রাশিয়া বলে তারা এর পেছনে নেই। কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলোর দৃঢ় বিশ্বাস ইউক্রেন যুদ্ধে ইউরোপের অবস্থানের কারণে তাদের শায়েস্তা করতে রাশিয়াই এ কাণ্ড ঘটিয়েছে, যাতে ইউরোপ জ্বালানি সংকটে নাজেহাল হয়ে পড়ে।
তার পর রয়েছে নির্বাচনে গোপন হস্তক্ষেপ।
অভিযোগ রয়েছে— অনলাইনে ‘বটস’ ব্যবহার করে এ কাজ করেছে রাশিয়া। সেন্ট পিটার্সবার্গে বসে সরকার সমর্থিত অনলাইন অ্যাকটিভিস্টরা সোশ্যাল মিডিয়াতে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে ক্রমাগত হিলারি ক্লিনটনকে ট্রল করে গেছে।
অন্য কৌশলটি হলো— কোনো বিষয়ের বা ঘটনার একটি কাল্পনিক, ভুয়া এবং উদ্দেশ্যমূলক ব্যাখ্যা তৈরি করে তা ক্রমাগত প্রচার করে যাওয়া। জনগণের একাংশ এসব ব্যাখ্যায় প্রভাবিত হয়।
ইউক্রেনে হামলার পর অনলাইনে এ ধরনের প্রচার বেড়েছে। নিজের নিরাপত্তার জন্য এ হামলা অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছিল বলে মস্কোর যে ব্যাখ্যা তা শুধু রাশিয়ায় নয়; পুরো ইউরোপের বহু মানুষ বিশ্বাস করেন।
এসব হুমকি যাতে পশ্চিমা দেশগুলো চিহ্নিত করতে পারে এবং নিজেদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে পারে, সে লক্ষ্যে নেটো জোট এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ফিনল্যান্ডে হাইব্রিড সিওই প্রতিষ্ঠা করেছে।
‘অঞ্চলটিতে জ্বালানির মজুত রয়েছে, তিনি বলেন। শক্তিধর দেশগুলো যে এখানে তাদের স্বার্থরক্ষার চেষ্টা করবে, সে সম্ভাবনা প্রবল। তথ্য নিয়ে কারসাজি শুরু হয়েছে।
‘রাশিয়া বলে আর্কটিক একটি বিশেষ অঞ্চল, যা বিরোধপূর্ণ এলাকার বাইরে। এখানে খারাপ কিছু হচ্ছে না। – কিন্তু তার পরও রাশিয়া সেখানে তাদের সামরিক শক্তি জোরদার করছে।’
হাইব্রিড এসব হুমকির একটি হলো— সাগরের নিচে বিস্ফোরণ, যা নিয়ে এ অঞ্চলের দেশগুলো ক্রমেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছে।
হাইব্রিড হুমকি চোখে দেখা যায় না। কেউ এখানে অস্ত্র হাতে নিয়ে গুলি চালায় না। কিন্তু অদৃশ্য এসব হুমকির ভয়াবহতা একেবারেই কম নয়। কে বা কারা এই হুমকির পেছনে রয়েছে তা ঠাহর করাও খুবই শক্ত।
ইউক্রেনে হামলা শুরুর আগে আজভ সাগরে রুশ তৎপরতা নিয়ে এই সেন্টারে গবেষণা হয়েছে। ২০১৮ সালের অক্টোবর মারিউপোল এবং বারদিয়ানস্ক বন্দর ছাড়ার পর এবং বন্দরে যাওয়ার আগে ইউক্রেনীয় জাহাজগুলোকে রুশ কর্মকর্তাদের পরিদর্শনের জন্য কার্চ প্রণালিতে দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হতো।
এ জন্য জাহাজগুলোকে অনেক সময় দুই সপ্তাহ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকতে হতো। ফলে ইউক্রেনের অর্থনীতির ওপর তা মারাত্মক বিরূপ প্রভাব ফেলতে শুরু করেছিল বলে জানান ওই সেন্টারের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
সূত্র: বিবিসি