প্রতীকী ছবি
বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে ৮ ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। স্কোরে উন্নতি করলেও অন্য দেশগুলো উন্নতি করেছে আরো বেশি। ফলে গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স-২০২২-এ (জিএইচআই) বাংলাদেশের অবস্থান ১২১টি দেশের মধ্যে ৮৪তম হয়েছে। ২০২১ সালে এই অবস্থান ছিল ৭৬তম।
বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) আনুষ্ঠানিকভাবে এ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে এই প্রকাশনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে যৌথভাবে কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড, ওয়েলথ হাঙ্গার হিলফ, হেলভেটস বাংলাদেশ ও অ্যাকটেড।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০২২ সালে ক্ষুধা সূচকে বাংলাদেশ ১৯ দশমিক ৬ স্কোর পেয়েছে। ক্ষুধা সূচক ১০ থেকে ১৯ দশমিক ৯ এর মধ্যে থাকলে ওই দেশ ‘মাঝারি মাত্রার’ ক্ষুধা আক্রান্ত হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। বাংলাদেশ মাঝারি অবস্থানে আছে।
২০২০ সালে ১০৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৭৫তম। উৎপাদন বাড়িয়ে খাদ্য নিরাপত্তায় অনেক উন্নতি করলেও নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিতের চ্যালেঞ্জ রয়েছে বাংলাদেশের সামনে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস, বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি কাউন্সিলের মহাপরিচালক ড.হাসান শাহরিয়ার কবীর ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার।
এতে মূল প্রবদ্ধ উপস্থাপন করেন ওয়েলথ হাঙ্গার হিলফের সিনিয়র পলিসি অফিসার লিউরা রেইনার ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ড.মোহাম্মদ রাজু আহমেদ। বক্তব্য দেন ওয়েলথ হাঙ্গার হিলফ, বাংলাদেশের মিশন প্রধান ফাতিমা আজিজোভা।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, অপুষ্টির মাত্রা, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের উচ্চতা অনুযায়ী কম ওজন, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের বয়স অনুযায়ী কম উচ্চতা ও শিশুমৃত্যুর হার হিসাব করে ক্ষুধার মাত্রা নির্ধারণ করা হয়। বৈশ্বিক, আঞ্চলিক বা জাতি যেকোনো পর্যায়ে ক্ষুধার মাত্রা নির্ণয় করতে এ সূচকগুলো ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এসব সূচক অনুযায়ী, বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ শিশু অপুষ্টিতে আক্রান্ত, প্রতি ছয়জনের একজন শিশু বয়সের তুলনায় খর্বকায় ও কৃশকায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তান ক্ষুধা মেটানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের তুলনায় পিছিয়ে। দেশ দুটির অবস্থান যথাক্রমে ১০৭ ও ৯৯তম। এ দেশ দুটি ‘মারাত্মক ক্ষুধায়’(স্কোর ২০ থেকে ৩৪ দশমিক ৯) আক্রান্ত দেশের তালিকায় রয়েছে। এই প্রতিবেদনে ক্ষুধা নিবারণে বিভিন্ন দেশের তুলনামূলক অবনতির পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কথা উল্লেখ করা হয়।
বলা হয়, বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৫০টি দেশ রাশিয়া ও ইউক্রেনের গমের ওপর নিভর্রশীল ছিল। কিন্তু সময়মতো ওই দুই দেশ থেকে গম কিনতে না পারায় চাল ও আটার দাম বেড়ে যায়। যে কারণে গরিব মানুষের পক্ষে খাদ্য কেনার সামর্থ্য কমে গেছে। রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে সারের দামও আকাশচুম্বী হয়েছে। সামগ্রিকভাবে ২০২০ থেকে ২০২২ এর মধ্যে বিশ্বব্যাপী দানাদার খাদ্যের দাম ৩৭ শতাংশ ও ভোজ্যতেলের দাম ৫৬ শতাংশ ও মাংসের দাম ২০ শতাংশ বেড়েছে।
এছাড়া, প্রতি তিনজনের একজন শিশু জন্মের পাঁচ বছরের মধ্যে মারা যায়। এই সবগুলো ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে উন্নতি করলেও অন্যান্য দেশের তুলনায় তা কম। যে কারণে সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের অবস্থানের অবনতি হয়েছে।ডি- এইচএ