লিটন ঝলকে কোয়ালিফায়ারে কুমিল্লা

বিপিএলে রংপুরের বিপক্ষে শুক্রবার ব্যাট হাতে ৩৩ বলে ৪৭ রান করার পথে বাউন্ডারি হাঁকান কুমিল্লার লিটন কুমার দাশ। ছবি: ইন্টারনেট

পর পর তিন ম্যাচে পরাজয় নিয়ে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের নবম আসর শুরু করেছিল ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। চট্টগ্রাম পর্বে নিজেদের প্রথম জয় পাওয়ার পর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি দলটিকে। প্রাথমিক পর্যায়ে নিজেদের শেষ ম্যাচে রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে মাঠে নেমে শুক্রবার ৭০ রানের বড় জয় ছিনিয়ে নিয়েছে লিটন-মুস্তাফিজরা। এ জয়ের মধ্য দিয়ে কোয়ালিফায়ার রাউন্ডে সিলেট স্ট্রাইকার্সের সঙ্গে খেলা নিশ্চিত করেছে তারা। পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ দুই দলের খেলা হবে আগামী রবিবার। একই দিনে এলিমিনেটর ম্যাচে মুখোমুখি হবে সাকিব আল হাসানের ফরচুন বরিশাল ও নুরুল হাসান সোহানের রংপুর রাইডার্স।

টস হেরে প্রথমে ব্যাট হাতে মাঠে নামে কুমিল্লার খেলোয়াড়রা। রংপুরের বোলিং আক্রমণ শুরু করেন দলটির শূল স্ট্রাইক বোলার আজমতউল্লাহ ওমরজাই। শুরু থেকেই রানের গতি সামলে দলকে এগিয়ে নেন লিটন দাস ও মোহাম্মদ রিজওয়ান। প্রথম ওভারেই ওমরজাইয়ের বলে বাউন্ডারি হাকান লিটন। পরের ওভারে বল চার-ছক্কায় উড়িয়ে রানে গতি দেয়া শুরু করেন রিজওয়ান। পঞ্চম ওভারে ফের ওমরজাইয়ের বলে চার ও ছক্কা হাকাতে থাকেন লিটন। তবে সেই ওভারেই ঘটে প্রথম বিপত্তি। তার ডেলিভারি করা বাউন্স ঠিকভাবে খেলতে পারেননি রিজওয়ান, ব্যাটের কোণায় বল লেগে সরাসরি চলে যায় রংপুরের অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহানের হাতে। তবে উইকেট হারিয়েও থেমে থাকেনি কুমিল্লার রানের স্রোত। পাওয়ার প্লের শেষ ওভার পর্যন্ত নিজের মতো করে ব্যাট চালাতে থাকেন লিটন। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে রিপন মন্ডল বল করতে আসলে তার বলেও চার-ছক্কা হাকান তিনি। রিজওয়ান আউট হওয়ার পর নামা ভারতীয় ক্রিকেটার সুনিল নারিন শুরু করেন দুটি বাউন্ডারি হাকিয়ে। তবে রিপনের সোজা বল স্লগ করতে গিয়ে লাইন মিস করে তিনি বোল্ড হয়ে সাজঘরের পথ ধরেন। পাওয়ার প্লে শেষে কুমিল্লার সংগ্রহ ঠেকে ৬৩ রানে। প্রাথমিক পর্যায়ে কুমিল্লা-রংপুরের শেষ ম্যাচ দিয়ে খেলতে নেমেছিলেন আফগান পেসার নাভিন উল হক। তবে দলের জন্য তেমন কোনো সুফল বয়ে আনতে পারেননি তিনি। পাওয়ার প্লে শেষে কিছুটা ধীরগতিতে খেললেও তার বল ছক্কায় উড়িয়ে রানের গতি বদলাতে থাকেন লিটন। তবে চার-ছক্কায় দর্শকদের মাতিয়ে রাখলেও ফিফটি পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেননি তিনি। রাকিবুল হাসানের বলে বড় শট খেলতে গিয়ে তিনি সীমানায় ধরা পড়েন। ৩৩ বলে ৪৭ রান নিয়ে মাঠ ছাড়েন কুমিল্লার এ ওপেনার। চারে নামা অধিনায়ক ইমরুল কায়েস কিছুটা সময় নিয়ে খেলা শুরু করেন। রিপনের বলে পুল করে বিশাল এক ছক্কা মেরে রানে গতি আনার চেষ্টা করলেও তিনি ২০ বলে ১৯ রান করে আউট হন। তার আউটের পর দলের রানের গতি থমকে যায় কিছুক্ষণের জন্য। এরপর দলের হাল ধরেন জাকের আলি ও খুশদিল শাহ। জাকের রানের চাপ সরান রিপনের বলে চার ও ছক্কা মেরে। পরে ছক্কায় উড়ান হাসান মাহমুদকেও। অন্যপ্রান্তে থাকা খুশদিলও স্ট্রাইকে এসে চাপ না নিয়ে খেলতে থাকেন। নাভিনের বলে প্রথমে একটি ছক্কা ও পরের বলে একটি বাউন্ডারি হাকিয়ে তিনি রানে গতি দেন। নাভিনের পরের ওভারেও তিনি একটি করে চার ও ছক্কা মারেন। ইনিংসের এক বল বাকি রেখে হাসান মাহমুদের বলে জাকের বিদায় নেন ২৩ বলে ৩৪ রান করে। তার আউটের মধ্য দিয়ে জাকের-খুশদিল জুটি থামে স্কোরবোর্ডে ৩৯ বলে ৭২ রান যোগ করে। শেষ একটি বল খেলতে নেমে অ্যান্ড্রো রাসেল ফিরে যান শূন্যরানে অপরাজিত থেকে। খুশদিল অপরাজিত ছিলেন ২০ বলে ৪০ রান নিয়ে। শেষ ৬ ওভারে ৬৯ রান তুলে কুমিল্লার সংগ্রহ দাড়ায় ১৭৭ রানে।

জয়ের লক্ষ্যে ১৭৮ রানের তাড়ায় মাঠে নেমে ভালো শুরু করলেও ছন্দ ধরে রাখতে পারেননি রংপুর রাইডার্সের ওপেনাররা। বাউন্ডারি দিয়ে শুরু করেন ওপেনার নাইম শেখ। তবে তৃতীয় ওভারেই তানভির ইসলামকে স্লগ করে সাজঘরে ফেরেন তিনি। রনি তালুকদার পরের ওভার শুরু করেন সুনিল নারিনকে ছক্কায় উড়েয়ে। পরের বলেই বাজেভাবে বোল্ড হয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি। তানভির ইসলামের সহজ একটি বলে বিভ্রান্ত হয়ে লেগ বিফোরে আউট হন ইংলিশ ব্যাটসম্যান কোহলার-ক্যাডমোর। পাওয়ার প্লেতে অধিনায়ক সোহানকেও হারায় রংপুর। শামীম হোসেন দলের হাল ধরার চেষ্টা করলেও রিজওয়ানের অসাধারণ একটি ক্যাচে ধরা দিয়ে ব্যর্থ হন। ধারাবাহিকভাবে উইকেট হারাতে থাকে রংপুর। উইকেট পতনের ধারাকে পাত্তা না দিয়ে ব্যাট চালাচ্ছিলেন রহমানুল্লাহ গুরবাজ। তাকেও ২৯ রানে বিদায় করেন মুস্তাফিজ। শেষ পর্যন্ত ১৬.৫ ওভার খেলে ১০৭ রানে থেমে যায় রংপুরের ইনিংস। বড় জয় দিয়ে প্রাথমিক পর্ব শেষ করে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন ৪ ওভারে ২৬ রান খরচ করে ২ উইকেট তুলা তানভির ইসলাম।ডি- এইচএ

LEAVE A REPLY