নির্বাচন কমিশন। ফাইল ছবি
জাতীয় নির্বাচনের বছরে সংসদ নির্বাচন ও স্থানীয় নির্বাচনের জন্য আগামী বাজেটে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
এরই মধ্যে চলতি বছরের শেষে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ও আগামী বছরের শুরুতে উপজেলা পরিষদের ভোটে ব্যয় হবে সবচেয়ে বেশি। এছাড়া স্থানীয় সরকারের কিছু নির্বাচন ও শূন্য আসনের উপনির্বাচনের হিসাব বিবেচনায় নিয়ে তৈরি করা হয়েছে এ বাজেট প্রস্তাব। বরাবরের মতোই বাজেট প্রস্তুতির প্রাক্কালে অর্থ মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠকে ইসির পক্ষ থেকে অর্থ বরাদ্দের সম্ভাব্য খাতওয়ারি পরিমাণ তুলে ধরা হয়েছে।
ইসির হাতে থাকা দেড় লাখ ইভিএম রক্ষণাবেক্ষণে প্রায় ১৩০০ কোটি টাকা ও নির্বাচন পরিচালনা খাতে এর দ্বিগুণ, প্রায় ২৬০০ কোটি টাকা রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে সেখানে। আগামী সংসদ ও উপজেলা নির্বাচনের জন্য ইসি কত টাকা বরাদ্দ চায়, তা সুনির্দিষ্ট করে না বললেও প্রাথমিক হিসাবে একাদশ সংসদের প্রায় দ্বিগুণ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে বলে জানান নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা।
সবশেষ একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালে নির্বাচন কমিশন ভোটের জন্য প্রায় ১২০০ কোটি টাকা ও প্রকল্পের জন্য ৩০০ কোটি টাকা মিলিয়ে দেড় হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ প্রস্তাব রেখেছিল। এর মধ্যে সংসদ নির্বাচনের জন্য ৭০০ কোটি টাকা, উপজেলার জন্য প্রায় ৬০০ কোটি টাকার প্রস্তাব ছিল।
তবে এ প্রস্তাবে সুনির্দিষ্টভাবে খাতভিত্তিক বরাদ্দ চূড়ান্ত হলে ইসির প্রস্তাবিত বাজেটের আকার সম্ভাব্য ওই প্রস্তাবের চেয়ে কমে আসবে বলে মনে করছেন ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে আগামী অর্থবছরের জন্য ইভিএমের রক্ষণাবেক্ষণসহ আনুষঙ্গিক প্রয়োজনে ১২৬০ কোটি টাকাসহ সংসদ ও স্থানীয় নির্বাচনে জন্য প্রায় ৩৯৫৪ কোটি টাকার বরাদ্দ প্রস্তাব দিয়েছি। এখনও বাজেট প্রস্তাব চূড়ান্ত হয়নি। সুনির্দিষ্ট করে খাতভিত্তিক বরাদ্দ দেওয়ার জন্য আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে বলা হয়েছে।’
চলতি মাসেই প্রস্তাবিত বাজেটের বিষয়টি চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন নির্বাচন কমিশনের এই কর্মকর্তা। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন করার পরিকল্পনা ধরে এগোচ্ছে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন।
সর্বোচ্চ দেড় শ’ আসনে ইভিএমে ভোট করার সিদ্ধান্ত থাকলেও নতুন করে দুই লাখ ইভিএম কেনার প্রায় সাড়ে আট হাজার কোটি টাকারও প্রকল্পে সরকারের সায় না মেলায় এখন বেশিরভাগ আসনে প্রচলিত ব্যালটে ভোটে যেতে হচ্ছে কমিশনকে। হাতে থাকা ইভিএমগুলো দিয়ে ৫০-৭০টি আসনে ইভিএমে ভোট করার সামর্থ্য রয়েছে ইসির।
এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচন পরিচালনায় ব্যালট পেপারের পাশাপাশি ইভিএমে ভোটের ব্যয় থাকায় প্রস্তাবিত বাজেটের আকারও তুলনামূলক বাড়ছে।
নতুন ভোটারদের নিয়ে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় ভোটার দাঁড়াবে প্রায় ১১ কোটি ৯০ লাখের মতো। ইসি কর্মকর্তারা জানান, এত ভোটারের নির্বাচনে প্রায় ৪৫ হাজার ভোটকেন্দ্র, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা মিলিয়ে প্রায় ১০-১২ লাখের মত লোক বিভিন্ন দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন।
ব্যালট পেপার, ব্যালট বক্স, নির্বাচনী সামগ্রী, প্রশিক্ষণ, পরিবহন, জ্বালানিসহ নির্বাচন পরিচালনায় অন্তত ৬০-৭০টি খাত থাকবে। ইভিএমের জন্য আলাদা লোকবল ও ব্যবস্থাপনার ব্যয় থাকবে।
এছাড়া, প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের খরচ ও পারিশ্রমিক বেড়ে যাওয়ায় প্রতিবারই সে অনুযায়ী নির্বাচনী ব্যয় বাড়ছে। ভোটগ্রহণে যতজন নির্বাচনী কর্মকর্তা লাগে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যও লাগে বেশ। পুরো নির্বাচন পরিচালনার ব্যয়ের একটি বড় অংশ চলে যায় আইন শৃঙ্খলা খাতে।
ইসির অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘এখন বরাদ্দের কোনো কিছু চূড়ান্ত হয়নি। খাতওয়ারি প্রস্তাব আরও পর্যালোচনা করলে প্রস্তাবিত বাজেট বরাদ্দ আরো কমে আসবে। আগামী সপ্তাহে বিষয়টি চূড়ান্ত করা সম্ভব হতে পারে। তখনই ইসির প্রস্তাবিত বরাদ্দের পরিমাণটা জানানো যাবে।’ডি- এইচএ