রমজান মাস সামনে রেখে মাছ, মাংস, ডিম ও ডালের দাম প্রতিনিয়ত বাড়ছে
মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তের পাতে আমিষের পরিমাণ দিন দিন কমছে। ক্ষেত্রবিশেষে মাছ, মাংস ও ডিমের মতো খাবার অনেকের পাত থেকে উঠেই গেছে। গরু ও খাসির মাংসের দাম আগে থেকেই চড়া। মাছের বাজারেও আগুন। গত কয়েক মাস ধরে ডিমের দামও ধরাছোঁয়ার বাইরে। হাতের নাগালে ছিল শুধু ব্রয়লার মুরগি। এখন তাও উড়ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ডলার সংকট ও বিশ্ববাজারে মূল্যস্ফীতির অজুহাতে দেশের বাজারে চলছে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতা। এই প্রেক্ষাপটে রমজান মাস সামনে রেখে আরেক দফা বাড়ছে সব পণ্যের দাম। এর মধ্যে মাছ, মাংস ও ডিমের দাম বাড়ছে হু হু করে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে বাজার ব্যবস্থাপনায় আরো কঠোর নজরদারির তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ প্রসঙ্গে ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, প্রায় নীরবেই প্রতিদিন নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। তিনি বলেন, বিভিন্ন কারণ ও অজুহাতে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াচ্ছে। এতে ভোক্তারা প্রতিনিয়ত আরো অসহায় হয়ে পড়ছেন। তাই পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে সরকারের এখন থেকেই পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি রোধে সংশ্লিষ্টদের জোরালো ভূমিকা দরকার।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান ভোরের কাগজকে বলেন, ডলারের চাপ তো রয়েছেই। দেশীয় পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। ডিম, মুরগির ক্ষেত্রে ফিডের দাম বেড়েছে কয়েক গুণ। এরপরও কোনো কারসাজি হচ্ছে কিনা- ভোক্তা অধিদপ্তর থেকে কঠোরভাবে তা মনিটরিং করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের উচিত এ বিষয়ে এগিয়ে আসা। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে যেসব পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে, আমরা সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো কমানোর ব্যবস্থা নিচ্ছি। চিনি, তেল, পেঁয়াজের দাম কমানো হয়েছে। তিনি আরো বলেন, চিনির বাড়তি দাম ঠেকাতে আমরা সক্রিয় আছি। এলপিজির দাম বেশি নেয়া হলে আমরা দেখব। অবশ্য গ্রাহকেরা বলছেন, সব সময়ই এলপিজি নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দরে বিক্রি হয়।
ঢাকার কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, স্বল্প আয়ের মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণের অন্যতম মাধ্যম ব্রয়লার মুরগিও এখন ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। বর্তমানে দাম ঠেকেছে ২৩০ থেকে ২৪০ টাকায়। এতে বাধ্য হয়েই নিজেদের চাহিদায় লাগাম টানছে মানুষ। কারওয়ানবাজারের চিকেন তলফা ব্রয়লার হাউজের মুরগি বিক্রেতা সোহাগ বলেন, মানুষ আগের মতো কিনছে না। বেচাবিক্রি কমে গেছে। আজ ২৩০ টাকায় ব্রয়লার বিক্রি করছি।
একই বাজারে মুরগি কিনতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী রিয়াজুল বাসার বলেন, অন্য মাংস সাধ্যের বাইরে চলে গেছে। এখন ব্রয়লারও যদি ২৩০ টাকায় কিনতে হয়, মানুষ যাবে কোথায়? তিনি বলেন, আগে যেখানে ৩ থেকে ৪ দিন মুরগি কিনতাম; এখন সেখানে এক থেকে দুদিন কিনতে হচ্ছে।
ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজার বিশ্লেষণের তথ্য বলছে, এক বছর আগের তুলনায় ব্রয়লার মুরগির দাম প্রায় ৩৯ শতাংশ এবং ডিমের দাম ৩০ শতাংশ বেশি। প্রতি ডজন ডিমের দাম বেড়ে হয়েছে ১৫০ টাকা। গরুর মাংসের কেজিতে দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ১০০ টাকা। বর্তমানে প্যাকেটজাত তরল দুধের লিটার ৯০-৯৫ টাকা। সাড়ে ৩শ গ্রামের একটি পাউরুটি কিনতে হচ্ছে ৬০ টাকায়।
মাছের বাজারেও স্বস্তি নেই। যেসব চাষের মাছের দাম বছরজুড়ে স্থিতিশীল থাকে, সেগুলোর দরও বেড়েছে। যেমন, তেলাপিয়া মাছ এখন ২০০ থেকে ২২০ টাকা দরে বিক্রি হয়। টিসিবি তালিকায় দেখা যায়, গত বছর একই সময়ে যে রুই মাছের কেজি ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা ছিল, সেটা এখন ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়। ডালের মধ্যে বেড়েছে অ্যাংকরের দাম। আমদানি করা অ্যাংকর ডাল মূলত নিম্ন আয়ের মানুষ কেনে। গত বছরও এ ডালের দাম কেজিতে ৫০ টাকা বা এর কম ছিল। এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা দরে। এক সপ্তাহে দাম বেড়েছে ৫ টাকা। অন্য ডালের দামও চড়া। মসুর ডাল মানভেদে ৯৫ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা।এমকে