শিরোপার সঙ্গে সব পুরস্কার বাংলাদেশের মেয়েদের

সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে বৃহস্পতিবার নেপালকে ৩-০ গোলে হারিয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের মেয়েদের উল্লাস। ছবি: ভোরের কাগজ

মাত্র ছয় মাসের ব্যবধানে ফের সাফে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমান করল বাংলাদেশের মেয়েরা। সেপ্টেম্বরে কাঠমান্ডুতে নেপালের জাতীয় দলকে হারিয়ে সাফের শিরোপা জিতেছিল লাল-সবুজের মেয়েরা।

বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) কমলাপুরে সেই নেপাল নারী দলকে ফাইনালে ৩-০ গোলে হারিয়ে সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতেছে শামসুন্নাহার বাহিনী। এ টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের অধিনায়ক শামসুন্নাহার ৫ গোল করে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন। শুধু সর্বোচ্চ গোলদাতাই নয়, বাংলাদেশের অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পেছনে অসামান্য অবদান রাখায় শামসুন্নাহারই টুর্নামেন্ট সেরা হয়েছেন।

গোলদাতা, সেরা খেলোয়াড়ের পাশাপাশি সেরা গোলরক্ষকও বাংলাদেশের। রুপনা চাকমা হয়েছেন টুর্নামেন্টের সেরা গোলরক্ষক। চার ম্যাচে বাংলাদেশের জালে মাত্র একবারই বল প্রবেশ করেছে।

টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ গোলদাতা ও টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার হাতে বাংলাদেশের অধিনায়ক শামসুন্নাহার

কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণ করে খেলতে থাকে বাংলাদেশের মেয়েরা। তাদের সামনে তেমন প্রতিরোধ গড়তে পারেনি নেপাল। স্বাগতিকরা প্রথম গোলের দেখা পায় ম্যাচের ৪২ মিনিটে। গোল করে শাহেদা আক্তার রিপা। এরপর নির্ধারিত সময়ের অতিরিক্ত মিনিটে দলের হয়ে দ্বিতীয় গোলটি করেন অধিনায়ক শামসুন্নাহার জুনিয়র। আফিদার বাড়ানো বল নেপালি ডিফেন্ডাররা ঠিকমতো ক্লিয়ার করতে পারেননি। বাংলাদেশের অধিনায়ক সুযোগ সন্ধানী ফরোয়ার্ডের মতো বল পেয়েই জোরালো শটে গোল করেন। ২-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় স্বাগতিক বাংলাদেশ।

বিরতি থেকে ফিরে আরো আক্রমণাত্মক খেলতে থাকে ছোটন শিষ্যরা। তবে দ্বিতীয়ার্ধে নিজেদের গুছিয়ে নেয় নেপাল। এরপরও একের পর এক জোরালো আক্রমণে নেপালকে দূর্বল করে দেয় লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। ৫৬ মিনিটে গোলের সুযোগ পেয়েও ব্যর্থ হন শামসুন্নাহার। ফাকায় বল পেয়ে মারেন গোলপোস্টের ওপর দিয়ে। ম্যচের ৭৩ মিনিটে ডিবক্সের বাইরে থেকে দূরপাল্লার শট নেন রিপা। তবে তা গোলপোস্টের অনেক ওপর দিয়ে চলে যায়। এরপর ম্যাচের ৭৯ মিনিটে আবারো নেপালের গোলরক্ষককে একা পেয়ে গোল করতে পারেননি বাংলাদেশের অধিনায়ক। তবে ম্যাচের ৮৭ মিনিটে তৃতীয় গোলের দেখা পায় বাংলাদেশ। ডিবক্সের বাইরে থেকে নেয়া গোলপোস্ট বরাবর নেয়া শট দৌঁড়ে এসে টাচ করে জালে প্রবেশ করান উন্নতি খাতুন। এই গোলে সহজ জয় নিশ্চিত হয় বাংলাদেশের।

টুর্নামেন্টে সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার গ্রহন করছেন বাংলাদেশের রুপনা চাকমা

ছয় মাসের ব্যবধানে ফের নেপালকে ফাইনালে হারালো বাংলাদেশ। গত বছর সেপ্টেম্বরে কাঠমান্ডুতে নেপালকে হারিয়ে সাফে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশের মেয়েদের জাতীয় দল। সেই স্মৃতি ধরে রেখে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফেও নেপালকে গোল বন্যায় ভাসিয়ে শিরোপা উল্লাস করে শামসুন্নাহার-শাহেদা আক্তাররা। এর মাঝে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপ। সেখানে বাংলাদেশকে পরাজিত করে নেপাল চ্যাম্পিয়ন হয়। এই আসরে গ্রুপপর্বে নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। নেপালের কোচ ইয়াম প্রসাদ গুরুং সেই হারের প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলেন। তবে বাংলাদেশের মেয়েরা জয়ের ধারা অব্যাহত রেখেছে। এর আগে বয়সভিত্তিক সাফের প্রতিটি আসরেই ফাইনালে উঠেছিলো বাংলাদেশ।

সাফে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আনন্দে মাতোয়ারা বাংলাদেশের মেয়েরা

খেলা শেষে প্রধান অতিথি হিসেবে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি। পাশাপাশি বাংলাদেশের মেয়েদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মধ্যে দিয়ে বয়সভিত্তিক নারী ফুটবলে বাংলাদেশ আরো একটি ইতিহাস সৃষ্টি করলো। দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের মধ্যে দিয়ে আমাদের বাঘিনীরা তাদের সক্ষমতা আবারো প্রমাণ করেছে। নিঃসন্দেহে এটি দেশের নারী ফুটবলের ইতিহাসে এক অনন্য মাইলফলক। আমি বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের সকল খেলোয়াড়, কোচ কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাইএ প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ দিকনির্দেশনা ও সার্বিক পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের নারী ফুটবলাররা আজ কোটি বাঙালির স্বপ্ন ছুঁয়েছে। সকল বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে দক্ষিণ এশিয়ার নারী ফুটবলে বাংলাদেশ একের পর এক ইতিহাস রচনা করেছে। আমি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।’

LEAVE A REPLY