শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে। ছবি: সংগৃহীত
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে জানিয়েছেন, দেশটি আরও অন্তত ৩ বছর দেউলিয়া থাকবে।
বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) এই দ্বীপরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের বরাত দিয়ে বার্তাসংস্থা এএফপি জানিয়েছে, এক নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে ভগ্নদশায় থাকা সরকারি অর্থায়ন পরিস্থিতি সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে শ্রীলঙ্কার সরকার।
গত বছর বেশ কয়েক মাস ধরে চলতে থাকা খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধ সঙ্কটের কারণে শুরু হওয়া গণবিক্ষোভের মুখে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে পদত্যাগ করলে ক্ষমতায় আসেন রনিল বিক্রমাসিংহে।
প্রেসিডেন্ট পদ গ্রহণের পর রনিল কর বাড়িয়েছেন এবং আন্তর্জাতিক পাওনাদারদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় শ্রীলঙ্কার জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের বেলআউট (দেউলিয়া পরিস্থিতি থেকে মুক্তির জন্য দেওয়া ঋণ) সুবিধা নেওয়া ছাড়া আপাতত কোনো বিকল্প নেই।
তিনি অর্থনৈতিক সংস্কার প্রক্রিয়ায় আইনপ্রণেতার সহায়তা চেয়ে পার্লামেন্টে বক্তব্য দেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা যদি এই পরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়ে যেতে পারি, তাহলে ২০২৬ সাল নাগাদ দেউলিয়া অবস্থা থেকে মুক্তি পাব’।
রনিল বলেন, ‘রাজনীতির প্রেক্ষাপটে, নতুন কর নীতিমালা চালুর সিদ্ধান্ত কখনোই জনপ্রিয়তা পায় না। তবে মনে রাখবেন, আমি এখানে জনপ্রিয় হতে আসিনি। আমি এই জাতির পুনর্গঠন করে একে সঙ্কট থেকে বের করে আনার চেষ্টা চালাচ্ছি’।
গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট রনিল বলেন, গত বছর জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের মাঝে অর্থনীতি ১১ শতাংশ সংকুচিত হয়ে থাকতে পারে। এ সময় শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ফুরিয়ে যায় এবং ব্যবসায়ীরা গুরুত্বপূর্ণ পণ্য আমদানি করতে ব্যর্থ হয়।
তবে আজ বুধবার তিনি আশ্বস্ত করেন, অর্থনীতিতে ২০২৩ এর শেষ নাগাদ আবারও প্রবৃদ্ধি ফিরে আসবে, কারণ রাজস্ব আদায়ের নতুন উদ্যোগে সরকারি তহবিল বাড়বে।
কর বাড়ানো, জ্বালানি ও বিদ্যুতে ভর্তুকি প্রত্যাহারের মতো সিদ্ধান্তগুলো শ্রীলঙ্কার জনগণের কাছে জনপ্রিয়তা পায়নি। দেশটির জনগণ ইতোমধ্যে অর্থনৈতিক সঙ্কট ও লাগামহীন মূল্যস্ফীতির কারণে বিপর্যস্ত অবস্থায় আছে।
এমন সময় রনিল বিক্রমাসিংহে নীতিমালা সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছেন, যখন দেশের ট্রেড ইউনিয়নগুলোতে চলছে ধর্মঘট। এছাড়াও বিভিন্ন দাবিদাওয়া পূরণের উদ্দেশ্যে উড়োজাহাজ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রক, ডাক্তার ও অন্যান্য খাতের কর্মীরা কর্মবিরতি কর্মসূচীতে অংশ নিচ্ছেন।
প্রেসিডেন্ট জানান, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সঙ্গে প্রাথমিকভাবে ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের বেলআউট প্যাকেজের বিষয়ে আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
এই প্রক্রিয়াটি চীন ও অন্যান্যদের কাছ থেকে নেওয়া ঋণের পুনঃতফশিল উদ্যোগের কারণে বিলম্বিত হয়েছে।
রনিল জানান, শ্রীলঙ্কা চীনের সঙ্গে এ বিষয়ে সরাসরি আলোচনা করলেও ‘সকল পক্ষের কাছ থেকে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া’ পেয়েছে এবং এ মুহূর্তে চুক্তির শর্তগুলো চূড়ান্ত করা হচ্ছে।